রবিবার, ৫ মে, ২০২৪ | ২২ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৫ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা অন্যান্য দল

চলে গেলেন রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ সিরাজুল আলম খান


রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :৯ জুন, ২০২৩ ৩:১৪ : অপরাহ্ণ
সিরাজুল আলম খান। ছবি: সংগৃহীত
Rajnitisangbad Facebook Page

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সিরাজুল আলম খান আর নেই।

আজ শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

৮২ বছর বয়সী সিরাজুল আলম খান উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে সংক্রমণসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।

গত ৭ মে থেকে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তার। পরে ২০ মে তাকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১ জুন তাকে কেবিন থেকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়।

সিরাজুল আলম খানের জন্ম ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার আলীপুর গ্রামে। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।

১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন সিরাজুল আলম খান।

তারপর ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৫৮ সালে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন। গণিতে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর ‘কনভোকেশন মুভমেন্টে’ অংশগ্রহণের কারণে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।

সিরাজুল আলম খানের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘আমি সিরাজুল আলম খান: একটি রাজনৈতিক জীবনালেখ্য’ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রামের লক্ষ্যে ষাটের দশকের প্রথমার্ধে সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’, যা ‘স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস’ নামেও পরিচিতি পায়।

১৯৬১ সালে সিরাজুল আলম খান ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৬৩ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৩-৬৪ এবং ১৯৬৪-৬৫ এই দুই সেশনে তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

ছয় দফার সমর্থনে জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল আলম খান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে প্রধান ভূমিকা রাখেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আস্থাভাজন ছিলেন।

স্বাধীন হওয়ার পরপরই ছাত্রলীগের সম্মেলন নিয়ে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে সিরাজুল আলম খানের বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়।

পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে তার অগ্রণী ভূমিকায় গঠিত হয় নতুন রাজনৈতিক দল জাসদ। জাসদ প্রতিষ্ঠায় তিনি নেতৃত্ব দিলেও তিনি দলটির নেতৃত্বে আসেননি।

তবে তার দিকনির্দেশনায়ই স্বাধীনতার পর জাসদ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতো। তিনি জাসদ নেতাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত ‘অভ্যুত্থান’ বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসে এক ঘটনা। জাসদ গঠন এবং ‘অভ্যুত্থান’-এর নেপথ্য পরিকল্পনাকারী ছিলেন সিরাজুল আলম খান। আর এই দুটি বৃহৎ ঘটনার নায়ক ছিলেন মেজর জলিল, আ স ম আবদুর রব এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহের।

সিরাজুল আলম খান বিভিন্ন সময় প্রায় ৭ বছর কারাভোগ করেন। কনভোকেশন মুভমেন্টের কারণে ১৯৬৩ সালের শেষদিকে গ্রেপ্তার হন। ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমানের আমলে আবার গ্রেপ্তার এবং ১৯৭৯ সালে মুক্তি পান। ১৯৯২ সালের ২৪ মার্চ বিদেশ যাবার প্রাক্কালে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে সিরাজুল আলম খানকে গ্রেপ্তার করা হলে ৪ মাস পর হাইকোর্টের রায়ে মুক্তি পান।

মার্কসবাদে বিশ্বাসী সিরাজুল আলম খান ১৯৯৬-৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন রাজ্যের অসকস বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন।

সিরাজুল আলম খান কখনও জনসম্মুখে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। তার দীর্ঘ ৫১ বছরের রাজনৈতিক জীবন বর্ণাঢ্যের। রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি ‘দাদাভাই’ নামে পরিচিত।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর