আজকে শুধু সমুদ্রে ঝড় নয়, রাজনীতিতেও ঝড় উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘অবিলম্বে পদত্যাগ করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এটাই আপনাদের বাঁচার পথ। এখনও সময় আছে, মানুষের চোখের ভাষা বুঝে অবিলম্বে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন।’
আজ শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবি আদায় এবং গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানির প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা এই সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে অসংখ্য নেতাকর্মীর ঢল নামে। ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকেও কয়েক হাজার নেতাকর্মী সমাবেশে অংশ নেন। একদিকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড়, বিজয়নগর, অন্যদিকে ফকিরাপুল ও আরামবাগ মোড় এবং আশপাশের এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।
সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার তিনটি দেশ সফর করেছে। কিন্তু কোনো অর্জন নেই। সবার সঙ্গে মিটিংয়ে নির্বাচনের প্রসঙ্গটি এসেছে। কারণ বিদেশিরা দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন দেখতে চায়। দেশ-বিদেশে এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।’
বিএনপি মহাসচিব হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘এবার ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন করতে গেলে রুখে দেওয়া হবে। আমরা সত্যিকার অর্থেই জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় দেখতে চাই। এই দাবিতেই আমরা দীর্ঘকাল ধরে আন্দোলন করছি। আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির হাজারো নেতাকর্মীকে খুন করা হয়েছে। ৩৯ লাখ মানুষকে আসামি করে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই দেশে উচ্চ আদালত জামিন দেয় কিন্তু নিম্ন আদালত তা বাতিল করে দেয়। যেখানে কোনো ঘটনাই ঘটেনি, সেখানে ককটেল ফাটানোর মামলা দেওয়া হয়। এসবের উদ্দেশ্য হচ্ছে- আবারও গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকা। সেজন্যই আবারও গায়েবি ও মিথ্যা মামলা দিচ্ছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘৪৭ বছর পর জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, এর মূল কারণ হলো জনগণের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করা। একই কায়দায় তারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচন করেছিল। এভাবে নির্বাচনের আগে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। তবে কোনো ধানাই-পানাই করে বা কেরিকাটা করে লাভ হবে না। ইনশাআল্লাহ, এবার জনগণের বিজয় হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে রিকশাওয়ালা সারাদিন পরিশ্রম করে বাসায় গিয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারেন না। কারণ নিত্যপণ্যের দাম কয়েক গুণ বেড়েছে। দিন আনে দিন খায় এমন লোকেরা আজকে অসহায়। এই সরকার শুধু দুর্নীতির মাধ্যমে নিজেদের পকেট ভরছে। সাধারণ মানুষের পকেট থেকে টাকা কেটে বিদেশে পাচার করছে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব মো. আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব মো. রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আযম খান, ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি মো. আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, আব্দুস সালাম আজাদ, মীর সরফত আলী সপু, রকিবুল ইসলাম বকুল, তাইফুল ইসলাম টিপু, শিরিন সুলাতানা, আব্দুল খালেক, সেলিমুজ্জামান সেলিম প্রমুখ।
নতুন কর্মসূচি
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবি আদায় এবং গায়েবী মামলায় নির্বিচারে গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশী হয়রানীর প্রতিবাদে সাংগঠনিক ৮২ জেলায় চার দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কর্মসূচিগুলো হলো-আগামী ১৯ মে শুক্রবার ঢাকা মহানগর উত্তরসহ ২৮ জেলা ও মহানগর, ২০ মে শনিবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণসহ ২১ জেলা ও মহানগর, ২৬ মে শুক্রবার ঢাকা মহানগর উত্তরসহ ১৯ জেলা এবং ২৭ মে শনিবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণসহ ১৫ জেলা ও মহানগরে জনসমাবেশ।
