রাজনীতি সংবাদ প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ প্রকাশের সময় :১৯ আগস্ট, ২০২৩ ৯:৩৭ : অপরাহ্ণ
কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্স যেন টাকার খনি! মসজিদের ৮টি দানবাক্স থেকে এবার মিলেছে পাঁচ কোটি ৭৮ লাখ নয় হাজার ৩২৫ টাকা।
ঐতিহাসিক এই মসজিদের দানবাক্সে একসঙ্গে এতো টাকা পাওয়াটা নতুন রেকর্ড। এছাড়া একটি ডায়মন্ডের নাকফুলসহ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কারও পাওয়া গেছে।
আজ শনিবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে মসজিদের আটটি দানবাক্স খোলার পর রাত ৯টার দিকে গণনা শেষে এই হিসাব পাওয়া যায়।
প্রায় সাড়ে ১৩ ঘণ্টায় ২০০ জন লোক এ টাকা গণনার কাজ করেন।
এর আগে দানবাক্সগুলো থেকে টাকা বের করে প্রথমে বস্তায় ভরা হয়। এবার ২৩ বস্তা টাকা হয়। এরপর টাকাগুলো মেঝেতে ঢেলে গণনা করা হয়।
টাকা গণনায় মসজিদ মাদ্রাসার ছাত্র, রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরা সদস্যরা অংশ নেন।
ঐতিহাসিক এ মসজিদটিতে আটটি লোহার দানবাক্স রয়েছে। প্রতি চার মাস পর পর সিন্দুকগুলো খোলা হয়।
তবে এবার ৩ মাস ১৩ দিন পর ৮টি দানবাক্স খোলা হয়েছে।
এর আগে সর্বশেষ গত ৬ মে এই মসজিদের দানসিন্দুক খোলা হয়ছিল। তখন অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৬৮৯ টাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গিয়েছিল। তখন দানসিন্দুক খোলার পর ১৯ বস্তা টাকা হয়েছিল।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, এবার তিন মাস ১৩ দিন পর মসজিদের আটটি দানবাক্স খোলা হয়। এতে রেকর্ড ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫ টাকা পাওয়া গেছে।
কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছে বহু বছর আগে।
জনশ্রুতি রয়েছে, এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বসবাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝপথে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে। মুসলিম-হিন্দু নির্বিশেষে সব ধর্মের লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়। ওই পাগল সাধকের মৃত্যুর পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী।
কিন্তু ওই সাধকের মৃত্যুর পর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে সেখানে দেশের দূর-দূরান্তের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। মানত কিংবা দান খয়রাত করলে মনের বাসনা পূরণ হয়-এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সের হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ মানত নিয়ে আসেন এই মসজিদে। এ ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরেরও অধিক সময়ের বলে জানা যায়।
পাগলা মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান জানান, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে দান করছে এই মসজিদে। যারা দান করতে আসেন তারা বলে থাকেন, এখানে দান করার পরে নাকি তাদের আশা পূরণ হয়েছে। এই বিশ্বাস থেকেই দূর-দূরান্তের মানুষও এখানে দান করতে ছুটে আসেন। মজার বিষয় হচ্ছে, দান সিন্দুক খুললে চিঠিপত্রও পাওয়া যায়। সেসব চিঠিতে দানকারীরা নিজেদের মনের বাসনার কথা লিখে দেন।
আরও পড়ুন: পাগলা মসজিদের কে সেই ‘পাগলা সাহেব’