রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৭ এপ্রিল, ২০২৩ ১২:৩১ : পূর্বাহ্ণ
কাঁচামাল সংকটে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শিল্পকারখানা। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে বিশ্বের এক নম্বরে থাকা জাহাজ ভাঙা শিল্প ও ইস্পাত কারখানাগুলো।
চাহিদার বিপরীতে ব্যাংক থেকে কাঁচামাল আমদানির এলসি (ঋণপত্র) খুলতে না পারায় এমন পরিস্থিতি হয়েছে। শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়াতে বেকার হয়ে পড়ছেন লাখো শ্রমিক।
এ অবস্থায় দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণের আশঙ্কা করছেন শিল্প উদ্যোক্তারা। এক্ষেত্রে গুরুত্ব বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কামনা করছেন তারা।
শিল্প উদ্যোক্তারা জানান, চাহিদার বিপরীতে বর্তমানে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ এলসি খুলছে ব্যাংকগুলো।
সেগুলো আবার ধীরগতিতে বাস্তবায়ন হচ্ছে। বিশেষ করে বড় অঙ্কের এলসি পাচ্ছেন না। কিছু ক্ষেত্রে তফসিলি ব্যাংকগুলো চাইলেও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদন দিচ্ছে না।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আমদানি খাতের ব্যয় সাড়ে ২২ শতাংশ কমে যাওয়ায় ছোট-বড় অনেক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ির কারণে কাঁচামাল আমদানির এলসি খুলতে না পারায় প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। আমদানি নিয়ন্ত্রণে বিধি-নিষেধ অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে তফসিলি ব্যাংকগুলো দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ঋণপত্র খুলতে পারছে না।
এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধের সংখ্যা বাড়তে থাকবে।
দেশের বৃহৎ ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত বলেন, ‘প্রয়োজন অনুসারে এলসি খুলতে পারছি না। শিল্প কারখানার কাঁচামাল আমদানিনির্ভর, কাঁচামাল না এলে কারখানা চলবে না। এরই মধ্যে অনেক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়েছে। আগের স্টক দিয়ে আমরা এখনো কোনোভাবে প্রতিষ্ঠান চালু রেখেছি। আগামীতে চাহিদা অনুযায়ী এলসি খুলতে না পারলে বন্ধ করে দিতে হবে।’
ব্যবসায়ীরা জানান, শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে দেশের অর্থনীতি স্থবির হয়ে যাবে। কারণ কলকারখানা চালু থাকলেই ব্যাংক-বীমা সচল থাকবে। চাকরিজীবীদের চাকরি না থাকলে ব্যাংকের সঞ্চয় ভেঙে খেতে বাধ্য হবে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংক যে উদ্দেশ্যে এলসি দিতে নিরুৎসাহিত করছে তা অর্জন হবে না। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত অর্থনীতি সচলে শিল্প কারখানার কাঁচামালের এলসি খোলার অনুমোদন দেওয়া। না হলে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে।
জাহাজ ভাঙা শিল্প চরম দুরবস্থায় আছে মন্তব্য করে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু তাহের বলেন, ‘আমি ১৯৮২ সাল থেকে জাহাজ ভাঙা শিল্পের সঙ্গে জড়িত। অতীতে এ শিল্পের এমন করুণ অবস্থা দেখিনি।’
স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানির এলসির পরিমাণ প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ডলার সংকটের কারণে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি করতে পারছি না; ফলে অনেক শিপ ইয়ার্ড বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ শ্রমিকদের বেতনসহ অন্যান্য ব্যয় মেটাতে হচ্ছে।’
এলসি সংকটে জাহাজ ভাঙা শিল্প বন্ধের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নজরে আনলেও কোনো সমাধান পাননি বলে জানিয়েছেন আবু তাহের।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে তুলনামূলক বড় জাহাজ ভাঙা হয়। ফলে এ শিল্পে বাংলাদেশ এখনো প্রথম অবস্থানে আছে; কিন্তু এলসি জটিলতায় সেই অবস্থান হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।’
চট্টগ্রাম চেম্বার পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ বলেন, ‘ব্যাংকগুলো ছোট ছোট অঙ্কের এলসি দিচ্ছে; তবে আগের অবস্থায় এখনো ফিরতে পারেনি। এ ছাড়া এলসি কার্যক্রম খুবই ধীরগতিতে সম্পন্ন হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত দ্রুত এলসি সমস্যার সমাধান করা।’
জাহাজ ভাঙা শিল্প মালিকরা জানান, চট্টগ্রামে ১৬০টির বেশি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড রয়েছে; কিন্তু চালু আছে মাত্র ৩৫ থেকে ৪০টি। এতে অন্তত দুই লাখ শ্রমিক কর্ম হারিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপ জাহাজের দাম ঊর্ধ্বমুখী, দেশে ডলার সংকট, বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দিষ্ট সংখ্যক ডলারের মধ্যে এলসি খোলার নির্দেশনা দিয়েছে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে জাহাজের ধরন, মান ও প্রকারভেদে প্রতি টন স্ক্র্যাপ জাহাজের দাম পড়ে গড়ে ৫৮০ ডলার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী জানান, ১০ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের ঋণপত্র খুলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অনুমোদনও পেয়েছেন; কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক সেটি বাতিল করে দেয়। এলসি খুলতে না পারলে একটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হবে। এরই মধ্যে কাঁচামালের অভাবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
ইস্পাত শিল্পের সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত দুই বছরে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ উৎপাদন খরচ বেড়েছে। উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে বিক্রয়মূল্য সমন্বয় না হওয়ায় চট্টগ্রামে ৫০টি ইস্পাত কারখানার ৪৩টি বন্ধ হয়ে গেছে। সময় মতো এলসি খুলতে না পারলে যে সাতটি চালু আছে সেগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে।