শনিবার, ৪ মে, ২০২৪ | ২১ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৪ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা খেলা

পিএইচপি ফ্যামিলির তৃতীয় প্রজন্মের উদ্যোগ

চট্টগ্রামে গড়ে উঠছে দৃষ্টিনন্দন অক্সিজেন স্পোর্টস কমপ্লেক্স


রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :২৫ জুন, ২০২৩ ১২:১৫ : অপরাহ্ণ
অক্সিজেন স্পোর্টস কমপ্লেক্সের ত্রিমাত্রিক ছবি।
Rajnitisangbad Facebook Page

সবুজে ঢাকা চিরচেনা চট্টগ্রাম উঁচু উঁচু দালানের ভিড়ে এখন কংক্রিটময়। হারিয়ে যাচ্ছে উন্মুক্ত পরিসর, হারিয়ে যাচ্ছে খেলার মাঠ। কিশোর-তরুণরা মগ্ন মুঠোফোনে। এতে বাড়ছে রোগ-বালাই, কমছে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ। সবমিলিয়ে প্রতিকূল প্রতিবেশ।

এমন প্রতিকূলতায় নাগরিক জীবনে স্বস্তি দিতে চট্টগ্রামে তৈরি হচ্ছে ‘অক্সিজেন স্পোর্টস কমপ্লেক্স’ নামের দৃষ্টিনন্দন একটি খেলার মাঠ।

চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক সংলগ্ন রুবি গেট এলাকায় এক একর জায়গা জুড়ে গড়ে উঠছে নান্দনিক এই স্পোর্টস কমপ্লেক্স।

এই স্পোর্টস কমপ্লেক্সের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো-এখানে থাকবে টার্ফ কোর্ট বা কৃত্রিম ঘাসের মাঠ। আয়তনের দিক থেকে এটি চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় টার্ফ কোর্ট। এই টার্ফ কোর্টটি বিদেশ থেকে আমদানিকৃত।

বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম মাঠের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। হালে বাংলাদেশেও এর ঢেউ এসে লেগেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি টার্ফ কোর্ট ইতোমধ্যে চালু হয়েছে।

এই স্পোর্টস কমপ্লেক্সের আউটডোরে থাকছে ফুটবল ও ক্রিকেট মাঠ, ইনডোরে ব্যাডমিন্টন ও বাস্কেটবল কোর্ট এবং একটি সুইমিংপুল।

নগরীতে যখন খোলামেলা জায়গা ও খেলার মাঠের অভাব, তখন এরকম কৃত্রিম মাঠ যেন এক টুকরো মুক্তির সুবাতাস!

এই আধুনিক স্পোর্টস কমপ্লেক্স গড়ে তুলছেন দেশের খ্যাতনামা শিল্পগ্রুপ পিএইচপি ফ্যামিলির তৃতীয় প্রজন্ম ভিক্টর মিজান মহসিন ও নোভেদ মিজান ইকবাল।

চট্টগ্রামে গড়ে উঠছে দৃষ্টিনন্দন অক্সিজেন স্পোর্টস কমপ্লেক্স
ভিক্টর মিজান মহসিন ও নোভেদ মিজান ইকবাল।

তারা দুজন সমাজসেবায় রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য শিল্পপতি পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের পৌত্র (নাতি)।

সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে তারা এই স্পোর্টস কমপ্লেক্স গড়ে তুলছেন।

ব্যতিক্রমধর্মী খেলার মাঠ গড়ার এমন উদ্যোগ নিয়ে কথা হলে ভিক্টর মিজান মহসিন বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, খেলাধুলা আনন্দ এবং অনুপ্রেরণার উৎস। তাই আমরা অক্সিজেন স্পোর্টস কমপ্লেক্স করার মাধ্যমে খেলাধুলার আরও সুযোগ সৃষ্টি করতে চাই। কেননা চট্টগ্রাম নগরীতে যে পরিমাণ মানুষ বাস করে সে পরিমাণে খেলার মাঠের অভাব রয়েছে। শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য কায়িক শ্রমের কোন বিকল্প নেই। একটু ঘাম ঝরানো ক্রীড়াচর্চাই কেবল পারে এই সমস্যার সমাধান দিতে। কিশোর-তরুণসহ সব বয়সী মানুষের কথা ভেবেই গড়ে তোলা হচ্ছে এই অক্সিজেন স্পোর্টস কমপ্লেক্স।’

চট্টগ্রামে গড়ে উঠছে দৃষ্টিনন্দন অক্সিজেন স্পোর্টস কমপ্লেক্স
ভিক্টর মিজান মহসিন

অক্সিজেন স্পোর্টস কমপ্লেক্সে খেলোয়াড়দের জন্য বিশ্বমানের সব সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা জানিয়ে পিএইচপি ফ্যামিলির এই তৃতীয় প্রজন্ম বলেন, ‘এই মাঠে থাকবে টপ অফ দ্যা লাইন সরঞ্জাম, পরিষ্কার খোলা জায়গা, ক্যাফে, স্পোর্টস সফট ম্যাট। খেলোয়াড়রা খেলার সময় পড়ে গিয়ে যাতে আঘাত না পান সেজন্য গ্রাউন্ডে ব্যবহার করা হচ্ছে ৫০ মিলিমিটারের উন্নতমানের আর্টিফিশিয়াল গ্রাস (ঘাস)। এছাড়া স্পোর্টস সামগ্রীর জন্য স্পোর্টসজোনে থাকবে আন্তর্জাতিক মানের স্পোর্টস শপ, যেখান থেকে প্রয়োজনীয় ক্রীড়া সামগ্রী ক্রয় করতে পারবেন খেলোয়াড়রা। আর খেলার শিডিউল নেওয়া বা বুকিং পলিসি রাখা হবে অনলাইনের মাধ্যমে।’

ব্যক্তিগত পর্যায়ে এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘এখন টার্ফ কোর্ট বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। সত্যি বলতে কি, আমাদের শহরে মাঠের যে অপ্রতুলতা, তা টার্ফ কোর্ট অনেকাংশে পূরণ করছে। ব্যক্তি ও কর্পোরেট পর্যায়ে এমন উদ্যোগ আরও নেওয়া প্রয়োজন। যেহেতু আমাদের পর্যাপ্ত খেলার মাঠের সংকট রয়েছে, সেহেতু টার্ফকোর্টে খেলোয়াড়দের পাশাপাশি কর্মজীবী ও ছাত্রদের খেলার সুযোগ বাড়াবে। একসময় দেখা যাবে, এই টার্ফ কোর্টগুলো থেকেই প্রফেশনাল খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে।’

সরেজমিনে জায়গাটি পরিদর্শন করে দেখা যায়, মূল মাঠের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। মাঠের এক প্রান্তে চলছে স্টিল স্ট্রাকচারের গ্যালারি নির্মাণের কাজ। চারিদিকে শ্রমিকদের ব্যস্ততা। শ্রমিকদের কেউ কেউ লোহা কাটা ও ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করছেন। সুইমিং পুলের জায়গায় মাটি সরানো হচ্ছে।

মাঠের প্রবেশ গেট বন্ধ করে রাখায় বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই, ভেতরে এমন কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত শ্রমিকরা কী করছেন।

এ নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, খেলার মাঠ হবে। তবে কেমন মাঠ হবে, কী তার পরিকল্পনা তা নিয়ে কোনো ধারণা নেই তাদের। সবাই কেবল নিজের কাজটি কীভাবে গুছিয়ে শেষ করবে তা নিয়েই ব্যস্ত।

