রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১১ এপ্রিল, ২০২৩ ১১:৪৭ : অপরাহ্ণ
বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার তাগিদ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিনকেন।
বাংলাদেশ সময় সোমবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ তাগিদ দেন।
এ ছাড়া মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়টিও আলোচনায় স্থান পায়।
ওয়াশিংটন সময় দুপুর দেড়টায় মোমেন-ব্লিনকেন বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ মিশনের তথ্য অনুযায়ী, আধ ঘণ্টার কম সময় স্থায়ী ছিল দ্বিপক্ষীয় বৈঠকটি। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কয়েক মিনিটের সূচনা বক্তব্যের রেকর্ডটি এরইমধ্যে প্রচার করেছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট।
প্রচারিত ভিডিওতে শোনা যায়, সূচনা বক্তৃতায় ব্লিনকেন বলছেন, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি অবশ্যই অবাধ এবং সুষ্ঠু হতে হবে।
শুধু বাংলাদেশ নয় বরং আন্তর্জাতিকভাবেও নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্য হওয়ার তাগিদ দিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের শুরুতেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয়পর্যায়ের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক দৃঢ় করার গুরুত্বের পাশাপাশি উঠে আসে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গও।
বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে ব্লিনকেন নিজেই টুইট করে জানিয়েছেন। এ ছাড়া আলোচনার একটি সারবস্তু ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকেও সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো হয়।
বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও আলাদা বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে।
ব্লিনকেন টুইটে বলেন, আমরা যখন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ককে গভীর করতে চাইছি, তখন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, মানবাধিকার, মিডিয়া এবং নাগরিক সমাজের প্রতি শ্রদ্ধা গুরুত্বপূর্ণ।
মোমেন-ব্লিনকেনের বৈঠক নিয়ে ব্রিফিং করেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল।
ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২১০ কোটি ডলার মানবিক সহায়তার কথা জোর দিয়ে তুলে ধরেন তিনি। এর মধ্যে আছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জরুরি খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহে বিশ্বখাদ্য কর্মসূচিতে ২ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের সহায়তা।
বেদান্ত প্যাটেল বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবারো আমাদের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এই প্রতিশ্রুতির মধ্যে আছে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, মানবিক ও শ্রম অধিকার এবং অবাধ মত প্রকাশ করা অনুমোদন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে মিডিয়া এবং নাগরিক সমাজের বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং ভীতি প্রদর্শনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অ্যান্টনি ব্লিনকেন।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই উপমুখপাত্র বলেন, যেহেতু আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গভীর করতে চাই, তাই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধার উপর জোর দিয়েছেন ব্লিনকেন।
বৈঠকে বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে যুক্তরাষ্ট্রের আকাঙ্খা পুনর্ব্যক্ত করে ব্লিনকেন বলেন, বিশ্ব আগামী নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে আছে। অবশ্য আমরাও তাকিয়ে আছি, যাতে বাংলাদেশ এই অঞ্চল ও বিশ্বের জন্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের শক্তিশালী উদাহরণ তৈরি করতে পারে।
বৈঠক শেষে হোটেলে ফিরে স্থানীয় সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য তথা মডেল বা আদর্শ নির্বাচন দেখতে চায়। জবাবে আমি বলেছি, আমরাও তাই চাই।
পররাষ্টমন্ত্রী বলেন, আমি বলেছি- একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিরোধী দলকেও এগিয়ে আসতে হবে। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করছি।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান, দূতালয় উপ-প্রধান মিস ফেরদৌসী শাহরিয়ার, মহাপরিচালক (উত্তর আমেরিকা) খন্দকার মাসুদুল আলম এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সেলর ডেরেক শোলে, জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট মিস জুলিয়েটা ভালস নয়েস, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং শ্রম বিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অফ স্টেট মিস কারা ম্যাকডোনাল্ড এবং দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়া বিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অফ স্টেট মিস আফরিন।
আরও পড়ুন: মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে: যুক্তরাষ্ট্র