মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪ | ৩১ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৫ জিলকদ, ১৪৪৫

মূলপাতা দেশজুড়ে

ভাঙ্গুড়ায় আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অপপ্রচারের অভিযোগ


রাজনীতি সংবাদ প্রতিনিধি, পাবনা প্রকাশের সময় :১১ এপ্রিল, ২০২৩ ১১:৫৬ : অপরাহ্ণ
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন অষ্টমনিষা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ।
Rajnitisangbad Facebook Page

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার অষ্টমনিষা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা অপপ্রচারের অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার ঝবঝবিয়া গ্রামে নিজ বাড়িতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন আব্দুল ওয়াহেদ দাবি করেন, গ্রামের একটি স্বার্থান্বেষী ও কুচক্রি মহল পরিকল্পিতভাবে আমাকে সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত করতে এই অপপ্রচারে চালাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, গত ৫ মার্চ মিজানুর রহমান ওরফে রিপন মোল্লার পোল্ট্রি খামারে মুরগী খাদ্য (ফিড) চুরি হয়।

এই আওয়ামী লীগ নেতা অভিযোগ করে বলেন, তার খামারের কর্মচারী নুরুজ্জামান ফিড (খাদ্য) চুরি করে ফিড ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের কাছে বিক্রি করেছেন। সিসি ক্যামেরারর ফুটেজেও সেটির প্রমাণ পেয়েছেন তিনি। এই চুরির ঘটনায় বিচারের জন্য অষ্টমনিষা ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য ও গ্রাম প্রধান আব্দুর রাজ্জাকের নিকট সালিশের রোজের টাকা জমা দেন খামারী মিজান। তবে রোজের টাকা দেওয়ার পূর্বে তাকে আমি থানায় জিডি করার পরামর্শ দিয়েছিলাম।

গত ২৩ মার্চ ঝবঝবিয়া ঈদগাহ্ মাঠে ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ইয়াছিন আলী সরদারের সভাপতিত্বে আব্দুর রাজ্জাক ও আজিজল হকসহ গ্রামের অন্যান্য প্রধানগণ চুরির ঘটনার সালিশ করেন।

সালিশ বোর্ডে বিবাদী ওই খামারের অভিযুক্ত কর্মচারী নুরুজ্জামানকে ৩ লক্ষ ১০ হাজার ও চুরিকৃত মুরগীর খাদ্য ক্রেতা জাকির হোসেনকে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করে রায় দেওয়া হয়।

সালিশ বৈঠকে উপস্থিত নুরুজ্জামান তাৎক্ষনিক ১ লক্ষ টাকা ও জাকির হোসেন ৪০ হাজার টাকা সালিশ বোর্ডের সভাপতি ইয়াছিন আলী সরকারের কাছে জমা দেন এবং তিনি গ্রামের মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ার আব্দুল বারীর কাছে জরিমানার টাকা জমা রাখেন।

কিন্তু একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে থাকে যে আমি ক্ষতিপূরনের টাকা আমার কাছে রেখেছি এবং ক্ষতিগ্রস্ত খামারী মিজানুর রহমান ওরফে রিপন মোল্লাকে টাকা দিচ্ছি না। রিপন মোল্লাও বিভিন্ন মাধ্যমে এই মিথ্যা অপপ্রচার চালাতে থাকেন।

বিষয়টি জানার পর গত ৬ এপ্রিল ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার কার্যালয়ে ভাঙ্গুড়া থানার ওসি, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সালিশী বৈঠকের সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেন।

সেখানে সবার উপস্থিতিতে প্রমাণিত হয় জরিমানার টাকা আমার কাছে নয়, ঝবঝবিয়া গ্রামের মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ার আলহাজ্ব আব্দুল বারীর কাছে আছে।

তখন তার কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ বা জরিমানার টাকা নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খামারী মিজানুর রহমানকে লিখিতভাবে বুঝিয়ে দেন।

অথচ গ্রামের একটি কুচক্রি মহলের যোগসাজসে খামারী মিজান ওরফে রিপন আমার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ওই সালিশ বৈঠকের সভাপতি ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ইয়াছিন আলী সরদার বলেন, সালিশী বোর্ডের রায়ে জরিমানার টাকা মসজিদের ক্যাশিয়ারের কাছে জমা রেখেছিলাম সবার সিদ্ধান্তে। পরে ইউএনও সাহেব আমাদের সবাইকে ডেকে নিয়ে ওই টাকা বাদি মিজানুর রহমান ওরফে রিপন মোল্লাকে বুঝিয়ে দিয়েছে। আব্দুল ওয়াহেদের কাছে কোনো টাকা ছিল না। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা ঠিক না।

গ্রামের সালিশে এতো টাকা জরিমানা করতে পারেন কিনা জানতে চাইলে ইয়াছিন আলী সরদার বলেন, গ্রামে বিভিন্ন বিষয়ে ঝামেলা হলে মানুষ আমাদের কাছে আসে, আমার সবার ভালর জন্য সালিশ করে মিমাংসা করে দেই। আর ইউএনও স্যারও তো আমাদের একই রায় মোতাবেক জরিমানার টাকা নিয়ে বাদিকে বুঝিয়ে দিয়েছে। যদি আমাদের ভুল হতো স্যার আমাদের শাস্তি দিতেন। সে হিসেবে আমাদের কাজ ঠিকই আছে।

সালিশে অভিযুক্ত নুরুজ্জামানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

তবে আরেক অভিযুক্ত জাকির হোসেন বলেন, আমি নুরুজ্জামানের কাছ থেকে এক বস্তা মুরগীর খাদ্য কিনেছিলাম। এজন্য আমাকে এক লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করে। আবার সালিশে নগদ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে আমাকে আসতে হয়েছে। পরে আমি বিষয়টি থানার ওসি ও ইউএনও স্যারকে জানিয়েছি যে আমি এ সালিশ মানি না।

ক্ষতিগ্রস্থ খামারী সালিশের বাদি খামারী মিজানুর রহমান ওরফে রিপন মোল্লা বলেন, গ্রামের সবাই জানে সালিশের রায়ে দেয়া জরিমানার টাকা আ’লীগ নেতা আব্দুল ওয়াহেদের কাছেই ছিল। তিনি টাকা না দেওয়ায় আমি থানায় জিডি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আমাকে জিডি করতে দেননি। পরে অবশ্য ইউএনও স্যার আমাদের ডেকে নিয়ে রায়ের টাকা আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। আবার অভিযুক্তরা নিজেরাই সব দোষ স্বীকার করেছে। আর আমি কোনো অপপ্রচার চালাইনি। কে বা কারা করছে জানি না।

এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, সবার সাথে কথা বলে জেনেছি সালিশে সিদ্ধান্ত মোতাবেক অভিযুক্ত দুইজনের কাছ থেকে আদায় করা টাকা ঝবঝবিয়া গ্রামের মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ার আলহাজ্ব আব্দুল বারীর কাছে জমা রাখা ছিল। সেটি বাদিকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এখানে আব্দুল ওয়াহেদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো ঠিক হয়নি।

গ্রাম্য সালিশে এত টাকা জরিমানা করা কতটুকু সঠিক এবং আপনি কীভাবে সেটি বৈধতা দিলেন-এ প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, এটা জরিমানা নয়। ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেয়া হয়েছে। অভিযুক্ত ও গ্রাম্য প্রধানরাও সেটি বলেছেন এবং অভিযুক্ত দোষ স্বীকার করে নিজেরাই ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়েছেন। তবে ভবিষ্যতে এভাবে জরিমানা না করতে, গ্রাম আদালতের আইন মেনে চলতে গ্রাম্য প্রধানদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর