বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা আঞ্চলিক রাজনীতি

চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর-পাহাড়তলী-খুলশী) আসন

মহিউদ্দিন বাচ্চুকে ঠেকানোর মিশনে নগর আওয়ামী লীগ নেতা!



রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :২৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ ৫:৪৯ : অপরাহ্ণ

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর-পাহাড়তলী-খুলশী) আসনে নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুকে ঠেকানোর মিশনে নেমেছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির একজন প্রভাবশালী সদস্য।

দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির ওই নেতার সঙ্গে মহিউদ্দিন বাচ্চুর আগে সুসম্পর্ক ছিল। মহিউদ্দিন বাচ্চু উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর তার সঙ্গে ওই নেতার তলে তলে দূরত্ব তৈরি হয়। রাজনৈতিক অঙ্গনে মহিউদ্দিন বাচ্চুকে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বি মনে করছেন। তাই তিনি বাচ্চুকে ঠেকাতে সাবেক সিটি মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলমকে প্ররোচিত করে স্বতন্ত্র প্রাথী হিসেবে ভোটের মাঠে নামিয়েছেন। ওই নেতার পরিবারের সঙ্গে মনজুর আলমের দীর্ঘ দিনের সুসম্পর্ক রয়েছে।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, মহিউদ্দিন বাচ্চুর মনোনয়নপত্র বাতিল করতে নির্বাচন কমিশনে মনজুর আলমের আপিল করার পেছনে ওই আওয়ামী লীগ নেতার ইন্ধন ছিল। কিছুদিন আগে মনজুর আলম সনাতন সম্প্রদায়ের একটি সংগঠনের একজন নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পেছনেও ভূমিকা রাখেন ওই নেতা।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ভোটের মাঠে নিজের একটা প্রভাব তৈরি করতে মনজুর আলম সনাতন সম্প্রদায়ের ওই নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

এসব বিষয়ে জানতে মনজুর আলমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্য, গত ৬ ডিসেম্বর রাজনীতি সংবাদে চট্টগ্রাম-১০ আসন নিয়ে ‘ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন মহিউদ্দিন বাচ্চু, মনজুর আলমের পেছনে কে’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিলো, মনজুর আলমের পেছনে দলের কোনো নেতার ইন্ধন থাকতে পারে। শেষ পর্যন্ত তাই হলো।

আরও পড়ুন: ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন মহিউদ্দিন বাচ্চু, মনজুর আলমের পেছনে কে

কেন মনজুর আলমকে মহিউদ্দিন বাচ্চুর সামনে দাঁড় করানো হলো?

দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, নগর আওয়ামী লীগের ওই নেতা মনে করছেন, মহিউদ্দিন বাচ্চু এবার এমপি হলে তার অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। সামনে নগর আওয়ামী লীগের কমিটি হলে মহিউদ্দিন বাচ্চু সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হবেন। ওই আওয়ামী লীগ নেতারও একই পদে প্রার্থী হওয়ার পরিকল্পনা আছে। এখন মহিউদ্দিন বাচ্চু যদি এমপি নির্বাচিত হন, তাহলে ওই পদের জন্য তিনি এগিয়ে থাকবেন। এ ছাড়া মহিউদ্দিন বাচ্চু এবার এমপি হলে সামনে মন্ত্রী হওয়ার জন্যও চেষ্টা করতে পারেন। এতে ওই আওয়ামী লীগ নেতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যাবেন। নগরীতে তার কর্মী-সমর্থকদের যে বলয় আছে সেটা ভেঙ্গে যাবে। তখন নগর আওয়ামী লীগে মহিউদ্দিন বাচ্চুর একটা বলয় তৈরি হবে। এসব বিষয় মাথায় নিয়ে মহিউদ্দিন বাচ্চুকে ঠেকাতে ওই আওয়ামী লীগ নেতা উঠেপড়ে লেগেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহিউদ্দিন বাচ্চু রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘যারা ষড়যন্ত্র করছেন তাদের নাম আমি জানলেও বলতে পারছি না। কারণ আইনগতভাবে আমি ষড়যন্ত্র প্রমাণ করতে পারবো না।’

জানা গেছে, মহিউদ্দিন বাচ্চুর বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন ২৫ নম্বর রামপুরা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুস সবুর লিটন ও ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী। তারা তাদের কর্মী-সমর্থকদেরও নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করতে চাপ প্রয়োগ করছেন। এই দুই কাউন্সিলর নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির ওই নেতার অনুসারী। কাউন্সিলর লিটন গতকাল মঙ্গলবার রামপুরা ওয়ার্ডে গণসংযোগ করতে আসা স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুর আলমকে স্বাগত জানান। তিনি চট্টগ্রাম-৯ আসনে গিয়ে নৌকার প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের পক্ষেও প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর আব্দুস সবুর লিটন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘দলের নেতাকর্মীরা কেবল নৌকার প্রার্থী নয়, স্বতন্ত্র প্রার্থীকেও সমর্থন করতে পারবেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক দলের নেতাকর্মীদের এ বার্তা দিয়েছেন। তাই আমি মনজুর আলমকে সমর্থন দিয়েছি।’

কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমার এলাকায় তিনি (মহিউদ্দিন বাচ্চু) যে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করেছেন, তাতে আমার কোনো পরামর্শ নেওয়া হয়নি। উপনির্বাচনেও তিনি আমার পরামর্শ ছাড়া কমিটি করেছেন। তাহলে আমি কেন তার পক্ষে কাজ করবো? ঘরে চুপচাপ বসে আছি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর আওয়ামী লীগের একজন নেতা রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির ওই নেতা ওয়াসা মোড়ে মহিউদ্দিন বাচ্চুর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। তিনি সেখানে বলেছিলেন, দুই কাউন্সিলর তার কথা শুনছেন না। অথচ এরপরে তিনি একজন কাউন্সিলরের বাসায় গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করেছেন। এই পলিটিক্স কি আমরা বুঝি না?’

এ অবস্থায় মহিউদ্দিন বাচ্চু কি নৌকা নিয়ে তীরে ভিড়তে পারবেন নাকি সমুদ্রে ডুবে যাবেন?

এ প্রশ্নের জবাবে মহিউদ্দিন বাচ্চু রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীরা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। কেবল সময়ের ব্যাপার। অপেক্ষা করুন, দেখেন কী পরিণতি হয় তাদের। ইতিহাস কাউকে ছাড়ে না।’

মহিউদ্দিন বাচ্চুর সমর্থক এক আওয়ামী লীগ নেতা নাম প্রকাশ না করে রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘ষড়যন্ত্র করে মহিউদ্দিন বাচ্চুকে ঠেকানো যাবে না। নির্বাচনের পর নগর আওয়ামী লীগের ওই নেতাকে ষড়যন্ত্রের জবাব দেওয়া হবে।’

মনজুর আলমকে ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা’ হিসেবে পরিচিত করার কৌশল

মনজুর আলমকে নিয়ে ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম-১০ আসনের একজন কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বার্তা দিচ্ছেন-‘মনজুর আলমকে সহযোগিতা করতে দলের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে মনজুর আলমকে বিজয়ী করে তাকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে পরিচয় দেওয়া হবে।’

ওই কাউন্সিলরের কাছ থেকে এমন বার্তা পাওয়া নগর আওয়ামী লীগের এক নেতা রাজনীতি সংবাদকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‌‘আমার জানা মতে, দলের উচ্চ পর্যায় থেকে এরকম কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ভোটের মাঠে আমাকে কাবু করার জন্য কিছু লোক এমন প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।’

২০১২ সালের ৪ জুলাই মনজুর আলমকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদে স্থান দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের দিন ভোট বর্জনের সঙ্গে রাজনীতি থেকেও সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি। এরপর থেকে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। বরং তিনি এখন পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘২০১৫ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন মনজুর আলম রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর থেকে তার সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। তাকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা করা হয়েছিল ২০১২ সালের কমিটিতে। এরপর ২০১৬ সালে বিএনপির নতুন কমিটির উপদেষ্টার তালিকায় তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন মনজুর আলমকে যারা বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে প্রচার করার চেষ্টা করছেন, সেটা তাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব।’

চট্টগ্রাম-১০ আসনের বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতা ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুলকবহর, লালখান বাজার, খুলশী, পাহাড়তলী, সরাইপাড়া, উত্তর হালিশহর ও উত্তর আগ্রাবাদে মহিউদ্দিন বাচ্চুর সাংগঠনিক অবস্থান খুবই সুসংহত। এসব এলাকায় তিনি একচেটিয়া ভোট পাবেন। এসব এলাকায় প্রচারণায়ও তিনি এগিয়ে আছেন। আর দক্ষিণ কাট্টলী, উত্তর আগ্রাবাদ ও রামপুরা এলাকায় মনজুর আলম সুবিধা করতে পারেন। এসব এলাকায় তার সঙ্গে মহিউদ্দিন বাচ্চুর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম-১০ আসনের এক আওয়ামী লীগ নেতা রাজনীতি সংবাদকে বলেন, মনজুর আলমের ব্যক্তিগত ইমেজ থাকলেও তার সক্রিয় কোনো কর্মী নেই। যে কারণে তিনি মহিউদ্দিন বাচ্চুর মতো একজন হেভিওয়েট প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই করতে পারবেন না। এটা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নয়। তিনি প্রচুর অর্থ খরচ করে প্রচারণায় কিছু লোক জমায়েত করছেন। যেখানে আওয়ামী লীগেরও অনেক নেতাকর্মী আছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শেষ পর্যন্ত কেউ মনজুর আলমের পাশে থাকবেন না। রাজনীতির চাল অনেক কঠিন।

আরও পড়ুন:

সুমনকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছেন না লতিফ

এবার লতিফের বিরুদ্ধে মাঠে নামলেন হাসিনা মহিউদ্দিন

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর