রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৯ ডিসেম্বর, ২০২২ ১২:১১ : পূর্বাহ্ণ
বিশ্বকাপের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে সেরা ফাইনাল। গোটা ম্যাচ জুড়ে বার বার বদলালো খেলার রং।
প্রথমার্ধে লিওনেল মেসি ও ডি মারিয়ার গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। নির্ধারিত সময়ের শেষ দিকে জোড়া গোল করলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। অতিরিক্ত সময়ে নিজের দ্বিতীয় গোল করলেন মেসি। খেলা শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করলেন এমবাপ্পে।
শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে হলো খেলার ফয়সালা। টাইব্রেকারের লড়াইয়ে ফ্রান্সকে ৪-২ গোলে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে মেসির আর্জেন্টিনা।
এমন হাইভোল্টেজ ফাইনাল শেষ কবে দেখেছে বিশ্ব, মনে করা কঠিন।
সবশেষ ১৯৮৬ সালে ডিয়েগো ম্যারাডোনার জাদুতে বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা। ফলে একটি শিরোপার জন্য আর্জেন্টিনার অপেক্ষা ছিল বহু বছরের।
লিওনেল মেসির অপেক্ষাটা আরও বড়। এক জীবনে ফুটবল ক্যারিয়ারের যা জেতার সব জিতেও একটি সোনালি ট্রফির জন্য ক্যারিয়ারজুড়ে অপূর্ণতা ভর করেছিল তার। মরুর বুকে ধুয়েমুছে গেল সব অপূর্ণতা। শেষ হলো দীর্ঘ আর্জেন্টিনার অপেক্ষা। লিওনেল মেসির যুগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলো আর্জেন্টিনা।
ফ্রান্সের সামনেও শিরোপা ধরে রাখার সঙ্গে তৃতীয়বার সেরা হওয়ার হাতছানি ছিল। এমবাপ্পের বীরত্বের পরও পারলো না তারা। বিশ্বকাপটা মেসিরই হলো।
লুইসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে কাতার বিশ্বকাপের ফাইনাল মহারণে লড়াইয়ের আগে ফেভারিটের তকমা ছিল ফ্রান্সের গায়ে। সেটা হওয়াটা স্বাভাবিক। কারণ ৪ বছর আগেই বিশ্বকাপের শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছিল তারা। কিন্তু মূল লড়াইয়ে বিশ্ব দেখলো আর্জেন্টিনার দাপট। কি বল দখল, কি আক্রমণ-আর্জেন্টিনার দাপট ছিল সর্বত্র।
ম্যাচের অধিকাংশ সময় নিয়ন্ত্রণ করে আর্জেন্টিনা। ২৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে দলকে প্রথম লিড এনে দেন লিওনেল মেসি। ফ্রান্স তাদের বক্সে ডি মারিয়াকে ফাউল করায় পেনাল্টি পায় আলবিসেলেস্তেরা।
এরপর ৩৬ মিনিটে দুর্দান্ত এক কাউন্টার অ্যাটাকে গোল করে রাশিয়া বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন্স ফ্রান্সকে একপ্রকার ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন ডি মারিয়া।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও ধাক্কা খাওয়া ফ্রান্স সুবিধা করতে পারেনি। ম্যাচের ৮০ মিনিটে কাঙ্খিত ব্রেক থ্রু পায় লেস ব্লুজরা। কোলো মুয়ানিকে ফাউল করেন আকাশি-সাদার ডিফেন্ডার নিকোলাস ওটামেন্ডি। পেনাল্টি থেকে বল জালে পাঠিয়ে দেন ফ্রান্সম্যান কিলিয়ান এমবাপ্পে।
৯৭ সেকেন্ডের মধ্যেই দ্বিতীয় গোল করেন ২৩ বছরের তরুণ এমবাপ্পে। মার্কাস থুরামের পাস ধরে জোরের ওপর শটে জালে পাঠিয়ে দেন তিনি।
নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা ওই ২-২ গোলের সমতায় শেষ হয়। অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় ম্যাচ। সেখানেও আর্জেন্টিনার বাজিমাত। বদলি নেমে লওতারো মার্টিনেজ একের পর গোল মিস করছিলেন। এর মধ্যে ত্রাতা হয়ে আসেন মেসি। তিনি ১০৮ মিনিটে বক্সের মুখ থেকে নিজের নার্ভ ধরে রেখে দারুণ এক গোল করে দলকে ৩-২ গোলে এগিয়ে নেন।
আর্জেন্টিনা তখন শিরোপা ছোঁয়া দূরত্বে। লুসাইল স্টেডিয়ামের ভরা গ্যালারি গর্জে উঠেছে। মেসি তাদের আরও উল্লাসের ইঙ্গিত করেন। কিন্তু ফ্রান্স আবারও কামব্যাক করে। শেষ বাঁশির পাঁচ মিনিট আগে আবার গোল করেন এমবাপ্পে। তার শট বক্সে থাকা আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়ের হাতে লাগায় পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। গোল করতে ভুল করেননি তিনি। ম্যাচ ৩-৩ গোলের সমতায় শেষ করেন।
এরপর শুরু হয় টাইব্রকারের লড়াই। সেখানেও শুরুর শট জালে পাঠিয়ে দেন তরুণ এমবাপ্পে। কিন্তু বাজপাখি খ্যাত আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমি মার্টিনেজের সামনে পড়ে ফ্রান্সের কিংসলি কোম্যান ও তরুণ অঁরেলিন চুয়ামেনি শট মিস করেন।
অন্যদিকে চারটি শট নিয়েই দারুণ দক্ষতায় জালে পাঠিয়ে দেন আর্জেন্টিনার মেসি, দিবালারা। উল্লাসে ভাসেন। চ্যাম্পিয়ন হয়ে যান লিওনেল মেসি। দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে যেন ‘গ্রেট অব অল টাইম’ বিতর্ক থামিয়ে দেন। অন্যদিকে ইতালি ও ব্রাজিলের পর টানা দু’বার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন ভাঙে লেস ব্লুজদের।
আরও পড়ুন: গোল্ডেন বল জিতলেন মেসি