বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

১৫ মার্চ নগর ভবন ঘেরাও, ৫০ হাজার মানুষ জমায়েতের টার্গেট

গৃহকর ইস্যুতে আবার গরম হচ্ছে চট্টগ্রাম


গৃহকর ইস্যুতে আগামী ১৫ মার্চ নগর ভবন ঘেরাও করবে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ। ফাইল ছবি

রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৭ মার্চ, ২০২৩ ৭:১১ : অপরাহ্ণ

গৃহকর (হোল্ডিং ট্যাক্স) ইস্যুতে আবার গরম হচ্ছে চট্টগ্রাম। গৃহকর ইস্যুতে আগামী ১৫ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) কার্যালয় ঘেরাও করবে ‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন। ওই দিন নগরীর টাইগার পাস চসিক কার্যালয়ের (নগর ভবন) সামনে ৫০ হাজার মানুষ জমায়েতের টার্গেট নিয়েছে সংগঠনটি।

এ কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে গত এক সপ্তাহ ধরে নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় মাইকিং করে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

করদাতা সুরক্ষা পরিষদের এই কর্মসূচি নিয়ে ওই দিন নগর ভবনে বড় ধরণের বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছে সচেতন মহল।

করদাতা সুরক্ষা পরিষদের দাবি, সিটি করপোরেশনকে আয়তনের ভিত্তিতে গৃহকর আায় করতে হবে। কিন্তু সিটি করপোরেশন ভাড়ার ভিত্তিতে নগরবাসীর কাছ থেকে গৃহকর আদায় করছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে গৃহকর নিয়ে বিতর্কের শুরু হয় ২০১৬ সালে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ভাড়ার ভিত্তিতে পঞ্চবার্ষিকী গৃহকর পুনর্মূল্যায়ন শুরু করেন তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।

আগে স্থাপনার আয়তনের ভিত্তিতে গৃহকর নেওয়া হতো। ভাড়ার ভিত্তিতে পুনর্মূল্যায়নের পর গৃহকর আগের তুলনায় ৩ থেকে ১০ গুণ বেড়ে যাওয়ায় আন্দোলন শুরু হয়।

‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’ গঠন করে আন্দোলনে নামেন সাবেক মেয়র (বর্তমানে প্রয়াত) এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। আন্দোলনের মুখে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর গৃহকর পুনর্মূল্যায়ন কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

গত বছরের ৩ জানুয়ারি সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন বর্তমান মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। মেয়র রেজাউলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৮ জানুয়ারি এই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা নেয় মন্ত্রণালয়।

এ নিয়ে মন্ত্রণালয় একটি চিঠি দেয় চসিককে। সেই চিঠিতে বলা হয়, সিটি করপোরেশনের করবিধি ১৯৮৬ এর ২১ বিধি অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর পরপর গৃহকর পুনর্মূল্যায়নের এখতিয়ার সিটি করপোরেশনগুলোকে দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর গত বছরের জুলাই থেকে সিটি করপোরেশন স্থাপনার ভাড়ার ভিত্তিতে পঞ্চবার্ষিকী গৃহকর পুনর্মূল্যায়ন শুরু করে। এ নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এর ফলে ছয় বছর পর একই দাবিতে আন্দোলনে নামে ‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’।

সংগঠনটি গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ ও গণমিছিল কর্মসূচি পালন করে আসছে। তাদের বক্তব্য-‘গলাকাটা হোল্ডিং ট্যাক্স আইন বাতিল করো/ দৈর্ঘ্য-প্রস্থ গুণ করো তার ওপর কর ধরো।’

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর নগরীর মাদারবাড়িতে এক সমাবেশে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুরুল আবছার চৌধুরী চসিক মেয়রকে ‘গুন্ডা’ সম্বোধন করে নগর ছাড়ার হুমকি দেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নুরুল আবছারের এই বক্তব্য ভাইরাল হলে মেয়রের লোকজন ক্ষুব্ধ হন।

আবছার চৌধুরীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। পাশাপাশি নগরীতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন চসিকের কাউন্সিলর ও সিবিএ নেতারা। এ ছাড়া মেয়রের অনুসারী নগর যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরাও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। অপরদিকে করদাতা সুরক্ষা পরিষদও পাল্টা সমাবেশ করে।

উভয়পক্ষ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করলে তখন বন্দরনগরী উত্তপ্ত হয়ে উঠে। ৫ মাস পর আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠছে চট্টগ্রাম নগরী। আগামী ১৫ মার্চ করদাতা সুরক্ষা পরিষদ ও চসিক মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়াচ্ছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি নুরুল আবছার চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বাড়িভাড়ার আয়কে ভিত্তি ধরে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করছে। যা বাড়ি মালিকদের ওপর বাড়তি করের বোঝা চাপছে। অথচ দেশের বাকি ১১টি সিটি করপোরেশনে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়িভাড়ার আয়ের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় না। আমাদের দাবি, আগের মেয়ররা যেভাবে বর্গফুটের ভিত্তিতে কর আায় করেছেন, সেভাবে করতে হবে। ভাড়ার ভিত্তিতে কর আদায় করায় ১৫ থেকে ২০ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা গণশুনানি করে হোল্ডিং ট্যাক্স সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে আর কোনো আপত্তি নেই। কর প্রদান করে মানুষ হাসিমুখে ঘরে ফিরছে। তাহলে এরপরও কেন আন্দোলন? আসলে করদাতা সুরক্ষা পরিষদ বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য মাঠে নেমেছে। তারা জনগণকে বিভ্রান্তি করতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়।’

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশনে কত শতাংশ গৃহকর আদায় হয়, তা কি তারা জানে? বরিশাল ও রাজশাহীতে ২৭ শতাংশ, রংপুর, সিলেট ও কুমিল্লায় ২০ শতাংশ এবং নারায়ণগঞ্জে ১৯ শতাংশ কর আদায় হয়। অথচ চট্টগ্রামে ২৫টি ওয়ার্ডে ১৭ শতাংশ ও ১৬টি ওয়ার্ডে ১৪ শতাংশ কর আদায় করা হয়।’

আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে হচ্ছেটা কী?

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর