রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ৩:১৯ : অপরাহ্ণ
বিগত আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে এক তৃতীয়াংশ ও ইউরোপের বাজারে কমেছে ১৪.৫০ শতাংশ। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
আজ মঙ্গলবার পোশাক শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ উদ্বেগের কথা জানান বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান।
রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
রপ্তানি ধরে রাখতে বিজিএমইএ নতুন বাজারগুলোতে রপ্তানি বাড়াতে কাজ করছে জানিয়ে ফারুক হাসান বলেন, ‘জ্বালানির দাম বৃদ্ধি ও দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ায় তৈরি পোশাক খাতে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পও চাপে রয়েছে। এরমধ্যে চলতি বছর নূন্যতম নতুন মজুরি কার্যকর হলে পোশাক শিল্প আরও চাপের মুখে পড়বে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘যে কোনো স্যাংশনস দিলেই তা শঙ্কিত হওয়ার। তবে ব্যবসায়ীদের কারও ভিসা বাতিল হলেও তিনি ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন। আমরা কোভিড সময়ে কোনো দেশে যেতে পারিনি। এরপরও আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়নি। সেক্ষেত্রে বলা যায় ভিসা বাতিল হলেও বিকল্পভাবে তিনি তার ব্যবসা চালিয়ে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশিদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা শুরু
আকু পেমেন্টে কিছু ব্যাংকের ওপরে স্যাংশনস বিষয়ে ফারুক হাসান বলেন, ‘এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকু হচ্ছে একটি আন্তঃআঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিকারী সংস্থা। এর পেমেন্ট কয়েকটি ব্যাংকের ওপর স্যাংশনস হয়েছে তবে সেটা অন্যভাবে পেমেন্ট করা যাবে। সেভাবেই সরকার কাজ করবে। তবে যেকোনো স্যাংশনসই শঙ্কিত হওয়ার, তবুও আশাবাদী ব্যবসায়ী তার ব্যবসায় প্রভাব পড়বে না।’
চলতি মাসের শুরুতেই দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির আড়ালে ঢাকা ও গাজীপুরের ১০টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তিন কোটি ৫৩ লাখ ৬৬ হাজার ৯১৮ মার্কিন ডলার পাচারের অভিযোগ ওঠে। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩০০ কোটি টাকা। এ নিয়ে দেশের গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রচার হয়। যেখানে প্রাথমিক সত্যতা পায় কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
১০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে-প্রজ্ঞা ফ্যাশন লিমিটেড, পিক্সি নিট ওয়্যারস, হংকং ফ্যাশনস লিমিটেড, ফ্যাশন ট্রেড, এম ডি এস ফ্যাশন, থ্রি স্ট্রার ট্রেডিং, ফরচুন ফ্যাশন, অনুপম ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেড, স্টাইলজ বিডি লিমিটেড ও ইডেন স্টাইল টেক্স।
এ ঘটনা প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘এসব কারখানার মাধ্যমে কোনো পাচার হয়নি। আমরা তদন্তের দাবি জানাই এবং প্রমাণ না হলে অপপ্রচারকারীদের সংবাদ সম্মেলন করেই ক্ষমা চাইতে হবে।’
ফারুক হাসান বলেন, ‘যে ১০টি কারখানার বিষয়ে অভিযোগ এসেছে, তার মধ্যে চারটি বিজিএমইএর এবং দুইটি বিকেএমইএর সদস্য প্রতিষ্ঠান। অবশিষ্ট চারটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিজিএমই বা বিকেএমইএর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’
কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘১০টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পাচারের অভিযোগ নিয়ে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর গণমাধ্যমে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। এ ধরনের প্রেস বিজ্ঞপ্তি কার স্বার্থে করা হয়েছে-এটা আমাদের কাছে একটি বড় প্রশ্ন। এভাবে মিডিয়ার মাধ্যমে জনসম্মুখে তুলে ধরে জাতির কাছে পোশাক শিল্পকে ছোট করাটা আমরা একটি অপচেষ্টা বলে মনে করি। আমরা এই ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই এবং প্রত্যাখ্যান করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম মান্নান কচি, সহ-সভাপতি শহিদুল্লা আজিম, সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শিদী, সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন প্রমুখ।