রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ ৯:৫৩ : পূর্বাহ্ণ
খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ বড়দিন’ আজ সোমবার। আজকের এই দিনে খ্রিষ্ট ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা এ দিনটিকে ‘শুভ বড়দিন’ হিসেবে উদযাপন করে থাকেন।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খ্রিস্টান ধর্মানুসারীরাও এদিন যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্যদিয়ে ‘শুভ বড়দিন’ উদযাপন করছেন।
আজ প্রভাতে বাংলাদেশের প্রতিটি গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা (খ্রিষ্টযোগ) হবে। সেখানে থাকবে লাল-নীল বর্ণালী বাতির আলোর ঝলকানি। গাছে ও দেওয়ালে ঝুলবে মনীষীদের বাণী।
বাংলাদেশের খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা প্রতীকী গোশালা তৈরি করেছেন। বেথলেহেমের গরিব কাঠুরের গোয়ালঘরেই যিশু খ্রিষ্টের জন্ম। সে কথা স্মরণ রেখে তার আদলে ধর্মীয় আবহ সৃষ্টি করতেই এটা করা হচ্ছে। প্রধান আকর্ষণ হিসেবে সান্তাক্লজ আসবেন নানা উপহার ও চমক নিয়ে। দেশ-বিদেশের নানা জায়গায় সাজান হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি। সান্তা তার ঝুলিতে করে কি নিয়ে আসবে তার অপেক্ষায় থাকে শিশুরা।
প্রত্যেক খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে থাকবে কেক, পিঠা, কমলালেবু, পোলাও-বিরিয়ানিসহ বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু ও উন্নতমানের খাবারদাবারের আয়োজন। বেড়ানো, ধর্মীয় গান, কীর্তন, অতিথি আপ্যায়ন আর পরমানন্দে কাটাবেন তারা।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীসহ সকলের শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে পৃথক বাণী দিয়েছেন। এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জাতীয় পার্টি-জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সম্প্রদায় পৃথক বাণীতে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ঈশ্বরের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য একজন নারীর প্রয়োজন ছিল। সেই নারীই কুমারী মেরি—মুসলমানদের কাছে যিনি পরিচিত হজরত মরিয়ম (আ.) হিসেবে।
খ্রিষ্ট বিশ্বাস বলে, ‘ঈশ্বরের অনুগ্রহে ও অলৌকিক ক্ষমতায়’ মেরি কুমারী হওয়া সত্ত্বেও গর্ভবতী হন। ঈশ্বরের দূত এর কথামতো শিশুটির নাম রাখা হয় যিশাস, যা বাংলায় ‘যিশু’।
আজ থেকে প্রায় ২ হাজার ২২ বছর আগে জেরুজালেমের বেথলেহেম শহরের এক গোয়ালঘরে জন্ম হয়েছিল যিশুর। শিশুটি কিন্তু মোটেও সাধারণ শিশু ছিল না। ঈশ্বর যাকে পাঠানোর কথা বলেছিলেন মানবজাতির মুক্তির জন্য। যিশু নামের সেই শিশুটি বড় হয়ে পাপের শৃঙ্খলে আবদ্ধ মানুষকে মুক্তির বাণী শোনালেন।
যিশু বললেন,‘ঘৃণা নয়, ভালোবাসো। ভালোবাসো সবাইকে, ভালোবাসো তোমার প্রতিবেশীকে, এমনকি তোমার শত্রুকেও। মানুষকে ক্ষমা করো, তাহলে তুমিও ক্ষমা পাবে। কেউ তোমার এক গালে চড় মারলে তার দিকে অপর গালটিও পেতে দাও।’
যিশু বললেন, ‘পাপীকে নয়, ঘৃণা করো পাপকে। গরিব-দুঃখীদের সাধ্যমতো সাহায্য করো, ঈশ্বরকে ভয় করো।’ যিশুর কথা শুনে অনেকে তাদের মন ফেরাল। রাষ্ট্রীয়, ধর্মীয় এবং সমাজনেতারা এসব সহ্য করতে পারলেন না। যিশুখ্রিষ্টকে তারা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে শুরু করলেন। তারা যিশুকে বন্দী করে ক্রুশে বিদ্ধ করে হত্যা করলেন।
যিশুর জন্মের অনেক বছর পর থেকে খ্রিস্টানরা এ দিনটিকে আনন্দ ও মুক্তির দিন হিসেবে উদযাপন করতে শুরু করেন। ৪৪০ সালে পোপ এ দিবসকে স্বীকৃতি দেন। তবে উৎসবটি জনপ্রিয়তা পায় মধ্য যুগে। সে সময় এর নাম হয় ‘ক্রিসমাস ডে’।