বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা ধর্ম

অজু ছাড়া কি কোরআন স্পর্শ করা যাবে?



রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৩০ ডিসেম্বর, ২০২২ ২:৪৭ : অপরাহ্ণ

অনেকে জানেন না যে, অজু ছাড়া পবিত্র কোরআন স্পর্শ করা যায় কিনা? কিংবা অপবিত্র অবস্থায় কোরআন শরিফ স্পর্শ করতে শরিয়তের নিষেধ আছে কিনা-এমন প্রশ্ন করে থাকেন অনেকে।

কোনো কিছুকে হারাম ফতোয়া দিতে গেলে অবশ্যই এর স্বপক্ষে কোরআন-হাদীসের দলিল লাগবে। যদিও কোরআন হাদিসে এরকম একটি দলিল নেই যে, অযু ব্যতীত কুরআন স্পর্শ করা যাবে না।

অনেকে বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে-‘অজু ছাড়া কোরআন স্পর্শ করা যাবে না’-

যুক্তি-‘অবশ্যই তা সম্মানিত কোরআন, (যা লিখিত আছে) সুরক্ষিত কিতাবে, পূত-পবিত্র (ফেরেশতা) ছাড়া (শয়ত্বানেরা) তা স্পর্শ করতে পারে না।’ (সূরা আল ওয়াকিয়া: আয়াত ৭৭-৭৯)

তারা এই আয়াতগুলো উপস্থাপন করে যুক্তি দেয় যে, যেহেতু আল্লাহতালা এখানে বলেছেন, পবিত্র ছাড়া কোরআন কেউ স্পর্শ করতে পারে না, সুতরাং অবশ্যই আমাদের অজু করে কোরআন ধরতে হবে।

যুক্তিটি নিতান্তই হাস্যকর! কারণ কোনো মুসলিমের ওযু না থাকা অবস্থায় যে সে অপবিত্র বিষয়টি এরকম নয়। শুধুমাত্র গোসল ফরজ হলেই একজন মুসলিম অপবিত্র হয়।

আরও পড়ুন: রাজধানীতে পুলিশের সঙ্গে জামায়াতের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

আল্লাহ তায়ালা বলেন-‘হে মু’মিনগণ! তোমরা যখন সলাতের জন্য উঠবে, তখন তোমাদের মুখমন্ডল এবং কনুই পর্যন্ত হস্তদ্বয় ধৌত করবে। আর তোমাদের মাথা মাসেহ করবে এবং পা গোড়ালি পর্যন্ত ধৌত করবে। তোমরা যদি অপবিত্র অবস্থায় থাক তবে বিধিমত পবিত্রতা অর্জন করবে।’ (আল-মা’ইদাহ: আয়াত ৫:৬)

আল্লাহ তায়ালা ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ার জন্য অজু করতে বলেছেন। কিন্তু যদি কেউ অপবিত্র থাকে তাহলে তার কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় শুধু অজু করে নামাজ আদায় করলে চলবে না। সাধ্যমত পবিত্রতা অর্জন করতে হবে অর্থাৎ গোসল করতে হবে।

এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ওযু পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম নয় বরং গোসলই পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম।

সুতরাং উক্ত আয়াতের পবিত্র শব্দ দ্বারা অজু করাকে বুঝানো নিতান্তই হাস্যকর!

নামাজের ক্ষেত্রে রাসুল (সা.) স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, অযু ব্যতীত নামাজ কবুল হবে না। কিন্তু কোরআন এর ক্ষেত্রে তিনি কখনো বলেননি যে ওযু ব্যতীত কুরআন স্পর্শ করা যাবে না।

ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত-‘‘একদা রাসুল (সা.) শৌচাগার হতে বের হয়ে আসলে তাঁর সামনে খাবার উপস্থিত করা হল। তখন লোকেরা বললো, ‘আমরা কি আপনার জন্যে অজুর পানি আনবো না?’ তিনি বললেন, ‘যখন নামাজের প্রস্তুতি নিব শুধু তখন অজু করার জন্যে আমি আদিষ্ট হয়েছি।” (তিরমিযী, আবু দাউদ ও নাসায়ী হাদীস)

হযরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত-‘রাসুল (সা.) শৌচাগার হতে বের হয়ে বিনা অজুতে আমাদের কোরআন পড়াতেন এবং আমাদের সঙ্গে গোশত খেতেন। তাঁকে কুরআন হতে বাধা দিতে পারতো না বা বিরত রাখতো না জানাবাত (গোসল ফরজ) ব্যতীত অন্য কিছু।’ (আবু দাউদ, নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ হাদীস)

অযু ব্যতীত কোরআন স্পর্শ করা নাজায়েজ হওয়ার স্বপক্ষে কোনো দলিল নেই। সুতরাং অযু ব্যতীত কোরআন স্পর্শ করা জায়েজ। কিন্তু অপবিত্র অবস্থায় অর্থাৎ যে অবস্থায় গোসল ফরজ হয় সে অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা জায়েজ নেই। কারণ এর স্বপক্ষে অনেকগুলো সহীহ হাদিস রয়েছে।

আরও পড়ুন: আজান দেওয়ার সময় মুয়াজ্জিন কানে হাত দেয় কেন?

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর