রবিবার, ৫ মে, ২০২৪ | ২২ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৫ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

পসকো-পিএইচপির স্বপ্নের বাড়ি পেয়ে আনন্দে কাঁদলেন আলেয়া বেগম


রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :৩ এপ্রিল, ২০২৩ ৮:৪৪ : অপরাহ্ণ
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান পসকো ইন্টারন্যাশনাল ও পিএইচপি ফ্যামিলির যৌথ উদ্যোগে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে নির্মিত ১১টি পাকা ঘর আজ দরিদ্রদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়।
Rajnitisangbad Facebook Page

স্বামী পরিত্যাক্তা আলেয়া বেগম (৫০) ২২ বছর ধরে সংসারের জন্য যুদ্ধ করেছেন ঝড়-বৃষ্টি ও পরিবেশের সঙ্গে। এরমধ্যে একমাত্র মেয়ে জেসমিন আক্তারকে বিয়েও দেন তিনি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, তার স্বামী মারা যাওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েন আলেয়া।

তখন তার দুচোখ ঘিরে নেমে আসে অন্ধকার। উপায় না দেখে গ্রামের অনেকের কাছে থেকে ঋণও নেন তিনি। ঋণ নিয়ে মা-মেয়ে কাজে নেমে পড়েন। সামান্য আয়ের টাকায় কিস্তি পরিশোধ করে দু বেলা ভাত জুটাতেই কষ্ট হতো তাদের। এরমধ্যে নুয়ে পড়া তাদের কঙ্কারসার ঘরটি মেরামত করার সামর্থও ছিল না।

দুমাস আগে হঠাৎ একদিন তাদের সেই ঘরটি দেখতে আসেন পসকো ইন্টারন্যাশনাল ও পিএইচপি ফ্যামিলির লোকজন। তারা আশ্বাস দেন-পাকা বাড়ি করে দেওয়ার। যে কথা প্রথমে আলেয়ার বিশ্বাস হয়নি। পরে যখন ঘর তৈরির কাজ শুরু হয় তখন বিশ্বাস করেন তিনি।

কথাগুলো বলছিলেন নোয়াখালীর সুবর্ণচরের ৪ নম্বর চর ওয়াপদা ইউনিয়নের বাসিন্দা আলেয়া বেগম।

তিনি বলেন, ‘মা মেয়ের কল্পনাতেও ছিল না, আমরা যে পাকা বাড়ি পাবো। কেউ তো অসহায়ের দিকে ফিরেও থাকাই না। সেখানে পাকা বাড়ি তো স্বপ্ন। কথাগুলো বলতে বলতে আলেয়া বেগমের চোখে পানি চলে আসে। পাশে থাকা মেয়ে জেসমিন তাকে জড়িয়ে ধরেন।’

পাকা বাড়ি পাওয়ার পরও কেন কাঁন্না করছেন জানতে চাইলে হাসিমুখে আলেয়া বলেন, ‘এটা আনন্দের কান্না। এই কান্নাতে সুখ আছে। সুখে পানি চলে এসেছে চোখে।’

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান পসকো ইন্টারন্যাশনাল ও বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় শিল্প গ্রুপ পিএইচপি ফ্যামিলির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনের প্রচেষ্টায় নোয়াখালীর সুবর্ণচরের ৪ নম্বর চর-ওয়াপদা ইউনিয়নে ১১টি পাকা ঘর তৈরি করা হয়।

আজ সোমবার দুপুরে এসব ঘর হতদরিদ্র পারিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

উল্লেখ্য, পসকো-পিএইচপি ফ্যমিলি হতদরিদ্রের জন্য লোহা, কংক্রিট ও রঙিন ঢেউটিনের ৬০০ বর্গফুটের ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। তিন কক্ষের প্রতিটি ঘরে দুটি শোবার কক্ষ, মাঝখানে একটি বসার কক্ষ, সামনে একটি বারান্দা এবং একটি বাথরুম রাখা হয়েছে। এই কাঠামোর বাইরে আছে একটি রান্নাঘর।

নিজের জমি আছে কিন্তু দরিদ্র আর বাড়ি নির্মাণের সামর্থ্য নেই এমন পরিবারকে বেছে বেছে বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণ করতে খরচ পড়েছে চার লাখ ৭০ হাজার টাকা। ঘর নির্মাণে পিএইচপি ফ্যামিলির তৈরি হওয়া রঙিন ঢেউটিন ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে গুণগত মান ও স্থায়িত্ব অক্ষুণ্ণ থাকে। এর আগে গত ডিসেম্বরে একই এলাকায় ৫টি ঘর তৈরি করে হস্তান্তর করা হয়েছিল।

পিএইচপি ফ্যামিলির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘পসকো’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আমি যৌথভাবে এলাকাটি পরিদর্শন করি ও সেখানকার মানুষের দুরবস্থা দেখে আমরা হতাশ হই এবং মানবিক বিবেচনায় চরের বাসিন্দাদের ক্রমানয়ে ঘর তৈরি করার মনস্থির করি। এখন পসকো’র সহযোগিতায় ১১টি পাকা ঘর তৈরি করে বাসিন্দাদের বুঝিয়ে দিয়েছি। আমি ও আমার পিএইচপি ফ্যামিলি সৌভাগ্যবান ও আনন্দিত যে, আমরা চরের অসহায় মানুষের জন্য কিছু করার সুযোগ পেয়েছি ।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের একার পক্ষে সারা দেশে দরিদ্র জনগণের আবাসন নিশ্চিত করা সত্যিই একটি চ্যালেঞ্জ। তাই আমরা সরকারকে সহায়তা করতে এ উদ্যোগ নিয়েছি। পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সমাজের অসহায় মানুষকে সেবা করতে ভালোবাসেন। তারই ধারাবাহিকতায় সুবর্ণচরে হতদরিদ্রের জন্য ঘর তৈরি করে হস্তান্তর করেছি।’

অনুষ্ঠানে কোরিয়ার পসকো ইন্টারন্যাশনাল সদর দপ্তর থেকে একটি বার্তা পাঠান প্রতিষ্ঠান প্রধান। তার বার্তাটি পড়ে শোনান সিনিয়র ম্যানেজার ডেনিয়াল লি।

বার্তায় ড্যানিয়েল বলেন, ‘আমরা আমাদের মূল্যবান এবং কৌশলগত অংশীদার পিএইচপি ফ্যামিলির সাথে এই কার্যক্রমটি চালিয়ে যেতে চাই। এবং অদূর ভবিষ্যতে স্টিল হাউসের নতুন সরবরাহে আমাদের কার্যক্রমের স্তর উন্নত করতে চাই। যেসব পরিবারকে নতুন স্টিল হাউস হস্তান্তর করা হল তাদের ও তাদের পরিবারের সকলের প্রতি শুভকামনা রইলো। পিএইচপি ফ্যামিলির ইকবালের প্রতি আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।’

পাকা বাড়ি পাওয়া চর-ওয়াপদা এলাকার হতদরিদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ (৪৫) বলেন, গাছ থেকে নারিকেল পারতে গিয়ে মেরুদণ্ডে আঘাত পান তিনি। এরপর থেকে তার কর্মক্ষমতা কমে আসে। এরপর থেকে স্থানীদের সহায়তায় দুই মেয়ে এক ছেলেকে নিয়ে কোনোমতে দিনাতিপাত করছিলেন তিনি। তার ঘরটি বন্যায় ভেঙ্গে যায়। কোনোমতে ঠিকে ছিল তার ঘর। এখন নতুন পাকা বাড়ি পেয়ে তিনি খুশি।

জ্যোৎসা বেগম (৫৫) নামের আরেক হতদরিদ্র বলেন, এই চরে সরকার থেকে ২ গন্ডা জমি বন্দোবস্তো পেয়েছিলাম। সেখানে তিন সন্তান নিয়ে বসবাস করছি। আমি জায়নামাজ, পাটি বানিয়ে সেগুলো বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। আর স্বামী এলাকার বিভিন্নজন থেকে ঋণ নিয়ে তিনি পালাতক। আমাদের খরচ দেন না। তবে কিস্তির টাকা পরিশোধ করে বলে শুনেছি।

পাকা বাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পিএইচপি ফ্যামিলির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান পসকো ইন্টারন্যাশনালের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট সন চুং কিং, পসকো-বাংলাদেশের হেড অফ কমার্সিয়াল আহাসানুল আলম, পসকো ইন্টারন্যাশনাল কোরিয়ার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট সাংচুল কিম, সিনিয়র ম্যানেজার ডেনিয়াল লি, কান্ট্রি ম্যানেজার এস জে কং, নোয়াখালী রুরাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির ( এনআরডিএস) এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আব্দুল আউয়াল, সুবর্ণচরের ৪ নম্বর চর ওয়াপদা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান ভুইয়াসহ পসকো ও পিএইচপি ফ্যমিলির র্কমকর্তাবৃন্দ ও দরিদ্র পরিবারের সদস্যারা।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর