রবিবার, ৫ মে, ২০২৪ | ২২ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৫ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা আঞ্চলিক রাজনীতি

১৯ জুলাই থেকে আমাদের বিজয়ের যাত্রা শুরু, চট্টগ্রামে মির্জা ফখরুল


রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :১৬ জুলাই, ২০২৩ ৮:০৯ : অপরাহ্ণ
আজ বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীতে শ্রমিক-জনতার মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
Rajnitisangbad Facebook Page

আগামী ১৯ জুলাই বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিকে ‘বিজয়ের যাত্রা’ বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ রোববার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীতে শ্রমিক-জনতার মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সরকার পতনের এক দফা দাবিতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দল এই মহাসমাবেশের আয়োজন করে।

কাজীর দেউড়ি নূর আহমদ সড়কে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী অংশ নেন।

সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী ১৯ জুলাই আরও একটা কর্মসূচি দিয়েছেন।’

এ সময় বিএনপি মহাসচিব উপস্থিত নেতা-কর্মীদের কাছে জানতে চান ‘সেই কর্মসূচি কী?’ জবাবে নেতা-কর্মীরা বলে উঠেন, ‘পদযাত্রা।’

তখন মির্জা ফখরুল বলে উঠেন, ‘না, এটা হবে আমাদের বিজয়ের যাত্রা।’

সরকারকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণের দাবি মেনে নিয়ে পদত্যাগ করুন। নমরুদ পারেনি, ফেরাউন পারেনি, হিটলার পারেনি, মোসোলিনি পারেনি, এরশাদও পারেনি। তাই বলছি, মানে মানে বিদায় হোন। পদত্যাগ করেন, সংসদ বিলুপ্ত করেন এবং নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। জনগণের হাতে জনগণের ক্ষমতা ছেড়ে দিন।’

এ সময় বিএনপি মহাসচিব উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘দফা এক দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ।’’

এ সময় তিনি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে প্রশ্ন রাখেন, ‘যদি দাবি মেনে না নেয় তখন কী হবে?’ সমাবেশস্থল থেকে নেতা-কর্মীরা জবাব দেন, ‘ফয়সালা হবে রাজপথে।’

শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আওয়ামী লীগের এক দফা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল হাসতে হাসতে বলেন, ‘আহারে, তাদের কী আবদার, ভূতের মুখে রামনাম!’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ হচ্ছে সেই দল, যারা হলো বকধার্মিক। নদীর মধ্যে বক মাথা নিচু করে একপায়ে দাঁড়িয়ে চুপ করে বসে থাকে। মনে হয়, তার মতো ধার্মিক কিংবা ভালো পাখি আর কেউ নেই। কিন্তু তার সামনে দিয়ে মাছ যাওয়া মাত্র চট করে গিলে খেয়ে ফেলে। আওয়ামী লীগ হলো বকধার্মিক, চুপ করে বসে আছে। আবার নতুন ফাঁদ পাতছে। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য চুপ করে বসে আছে, মাছ ফেলে চট করে গিলে খেয়ে ফেলবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার এখন প্রশাসনকে সাজাচ্ছে। মন্ত্রীদের পিএস-এপিএসদের ডিসি বানানো হচ্ছে। কিন্তু আমরা তো এবার বেলতলায় যাবো না।’

নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার খুব সুন্দর করে মিষ্টি ভাষায় কথা বলতে পারেন। তিনি কথায় কথায় বলে সুন্দর নির্বাচন করবো। এমনভাবে কথা বলেন, যেন সবকিছু করতে পারবেন। কিন্তু তিনি কিছুই করতে পারবেন না। তার প্রমাণ সেদিনই হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশন চাইলে যে কোনো আসনের নির্বাচন বাতিল করে দিতে পারবে। সেটা ওরা (সরকার) আইন করে বন্ধ করে দিয়েছে। এখন যে কেন্দ্রে গোলযোগ হবে, সে কেন্দ্রের ভোট বাতিল করতে পারবে ইসি। নির্বাচন কমিশন এখন ঠুঁঠো জগন্নাথ। যার কোনো ক্ষমতা নেই।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১২ জুলাই সরকার মার্কিন মন্ত্রীদের দেখিয়েছে, আমরা বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে বাধা দিই না। কিন্তু মার্কিন মন্ত্রীরা চলে যাওয়ার পর শনিবার কুমিল্লার লাকসামে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগ হামলা চালিয়েছে। এক নেতার দুই হাতের কব্জি কেটে দিয়েছে তারা। তারা গণতন্ত্রের মুখোশ পরে দেশে একদলীয় শাসন কায়েম করতে চায়।’

বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে ছয় বছর ধরে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। তাঁর কী অপরাধ? তাঁকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির তিনজন সংসদ সদস্যসহ ৬০০ নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে। ৪০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে কি বিএনপির সভা-সমাবেশ বন্ধ করতে পেরেছে? তাতে কি দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষকে দমাতে পেরেছে?’
এ সময় মির্জা ফখরুল সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ।’

প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দুই মার্কিন মন্ত্রী এসে গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, আমরা এদেশে অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। তারা যখন এ কথা বলেছেন, তখন প্রধানমন্ত্রীর আত্মহত্যা করা উচিত ছিল। কই, বিদেশিরা তো সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পাকিস্তানে, ভারতে, শ্রীলঙ্কায় যায়নি। বাংলাদেশে তাদেরকে কেন আসতে হলো? তারা সরকারকে কঠিন বার্তা দিয়ে গেছেন। কিন্তু সরকারী দলের নেতারা বলছেন, বিদেশিরা তো তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলেনি। তারা তাদের কর্মীদের মনোবল ঠিক রাখতে এমন মিথ্যাচার করছেন।’

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘দেশের মানুষ এখন চিন্তা করছে, এক দফা এক দাবি ছাড়া সমাধান হবে না। এক দফার আন্দোলনে সরকারের পতন অনিবার্য।’

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান প্রমুখ।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর