বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা জাতীয়

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে নিরাপত্তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের


মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন

রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :১৪ ডিসেম্বর, ২০২২ ১১:১২ : অপরাহ্ণ

নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস।

বুধবার সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর শাহীনবাগে একযুগ ধরে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় গিয়েছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।

সাজেদুলের বোন সানজিদা ইসলাম গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সমন্বয়কারী। মূলত তার আমন্ত্রণেই ওই বাসায় গিয়েছিলেন রাষ্ট্রদূত।

প্রত্যক্ষদর্শী এবং স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই বাসা ঘিরে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মী এবং ‘মায়ের কান্না’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে কিছু মানুষ অবস্থান নেন।

১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের ফাঁসি, কারাদণ্ড, চাকরিচ্যুত সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন ‘মায়ের কান্না’।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মী এবং ‘মায়ের কান্না’ সংগঠনের লোকজনের হইচই ও হট্টগোলের কারণে বৈঠক শেষ না করেই চটজলদি এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হন পিটার।

ফেরার পথে তার গাড়ি ঘিরে দাবিনামা প্রদানের চেষ্টা, প্রতিবন্ধকতা এবং হট্টগোলে নিরাপত্তা নিয়ে বেশ শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন রাষ্ট্রদূত। শাহীনবাগ থেকে বেরিয়েই মার্কিন রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে জরুরী সাক্ষাতের অ্যাপয়েনমেন্ট চান।

বুধবার দুপুর ১টার দিকে সেগুনবাগিচায় তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে যান।

বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে তার বিস্তারিত সন্ধ্যায় জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যমের জিজ্ঞাসার জবাবে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘উনি (মার্কিন রাষ্ট্রদূত) বললেন, উনি একটা বাসায় গিয়েছিলেন। সেখানে যখন তিনি গেছেন অনেক লোক সেখানে ছিল। উনি বাসার ভেতরে ছিলেন আর বাইরে বহু লোক ছিল। তারা কিছু বলতে চাচ্ছে। তার সিকিউরিটির লোকেরা বলেছে, আপনি তাড়াতাড়ি চলে যান। নাহলে আপনার গাড়ি ব্লক করে দেবে। সেই নিরাপত্তা অনিশ্চয়তার কারণে তিনি তাড়াতাড়ি চলে গেছেন। এ ঘটনায় তিনি খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছেন।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ওনাকে (মার্কিন রাষ্ট্রদূত) বললাম, আপনার নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব আমাদের। আপনার ওপর কিংবা আপনার লোকের ওপর কেউ আক্রমণ করেছে? উনি বললেন, না। উনি বললেন ওনার গাড়িতে হয়তো আঁচড় দিয়েছে, তবে এটাও শিওর না। আমি বললাম, আপনার এবং আপনার লোকজনকে আমরা নিরাপত্তা দেবো। আপনি আরও অধিকতর নিরাপত্তা চান আমরা দেবো। তবে আপনি ওখানে গেছেন এই খবর কে প্রচার করলো? আমরা তো জানি না। আমি বা আমার মন্ত্রণালয়ের কেউই জানেন না। আপনারা জানাননি। আপনি ওখানে যাবেন এই তথ্য লিক করলো কে? উনি উত্তর দিতে পারেননি।’

আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমরা এটা বলেছি যে, আপনার (মার্কিন রাষ্ট্রদূত) নিরাপত্তা আমরা দেবো আর আপনি বের করেন আপনি ওখানে যাচ্ছেন এটা কেমন করে লোকের কাছে প্রচার হলো? আমি তাকে বলেছি, আপনার লোকই এটা লিক করতে পারে। উনি একটু দুশ্চিন্তায় আছেন।’

লোকজনের জটলার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ওনাকে (মার্কিন রাষ্ট্রদূত) বললাম, ওখানে যেসব লোকজন গেছে, তাদের আমি বাধা দিতে পারবো না। আমি যেটা করবো আপনার প্রটেকশনের জন্য তাদের দূরে রাখবো। অ্যাজ এ কান্ট্রি অব ফ্রি স্পিচ, তারা বক্তব্য দেবে, আমি তাদের অ্যারেস্ট করতে পারবো না। আর যদি আপনার ওপর কোনো আক্রমণ হয়ে থাকে কিংবা আপনার লোকের ওপর কেউ আক্রমণ বা অ্যাসল্ট করে থাকে তাহলে অবশ্যই আমি ব্যবস্থা নেবো।’

নিখোঁজ সাজেদুলের বোন সানজিদা ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আসবেন জেনে তেজগাঁও থানার ওসি অপূর্ব হাসানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল দুদিন আমাদের বাসায় আসেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত আমাদের বাসায় প্রবেশের ৪০ মিনিট আগে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মী ও মায়ের কান্না সংগঠনের লোকজন রাস্তার ওপর অবস্থান নেন। বাসা থেকে বেরিয়ে যখন তিনি গাড়িতে উঠছিলেন, তখন তারা কথা বলার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে হট্টগোলও হয়। পরে তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সহায়তায় তিনি গাড়িতে উঠে চলে যান।’

মার্কিন রাষ্ট্রদূত কী বলেছেন? জানতে চাইলে সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘নিখোঁজের ঘটনাগুলো কীভাবে তদন্ত করা যায়, সেটা নিয়ে তারা কাজ করছেন। পাশাপাশি মানবাধিকার নিশ্চিত করতেও কাজ করছেন।’

বিএনপির ঢাকা মহানগরের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির (বর্তমানে ঢাকা উত্তরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সাজেদুল ইসলাম। ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর থেকে তিনি নিখোঁজ। ঘটনার পর পরিবারের সদস্যরা দাবি করে আসছেন, সাজেদুলকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৮ সালের আগস্টে ঢাকার মোহাম্মদপুরে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে আচমকা হামলা চালিয়েছিল একদল সশস্ত্র যুবক। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের বাসায় নৈশভোজ থেকে ফেরার পথে ওই ঘটনা ঘটেছিল। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো রাষ্ট্রদূতের গাড়ি বহরে হামলার কলঙ্কজনক একটি ঘটনা হিসাবে স্থান করে নিয়েছে।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর