বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা মতামত

সাদ্দাম পরবর্তী দুই দশক: কেমন আছেন ইরাকিরা?


সাদ্দাম হোসেন

অধ্যাপক শাব্বির আহমদ প্রকাশের সময় :২৯ মার্চ, ২০২৩ ১:০৯ : অপরাহ্ণ

লৌহমানব হিসেবে খ্যাত সাদ্দাম হোসেন দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে দুর্দাণ্ড প্রতাপে শাসন করেছিলেন সদা অস্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র ইরাক। কঠোর হস্তে সকল বিদ্রোহকে রুখে দিয়েছিলেন।

যমের মতো ভয় করতো তাকে ইরাকের মানুষ। তার চোখের শীতল দৃষ্টি যে কাউকে ভস্ম করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। তার নামের সাথে ইরাকের সমৃদ্ধি ও ধ্বংস-দুটো ইতিহাসই মিশে আছে।

তেল রপ্তানী নির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলে তিনি দেশকে যেমন সমৃদ্ধির পথ দেখিয়েছিলেন, তেমনি পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সাথে একের পর এক যুদ্ধে জড়িয়ে ইরাককে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার নেপথ্যেও ছিলেন তিনি।

১৯ মার্চ ২০০৩ সালে ব্যাপক বিধ্বংসী রাসায়নিক ও আণবিক অস্ত্র মওজুদ রাখার খোঁড়া অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা মাত্র এক মাস দশ দিনের সর্বাত্মক সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে পতন ঘটায় সাদ্দাম রাজত্বের। ৩০ ডিসেম্বর ২০০৬ এক প্রহসনমূলক আদালত বসিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে সাদ্দাম হোসেনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

ক্ষমতাচ্যুতির বিশ বছর পর আজও সাদ্দাম প্রশ্নে সমগ্র ইরাক দু’ভাগে বিভক্ত। একদল বলবে, সাদ্দাম এখনো জীবন্ত। তিনি মিশে আছেন ইরাকী জাতির প্রতিটি অনুভবে সাহস,শক্তি ও অনুপ্রেরণা হয়ে।

বিপরীতে ইরাকে এমন লোকের সংখ্যাও নেহায়েত কম নেই, যারা সাদ্দাম হোসেনের একনায়কতন্ত্রের শিকল ভেঙে গণতন্ত্রের মুক্ত আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখছিল।

যদিও ২০০৩ সাল থেকে ইরাকে চলতে থাকা রক্তক্ষয়ী সংঘাত ও অকার্যকর সরকারের অধীনে তাদের সেই স্বপ্ন এখনো অধরা। যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও শান্তি-স্থিতিশীলতা ফেরানোর যে আশা দেখেছিল ইরাকের মানুষ; সাদ্দামহীন ইরাকে তা বাস্তবায়ন তো হয়নি, বরং আরও খারাপ হয়েছে পরিস্থিতি।

গত ২০ বছরে জঙ্গিবাদ, অভ্যন্তরীণ সহিংসতা আর রাজনৈতিক- অর্থনৈতিক সংকটে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে ইরাক। সাদ্দামের শাসনামলে ইরাক ছিলো স্বাবলম্বী, মানসম্পন্ন শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং স্বাস্থ্যসেবা পেয়েছে সাধারণ ইরাকিরা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরাকের শিয়া ও কুর্দি নেতাদের সাথে আঁতাত করে সুন্নী প্রভাবাধীন সাদ্দাম সরকারের পতনের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জয় হয়েছে সত্যি, কিন্তু এ জয় আসলে শাপেবর হয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল প্রতিপক্ষ ইরানের জন্য।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুন্নীদের বাদ দিয়ে শিয়াদের কাছে টেনে তাদের রাজনৈতিক সুবিধা দিয়ে একের পর এক তাবেদার সরকার গঠন করলেও তারা ভেতরে ভেতরে ইরানের সাথেই সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করে গেছে।

সাদ্দাম পরবর্তী ইরাকে ইরান বড় ধরনের প্রভাব তৈরি সক্ষম হয়, যা সবসময় উদ্বেগের কারণ হয়েছে পশ্চিমা নেতাদের জন্যও। খোমেনির নেতৃত্বে ইসলামি বিপ্লবের পর ইরান আঞ্চলিক প্রভাব বলয় তৈরির যে চেষ্টা করছিল, সেটির সবচেয়ে বড় বাধা ছিলেন সাদ্দাম হোসেন।

ধর্মনিরপেক্ষ দল হিসেবে সাদ্দামের বাথপার্টি ধর্মীয় পরিচয়কে কখনো বড় করে না দেখলেও দলটির বেশিরভাগই ছিলেন সুন্নী মতাবলম্বী। সাদ্দামের পতনের পর আমেরিকার তত্ত্বাবধানে দেশটি সরাসরি শিয়া শাসনের অধীনে চলে আসে।

ইরান সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ইরাকের ভেতরে একাধিক শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠী তৈরি করে এবং তাদের শক্তি বৃদ্ধিতে বেশ সাফল্যও দেখিয়েছে। ইরাকি পার্লামেন্টের ভেতরেও ইরানের পক্ষে কথা বলার মত অনেকগুলো প্রভাবশালী কণ্ঠ তৈরি হয়েছে।

পক্ষান্তরে, ইরাক যুদ্ধে সাড়ে চার হাজারের বেশি মার্কিন সেনা, বিশ হাজার আহত এবং আনুমানিক এক লাখ বিশ হাজার ইরাকি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। ইরাকে অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র মারাত্মক পরিণতি ভোগ করতে শুরু করে।

বুশ পরবর্তী মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা একাধিকবার স্বীকার করেছেন, ইরাকে সাদ্দাম বিরোধী অভিযান ভুল ছিলো। এই অভিযানের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নীতি জটিল হয়ে পড়ে।

ইরাক যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের খরচ হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার কোটি ডলার। সাদ্দামকে উৎখাত করে ইরাকের ক্ষমতার মসনদে শিয়াদের বসিয়ে দেওয়ায় সুন্নী আরব রাষ্ট্র গুলোর কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একচ্ছত্র আধিপত্য ও বিশ্বাসযোগ্যতা কমে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই শূণ্যস্থান পূরণ করছে রাশিয়া-চীন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০৪ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ প্রভাব খাটিয়ে রেজ্যুলেশন ১৫৪৬ পাস করে ইয়াদ আলাভীকে প্রধান করে ইরাকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে দেয়। উক্ত সরকারের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল আটককৃত সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কাজ শুরু করা।

ইয়াদ আলাভী সরকারের পুরো সময়টাই ছিল ঝঞ্চাবিক্ষুব্ধ। এ সময় বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন মিলিশিয়া গ্রুপ আমেরিকান বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত হয়। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল শিয়া নেতা মুক্তাদা আল-সদরের আল-মাহাদি আর্মি।

২০০৪ সালের দিকে আল-সদরের বাহিনী এবং বেশ কিছু সুন্নি বিদ্রোহী গ্রুপ একের পর এক হামলায় কোয়ালিশন সরকার এবং আমেরিকান বাহিনীকে কোণঠাসা করে রাখে। ২০০৬ সালের এপ্রিলে ইরাকে প্রথম গণতান্ত্রিক সরকার শপথ গ্রহণ করে, যার প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন নুরি আল-মালিকি। মালিকির সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা ছিল অনেক।

কিন্তু মালিকি প্রত্যাশার ছিটেফোঁটাও পূরণ করতে পারেনি। তার শাসনামলেই মুসলমানদের পবিত্র ঈদের দিন সাদ্দামকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে ন্যাক্কারজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়। তার আট বছরের শাসনকালে দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ছড়িয়ে পরে।

অন্যদিকে শিয়া-সুন্নি বিরোধ চরমে পৌঁছে যায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক বোমা হামলায় প্রাণ হারাতে থাকে সাধারণ জনগণ। অন্যদিকে আল-কায়েদার লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর নামে চলতে থাকে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা। সব কিছু মিলিয়ে সমগ্র ইরাক যেন পরিণত হয় এক বধ্যভূমিতে।

মালিকির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদীর সময় মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে উত্থান ঘটে আইএস’র। সুন্নীদের সরকারের উচ্চ পদে নিয়োগের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় তার সরকার ব্যর্থ হলে দেশব্যাপী শিয়া-সুন্নী বিরোধ চরমে ওঠে। সাদ্দাম জামানায় কর্মরত যেসব সেনা কর্মকর্তাদের বহিষ্কার করা হয় তাদের অনেকেই আইএস-এ যোগদান করে।

২০১৩ সালের মধ্যে আইএস সিরিয়াতেও তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করতে সক্ষম হয় এবং ২০১৪ সালের মধ্যে ইরাকের গুরুত্বপূর্ণ শহর মসুল, রাক্কা এবং সিরিয়ার তেলসমৃদ্ধ শহর আইএস’র দখলে চলে যায়।

এসব এলাকায় তারা তাদের তথাকথিত খিলাফাত প্রতিষ্ঠা করে। আইএস’র প্রতিষ্ঠিত খিলাফাত ইরাকজুড়ে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ উস্কে দেয়। তাদের হাতে প্রাণ হারায় অসংখ্য ইরাকি নাগরিক, বিশেষ করে শিয়া মতাবলম্বী ও ইয়াজিদী সম্প্রদায়।

পশ্চিমা দেশগুলোর অনেক নাগরিককে ধরে এনে হত্যা করার বীভৎস দৃশ্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে বিশ্ববাসীর মাঝে ভীতির সঞ্চার করে আইএস জঙ্গীরা। আইএস দমনে আবারো দৃশ্যপটে হাজির হয় আমেরিকা এবং তার মিত্র দেশগুলো। আইএস’র বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালাতে থাকে তারা।

এতে করে আইএস’র পতন ত্বরান্বিত হয় ঠিকই, তবে একই সাথে ইরাকের অবকাঠামোর ধ্বংসও সুনিশ্চিত হয়। আইএস দমনে বিভিন্ন দেশকে নিজেদের কৃতিত্ব জাহির করতে দেখা যায় প্রায়ই। কিন্তু এসব হামলার কারণে ইরাকের অবকাঠামোগত যে ক্ষতি হয়েছে এবং সাধারণ নাগরিকদের যে প্রাণহানী ঘটেছে তার দায় নিতে কেউ রাজি নয়!

আইএস সংকট কাটতে না কাটতেই কুর্দিদের নিয়ে নতুন সমস্যা দানা বাঁধতে থাকে ইরাকজুড়ে। একসময় আইএস জঙ্গীদের দখলে থাকা কিরকুক শহর দখল করে নেয় কুর্দি সেনাবাহিনী পেশমার্গা। এই দখলকে ইরাকি কেন্দ্রীয় সরকার সবসময়ই অবৈধ বিবেচনা করে।

২০১৭ সালে ইরাকের উত্তরাঞ্চলে কুর্দিস্থানের স্বাধীনতা সংক্রান্ত এক ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ইরাকি সরকার এবং কুর্দিস্থানের আঞ্চলিক সরকারের মধ্যে বিরোধ চরমে পৌঁছে। বিরোধের জের ধরে কুর্দি বাহিনীকে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে কিরকুক ত্যাগের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী আল-আবাদি। কিন্তু কুর্দি বাহিনী তা অস্বীকার করে। ফলে ১৫ অক্টোবর ইরাকি সেনাবাহিনী কিরকুক শহরে অভিযান চালিয়ে কুর্দি বাহিনীকে হটিয়ে শহর দখলে নেয়।

এই অভিযানে ইরাকি বাহিনীর তান্ডবে অসংখ্য পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়। অনেকের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয় এবং লুটপাটের শিকার হয় অনেক মানুষ। সবশেষে গত ২০২২ সালের অক্টোবরে কুর্দি রাজনীতিক আব্দুল লতিফ রশিদকে দেশের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছে ইরাকের সংসদ৷ তিনি মোহাম্মদ শিয়া আল সুদানিকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মনোনীত করেন।

ইরাকের প্রেসিডেন্ট মূলত একটি আনুষ্ঠানিক পদ। ঐতিহ্যগতভাবে একজন কুর্দি এ পদ পেয়ে থাকেন৷ রাষ্ট্র ক্ষমতায় সব সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে সাদ্দাম পরবর্তী প্রণীত সংবিধান মোতাবেক দেশটিতে প্রেসিডেন্ট করা হয় একজন কুর্দিকে, প্রধানমন্ত্রী হন একজন শিয়া এবং পার্লামেন্টের স্পিকার হয়ে থাকেন একজন সুন্নি।

গত ১৯ মার্চ সাদ্দাম হোসেনের পতনের ২০ বৎসর উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম সাদ্দাম আমল এবং সাদ্দাম পরবর্তী আমলের তুলনামূলক বিচার বিশ্লেষণ করতে দেখা যায়।

কাতার ভিত্তিক আলোচিত গণমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে নজম আল-জাবৌরি নামে সাবেক এক ইরাকী জেনারেলের দেয়া বক্তব্য আমার কাছে অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য বলে মনে হয়েছে।

সাদ্দাম আমল এবং সাদ্দাম পরবর্তী আমলের তুলনামূলক আলোচনায় অংশ নিয়ে তার অভিমত তুলে ধরেছেন এভাবে- ‘আমরা ভেবেছিলাম, সাদ্দামের পতন হলে স্বাধীনতার স্বাদ পাবো। আমাদের দেশ ইউরোপের দেশগুলোর মতো হয়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। আমরা তার বদলে অন্ধকার যুগে ফিরে গিয়েছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘শিয়া হোক, সুন্নি হোক বেশিরভাগ মানুষই সাদ্দামের শাসন পছন্দ করত না। কিন্তু এখন যখন আমরা বর্তমানের সাথে পূর্বের অবস্থার তুলনা করি তখন মনে হয় যেন সাদ্দাম হোসেনের শাসনই হয়তো আমাদের জন্য ভালো ছিল।’

ইরাকে সামাজিক অস্থিরতা যে অবশ্যম্ভাবী, দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় তা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন সাদ্দাম নিজেও। মার্কিন বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র শীর্ষ কর্মকর্তা জন নিক্সন।

নিক্সন তাঁর লেখা ‘ডিব্রিফিং দ্য প্রেসিডেন্ট: দ্য ইন্টারোগেশন অব সাদ্দাম হোসেন’ নামক বইয়ে বলেছেন, ‘আমি যখন সাদ্দামকে জিজ্ঞাসাবাদ করি, তিনি আমাকে বলেন, ‘ইরাকে তোমরা ব্যর্থ হতে যাচ্ছ। ইরাক শাসন করা অত সহজ নয়- সেটা তোমরা বুঝতে পারবে খুব তাড়াতাড়ি।’

নিক্সন লিখেছেন, সাদ্দামের এ কথায় আমার কৌতূহল হয়, কেন এভাবে ভাবছেন, জানতে চাইলে সাদ্দাম বলেন, ‘ইরাকে তোমরা ব্যর্থ হতে যাচ্ছ, কারণ তোমরা ইরাকের ইতিহাস, ভাষা ও আরব জাতির মানসিকতা জানো না। শোন! এক সময় এই দেশে (ইরাক) শুধু ঝগড়া ও বাদানুবাদ ছিল। আমি এর অবসান ঘটাই এবং জনগণের মধ্যে ঐকমত্যের একটা জায়গা তৈরি করি। এই দেশ নিয়ন্ত্রণ করা তোমাদের কর্ম নয়। আমার মতো কাউকে খুঁজে তার হাতে ক্ষমতা দিয়ে দিও।’

নিক্সন আরো লিখেছেন, ‘যদিও সামগ্রিকভাবে আমার কাছে সাদ্দাম অপছন্দের ব্যক্তি ছিলেন, তবে তিনি কীভাবে ইরাক জাতিকে শাসন করতে সক্ষম হন- তা ভেবে তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধা জন্মে।’

দুই দশক পর এসে সাদ্দাম হোসেনের সেদিনের বলা কথা ধ্রুব সত্য বলে প্রমাণিত হচ্ছে। তবে এতো হতাশজনক ঘটনার পরও ইরাকি জনগণ এখনো আশায় বুক বাঁধে, হয়তো দুঃসময় একদিন কেটে যাবে।

জাতিগত বিদ্বেষ ভুলে সবাই একতাবদ্ধ হয়ে সুখী- সমৃদ্ধশালী ইরাক গঠনের লক্ষ্যে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাবে। আমরাও আশা করবো, মেসোপটেমীয় সভ্যতার ধারক বাহক আজকের ইরাক যেন তার হৃত গৌরব ফিরে পায়।

লেখক: কলামিস্ট ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর