মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ | ১০ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৩ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা বাণিজ্য

শিল্পপণ্য ঘোষণায় ঝুঁকিতে রাবার চাষ, করের ফাঁদে মালিকরা


রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৬ অক্টোবর, ২০২২ ২:০২ : অপরাহ্ণ
রাবার গাছের কষ থেকে রাবার উৎপন্ন হয়। ছবি: সংগৃহীত
Rajnitisangbad Facebook Page

অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও রাবার চাষ শুরুর দিকে কৃষিজাত পণ্য হিসেবে চিহ্নিত ছিল। ফলে এই খাতটির বিকাশে সহজেই কৃষি ব্যাংকের ঋণ মিলতো। কিন্তু সরকার রাবারকে শিল্পজাত পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় রাবার বাগান ও রাবার উৎপাদন বহুমুখী করের ফাঁদে পড়ার শঙ্কায় রয়েছে।

এমনিতেই দেশে রাবার আমদানি করলে কর দিতে হয় ৫ শতাংশ। আর দেশে উৎপাদন করলে পরিশোধ করতে হয় ১৫ শতাংশ মূসক।

সংশ্লিষ্ট কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, একদিকে কাঁচা রাবারের দাম কমে গেছে; অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে বেশি কর ধার্য করা হয়েছে।

তাই ভ্যাট কর্মকর্তাদের মৌখিকভাবে বলা হয়েছে তারা যেন রাবার বাগানের মালিকদের অহেতুক হয়রানি না করেন। কিন্তু আমরা খবর পাচ্ছি, তারা হরহামেশাই বাগানে হানা দিচ্ছেন। অনেক মালিক এ নিয়ে কোনো বাগবিতন্ডায় না গিয়ে অর্থও পরিশোধ করছেন। অনেকটা বাধ্য হয়েই মালিকরা এই টাকা দিচ্ছেন।

সূত্র বলছে, ১৯৫২ সাল থেকে বাংলাদেশে রাবার চাষের প্রক্রিয়া শুরু হয় চট্টগ্রাম ও টাঙ্গাইল এলাকায়। পরে সুফল পাওয়া গেলে প্রথমে সরকারি এবং আশির দশকে ব্যক্তি উদ্যোগে এ দেশে রাবার চাষ শুরু হয়।

বর্তমানে বাংলাদেশে রাবারের বার্ষিক মোট চাহিদা ৩৫ হাজার টন। আর দেশের মোট উৎপাদন ২৫ হাজার টন। ২০ হাজার টন আমদানি করা হয়। কারণ দেশে উৎপাদিত কিছু রাবার শিট আবার ভারত, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ায় রফতানি হয়।

রাবার বাগান মালিক ও বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশের মতো বিগত বছরগুলোয় ভারত, ভিয়েতনাম আর মালয়েশিয়াও ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে। তবে তাদের দেশে রাবার একটি কৃষিপণ্য হিসেবে স্বীকৃত।

তাই বাংলাদেশের রাবার বাগান মালিকদের দাবি, এ দেশেও এটিকে কৃষিপণ্য হিসেবেই স্বীকৃতি দেওয়া হোক।

বাংলাদেশ রাবার বাগান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফ উল্লাহ মনসুর বলেন, উৎপাদিত কৃষিপণ্যে কর আরোপের সুযোগ নেই। কিন্তু রাবার যখন শিল্পপণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়, তখন শিল্পের অন্যান্য উৎপাদনের মতোই রাবার উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে একাধিক কর দেওয়ার বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ১৯৮০/৮১ সালে ইজারাকৃত বাগানগুলোর ইজারার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। সরকারি অন্যান্য ইজারাকৃত ভূমির মতো রাবার বাগানগুলোর ইজারাও নবায়ন করে রাবার চাষকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা করলে আমাদের দেশও অচিরেই রাবার চাষে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে বলে আশা করছি। তখন দেশীয় চাহিদা পূরণ করে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন পণ্য হিসেবে যুক্ত হবে রাবার।

বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহান বলেন, রাবার বাগান ও রাবার উৎপাদন এখন বন মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে। কারণ রাবারের বিষয়টি বন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেই বেশি সম্পৃক্ত। রাবার গাছের কষ থেকে রাবার উৎপাদনের চেয়েও কার্বন গ্রহণ, অক্সিজেন উৎপাদন এবং পরে উন্নত আসবাবপত্র তৈরির ক্ষেত্রে রাবার গাছের ভূমিকা অনেক বেশি।

করারোপের ব্যাপারে তিনি বলেন, সরকার চাইলে রাবার উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে মূসক কমানো যেতে পারে। অথবা দেশীয় পণ্য উৎপাদনকারীদের সুরক্ষা দিতে আমদানি শুল্ক বাড়ানো যেতে পারে। ২০১৬ সালে একবার মূসক কমানো হয়েছিল, যা পরে আবার বাড়ানো হয়।

বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ২০১৩ সালের ৫ মে রাবার বোর্ড গঠন করে।

একাধিক বাগান মালিক বলেন, বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তারা আমাদের অভিভাবকের ভূমিকা নিতে চান। আমরাও তাতে সন্তুষ্ট। আমরা চাই, রাবার বোর্ড আমাদের বহুমুখী করারোপের চাপ থেকে মুক্ত করুক।

রাবার বাগানের মালিক মোমিনুল হক চৌধুরী বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারি আমার নামে বরাদ্দ চা বাগানের জমি খুঁজে পেতেই ১৭ বছর লেগে যায়। কক্সবাজারের ঈদগাঁ থেকে প্রতিদিন চার ঘণ্টা হেঁটে বাগানে পৌঁছতে হতো। সেই জায়গা এখন আমরা আবাদ করে রাস্তাঘাট করেছি। আমরা যখন পতিত জমিকে রাবার বাগানে পরিণত করেছি এবং এটি যখন সম্ভাবনাময় খাতে পরিণত হয়েছে, তখনই কর বিভাগের লোকজন বাগানে হানা দেওয়া শুরু করেছেন।

১৯৮০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের পতিত ভূমি রাবার বাগানের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। প্রতি মালিককে ২৫ একর করে ভূমি বরাদ্দ দেওয়া হয়।

রাবারকে ঘোষণা করা হয় একটি কৃষিপণ্য। পাহাড়ি মানুষের কর্মসংস্থান, ওই এলাকায় মানুষের বসবাস এবং বনায়নের জন্য কৃষি ব্যাংক ঋণ দেওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়।

কিন্তু দুই দশক আগে রাবারকে কৃষিপণ্য থেকে কাগজে-কলমে শিল্পপণ্যে রূপান্তরের পর কৃষি ব্যাংকের ঋণ দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি বড় ও ছোট বাগান মিলে দেশে প্রায় এক লাখ একর জমিতে রাবার বাগানের চাষ হচ্ছে।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর