ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানেস্ক, জাপোরিঝিয়া এবং খেরসনকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
সারা বিশ্বের অসীম শক্তিধর নেতারা পুতিনকে আটকাতে পারলেন না। তার বুক কাঁপেনি একটুও। কেন কাঁপবে!
তিনি পরীক্ষা হিসেবে এর আগে ক্রাইমিয়াকে দখল করে নিয়েছেন ইউক্রেনের কাছ থেকে। তখনও বিশ্ববাসী পুতিনের কিচ্ছু করতে পারেনি। মূলত সেখান থেকে সাহস সঞ্চয় করেছেন তিনি।
তিনি দেখেছেন পুরো ইউক্রেনকে দখল করে নিলে ওই প্রতিক্রিয়া একই রকম হবে। সেই সাহসে এবার ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করলেন পুতিন।
স্থানীয় সময় শুক্রবার মস্কোর ঐতিহাসিক রেড স্কয়্যারে ভ্লাদিমির পুতিনের উপস্থিতিতে এক উৎসবমুখর অনুষ্ঠানে চার প্রদেশের নেতৃবৃন্দ রাশিয়ায় যোগদান সম্পর্কিত নথিপত্রে স্বাক্ষর করেন।
স্বাক্ষর হয়ে যাওয়ার পর রেড স্কয়্যারের মঞ্চে উঠে পুতিন বলেন, ‘দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও ঝাপোরিজ্জিয়ার জনগণ তাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ থেকে তারা সবাই রাশিয়ার নাগরিক। আমরা তাদের সবাইকে রাশিয়ান ফেডারেশনের পক্ষ থেকে উষ্ণ অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এ অঞ্চলের মানুষ তাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন। কিয়েভের উচিৎ এই মানুষের রায়কে সম্মান দেয়া। এটাই শান্তির, এটাই শান্তির একমাত্র পথ।’
এ সময় পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যদি রাশিয়ার নতুন ভূখণ্ডে কোনো আঘাত আসে তাহলে রাশিয়া সর্বশক্তি প্রয়োগ করে তা রক্ষা করবে এবং নিজের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।’
গত ২৩-২৭ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রশ্নে এ চারটি অঞ্চলে কথিত গণভোট হয়। ভোটের ব্যালটে লেখা ছিল- ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন দেশ হয়ে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে চান কিনা।
গণভোটের সময় শেষ হওয়ার পর রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রায় শতভাগ মানুষ রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়েছেন।
তবে পশ্চিমারা জানিয়েছে, সাধারণ মানুষকে হ্যাঁ ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে। অস্ত্রসজ্জিত সেনারা ব্যালট বাক্স নিয়ে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গেছেন।
চলতি বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সামরিক জোট ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদানকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দ্বন্দ্বের জেরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। পুতিন স্বয়ং এই অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ৮ মাসের অভিযানে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন প্রায় ৬ হাজার রুশ সেনা। চার প্রদেশ যোগদান শেষে বক্তব্য প্রদানের আগে অভিযানে নিহত রুশ সেনাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন পুতিন ও ইউক্রেনের চার প্রদেশের নেতারা।
এদিকে প্রেসিডেন্ট পুতিনের কড়া নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ।
তিনি নিউইয়র্ক সিটিতে সাংবাদিকদের বলেছেন, রাশিয়ার এই সম্প্রসারণ জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন। এর কোনো আইনগত মূল্য নেই। রাশিয়ার এই কর্মকাণ্ডকে যুদ্ধে বিপজ্জনক এক উস্কানি হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ রাশিয়ার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে জুড়ে নেওয়ার সময় যা যা করা হয়েছিল এবারও তেমন প্রক্রিয়াতেই আরও চার প্রদেশকে রুশ ফেডারেশনভুক্ত করা হয়েছে।