কেমন মাঠ হবে তা জানতে চাইলে পিএইচপি ফ্যামিলির সিনিয়র ম্যানেজার (হিসাব) জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রামে বর্তমানে বেশকিছু টার্ফ কোর্ট গড়ে ওঠেছে। তবে এটি অন্য সব টার্ফ কোর্টের তুলনায় বেশ বড়। এখানে সুবিধার দিক থেকে এবং আয়তনের দিক থেকে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় টার্ফকোর্ট তৈরি হচ্ছে। যেটি খেলোয়াড়দের চাহিদা অনুযায়ী দুই ধরনের খেলার উপযোগী করে করা হচ্ছে। অর্থাৎ এখানে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা যাবে। এরমধ্যে চাহিদা বিবেচনা করে ফুটবল মাঠকে তিন ভাগ করে তিনটি কোর্ট করা যাবে।’

ফুটবল বা ক্রিকেটের মধ্যে এ স্পোর্টস কমপ্লেক্স সীমাবদ্ধ না থাকার কথা উল্লেখ করে পিএইচপি ফ্যামিলির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এখানে শুধু এই দুইটি খেলা নয়, আরও অন্য খেলার ব্যবস্থা থাকবে। বাইরের টার্ফ কোর্টটি ছাড়া ইনডোরে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যরে ও ৪২ ফুট প্রস্থের একটি কোর্ট করা হচ্ছে। সেখানে চাহিদানুযায়ী বাস্কেটবল ও ব্যাডমিন্টন খেলার ব্যবস্থা থাকবে। একটি সুইমিংপুল করা হচ্ছে। সেখানে সাঁতার শেখানোসহ সপ্তাহের একদিন নারীদের ব্যবহার করার ব্যবস্থা থাকবে। পুলের আলাদা রেস্টরুম, ড্রেসিং রুম থাকবে। পাশাপাশি ওটার দ্বিতীয় তলায় সান-বাথের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যেখানে চারটি সিট থাকবে।’

মাঠের সুযোগ-সুবিধা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এই মাঠের সারাউন্ডিং বাউন্ডারি ১০ এমএম টেম্পার্ড গ্লাসের হবে। গ্লাসের ভেতরে-বাইরে সব দেখা যাবে। শুধু সুইমিং পুলটি প্রাইভেট করে রাখা হবে। এছাড়া মাঠের চারপাশে ৬ ফুটের ওয়াকওয়ে করা হচ্ছে। পাশাপাশি মাঠের দক্ষিণে একটি গ্যালারি নির্মাণ করা হচ্ছে। গ্যালারিটি দোতলায় হবে। নিচে নামাজ পড়ার সুবিধাসহ রেস্টরুম ও ড্রেসিংরুম থাকবে। তার পশ্চিমে একটি ক্যাফে থাকবে। সেখানে বসে খেতে খেতে খেলাও দেখা যাবে। বলা যায়, সবকিছুই করা হচ্ছে সব বয়সী মানুষের কথা মাথায় রেখে।’

উল্লেখ্য, ২০২০ সাল থেকে চট্টগ্রামে গড়ে ওঠেছে টার্ফ কোর্ট বা কৃত্রিম ঘাসের মাঠ। মাঠের অভাব পূরণে এ টার্ফ কোর্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে কিশোর ও যুবকদের মধ্যে। বর্তমানে চট্টগ্রামে ছোট-বড় মিলিয়ে ২৪টি টার্ফ কোর্ট গড়ে ওঠেছে। বিশেষত, সন্ধ্যার পর থেকে এই টার্ফকোর্টগুলো জমে ওঠে বিভিন্ন বয়সী খেলোয়াড়দের সমাগমে। শহরের মাঠগুলো বিলীন হওয়ার কারণে কৃত্রিম এই ঘাসের মাঠগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে খুব দ্রুত।

আরও পড়ুন: ‘সম্ভাবনার নতুন দুয়ার’ খুলতে পিএইচপিতে যুক্ত হলেন ২৩ বছর বয়সী মহসিন ভিক্টর

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর