যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে ‘ক্রসফায়ার’ কমে গেছে কি না-সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে র্যাবের বিদায়ী মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, ‘এটা আমরা মনে করি না। যেখানে প্রয়োজন হয়, ঠিক সেখানেই আমরা শক্তি প্রয়োগ করি। যেখানে প্রয়োজন হয় না, সেখানে আমরা বিন্দুমাত্র শক্তি প্রয়োগ করি না।’
তিনি বলেন, ‘একজন ধাক্কা দিয়ে দৌড় দিলো, তাকে কি গুলি করে দিতে হবে? সিচুয়েশন যেটা ডিমান্ড করে সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। আমরা প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’
আজ বুধবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন তোমরা এদেশের পুলিশ, এদেশেরই নাগরিক। আমাদের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে কেন আমরা দাঁড়াব। যখন আমরা আক্রান্ত হই, মাদক, অস্ত্র উদ্ধার, মানবপাচারকারী যখন আমাদের ওপর আক্রমণ করে, তখন আমরা প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। আইনে যে ক্ষমতা র্যাবকে দিয়েছে তা আমরা ক্রস করি না।’
মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছিল র্যাব। এখন দেখা যাচ্ছে, মাদক বাড়ছে, মাদকসেবী বাড়ছে। র্যাবের অভিযান ব্যর্থ কি না-‘গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান আমরা যেভাবে করি, এটা কিন্তু একটা বৈশ্বিক যুদ্ধ বটে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেটা করছে, কারাগারে যেসব আসামি আছে তাদের অধিকাংশ মাদকের আসামি। এটা একটা সামাজিক সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। যার যার জায়গা থেকে দায়িত্বশীল আচরণ না করলে…আমার সন্তানের এখন ঘরে থাকার কথা, সে বাইরে গেছে, কোথায় গেছে? সন্তানের বিষয়ে আমার দায়িত্ব আছে। শিক্ষকের দায়িত্ব আছে। জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব আছে। আমরা সবাই মিলে কাজ করছি। আমরা যেখানে খবর পাচ্ছি, ধরছি। এটা নিয়ন্ত্রণে নেই এ কথা বলার সুযোগ নেই। আমরা যদি ব্যবস্থা না নিতাম, জেলখানায় এতো আসামি কীভাবে যেতো!’
আপনি যে সময় দায়িত্ব পালন করেছেন সে সময় র্যাবের বিরুদ্ধে গুমের কোনো অভিযোগ নেই। তারপরও যুক্তরাষ্ট্র আপনিসহ কিছু কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আগামীর পথচলায় এটা প্রভাব ফেলবে কি না জানতে চাইলে আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘যে কোনো কাজ আমরা যখন করি, আইনানুগ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে আমরা কাজটি করি। যখন কোনো ঘটনা সংঘটিত হয়, আমাদের ওপর গুলি বর্ষণের কথাই বলি; অপরাধীরা যে কত ‘নটোরিয়াস’, অপরাধ সংঘটনের জন্য সামনের সব বাধা অতিক্রম করে তারা অপরাধ সংঘটন করতে চায়। আমরা যখন তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াই, তখন তারা সর্বশক্তি দিয়ে আমাদের প্রতিহত করে তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে চায়। আমাদের সঙ্গে ওই অবস্থা যখনই সংঘটিত হয়। এরপরও আমাদের অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সংঘটিত হয় সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু একটা জিনিস লক্ষ করবেন, আমরা কিন্তু ঘটনাস্থলে থাকি না। ঘটনাস্থলে থানা পুলিশ আসে। ম্যাজিস্ট্রেট আসেন, সুরতহাল করেন। এরপর মর্গে নেওয়া হয়, ময়নাতদন্ত করা হয়। মামলা হয়, পুলিশ তদন্ত করে। আমাদের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা, উভয়পক্ষের যুক্ততর্ক থেকে বিচারক তার সুচিন্তিত রায় দেন। ঘটনার পরে আমাদের কোনো ভূমিকা থাকে না। অন্যান্যরা সরকারের, আপনারাও (গণমাধ্যম) প্রতিনিয়ত মনিটর করেন। সেখানে র্যাবের ভূমিকা কতটুকু আছে সেটা আমার কাছেও প্রশ্ন। স্বচ্ছতার সঙ্গে এটা সম্পাদন হয়ে থাকে। এ ধরনের ঘটনায় আমাদের লোক আহত হয়েছে, আমাদের লোকের প্রাণহানী হয়েছে। অনেকের অঙ্গহানী হয়েছে।’
সামনে নির্বাচন, বিরোধী দলগুলো অভিযোগ করে আসছে-বিগত নির্বাচনগুলোতে পুলিশ সরকারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। আপনি পুলিশ প্রধান হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন, এই অভিযোগ আপনি কীভাবে মোকাবিলা করবেন? গণমাধ্যমে এসেছে, বিএনপিকে যারা অর্থ দেয়, পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের একটি তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা হচ্ছে, র্যাব বিরোধী দলগুলোর কোনো খোঁজ নিচ্ছে কি না-এসব প্রশ্নের জবাবে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘নির্বাচনকালে আমরা সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে দায়িত্ব পালন করি। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের দায়িত্ব সম্পাদন হয়। এটা দীর্ঘ দিনের চর্চা। আমরা অতীতে যেভাবে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে পেরেছি, সমুন্নত রাখতে পেরেছি, আগামী দিনেও বাংলাদেশ পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখতে দৃঢ় প্রতীজ্ঞ।’
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পুলিশের আইজি হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
