বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা আঞ্চলিক রাজনীতি

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের কমিটি

কার চাপে সরে দাঁড়ালেন সভাপতি প্রার্থী টিপু সুলতান?



বিশেষ প্রতিনিধি প্রকাশের সময় :২৯ আগস্ট, ২০২২ ৭:২১ : অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের আসন্ন কমিটির সভাপতি প্রার্থী থেকে শেষ মুহূর্তে হঠাৎ সরে দাঁড়িয়েছেন টিপু সুলতান চৌধুরী।

গত ৩ আগস্ট তিনি যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সঙ্গে দেখা করে মৌখিকভাবে সভাপতি প্রার্থী থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানান।

দক্ষ সংগঠক, সৎ ও পরিচ্ছন্ন নেতা হিসেবে পরিচিত টিপু সুলতান চৌধুরী সভাপতি প্রার্থী থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়টি নিয়ে জেলা যুবলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে নানা আলোচনা চলছে।

টিপু সুলতান চৌধুরী জেলা যুবলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির প্রায় ১২ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ।

গত ২৮ মে পটিয়া উপজেলায় দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে কাউন্সিলররা দ্বিতীয়বারের মতো সভাপতি পদে টিপু সুলতানের নাম প্রস্তাব করেন।

তবে তিনি নতুন কমিটির সভাপতি প্রার্থী ছিলেন না। কেন্দ্রে সিভিও জমা দেননি।

আগামী সেপ্টেম্বর মাসে কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলাসহ মহানগর ও উত্তর জেলা যুবলীগের কমিটি ঘোষণার কথা শুনা যাচ্ছে।

কিন্তু কমিটি ঘোষণার আগে হঠাৎ দক্ষিণ জেলার সভাপতি প্রার্থী থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন ৫৪ বছর বয়সী টিপু সুলতান।

জেলা যুবলীগের নেতা-কর্মীদের অনেকে বলছেন, সম্মেলনে কাউন্সিলরদের অনুরোধে সভাপতি প্রার্থী হওয়ার পর টিপু সুলতানের ওপর ভূমিমন্ত্রী ও আনোয়ারা-কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম-১৩) আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ‘চাপ’ ছিল। হয়তো মন্ত্রীর ‘চাপের কারণে’ টিপু সুলতান শেষ পর্যন্ত অভিমান করে সরে দাঁড়িয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টিপু সুলতান চৌধুরী রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘দীর্ঘ ১২ বছর যুবলীগের নেতৃত্ব দিয়েছি। তাই আর যুবলীগের রাজনীতি করতে চাই না। নতুনরা নেতৃত্বে আসুক। আমি সামনে জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চাই।’

সভাপতি প্রার্থী থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা বলার পর আপনাকে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ কী বলেছেন?

এ প্রশ্নের জবাবে টিপু সুলতান বলেন, ‘তিনি (যুবলীগের চেয়ারম্যান) জানতে চেয়েছেন, কেউ চাপ সৃষ্টি করেছে কিনা?’

প্রার্থী থেকে সরে দাঁড়াতে আপনাকে কি ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ কোনো চাপ দিয়েছেন-এ প্রশ্নের উত্তরে টিপু সুলতান বলেন, ‘‘আমি গত ৬ জুন ভূমিমন্ত্রীর সঙ্গে ঢাকায় দেখা করতে যাই। তিনি আমাকে বলেছেন, ‘তুমি যে প্রার্থী হবে সেটা তো সম্মেলনের আগে আমাকে বলোনি। আমি বলেছি, ‘আমার প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা ছিল না। সম্মেলনে কাউন্সিলররা আমাকে চেয়েছেন।’ এরপর মন্ত্রী বললেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে যুবলীগ করেছো, বয়সও হয়েছে, এখন আওয়ামী লীগে চলে যাও। সেখানে তোমাকে আমি ভালো একটা পদে আনবো।’’

এ বিষয়ে জানতে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

দলীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, টিপু সুলতান চৌধুরী সরে দাঁড়ানোর পেছনে কারও ‘চাপ’ থাকার বিষয়টি যুবলীগের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দ জানেন। তারা বিষয়টি ভালো চোখে দেখছেন না। তারা এটাকে যুবলীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে ‘হস্তক্ষেপ’ হিসেবে দেখছেন। যুবলীগের একজন যুগ্ম সম্পাদক এ নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদকে সম্মানিত অতিথি করা হয়। কিন্তু তিনি সম্মেলনে যাননি।

উত্তর জেলার সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে সম্মানিত অতিথি করার পরও তিনি অংশ নেন।

সূত্রটি জানিয়েছে, টিপু সুলতান চৌধুরী মৌখিকভাবে সরে দাঁড়ানোর কথা বললেও যুবলীগের একজন যুগ্ম সম্পাদক তাকে আবার দক্ষিণ জেলার সভাপতি করতে চান।

সরে দাঁড়ানোর কথা বলার পরও যদি কেন্দ্র আপনাকে বেছে নেয় সেক্ষেত্রে কী করবেন?- এ প্রশ্নের জবাবে টিপু সুলতান চৌধুরী রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘এটা হাইপোথেটিক্যাল প্রশ্ন।’

যে কারণে ‘চাপের মুখে’ পড়েন টিপু সুলতান
জেলা যুবলীগের কাউন্সিল অধিবেশনে টিপু সুলতানের প্রস্তাবক ছিলেন বাঁশখালী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি অধ্যাপক তাজুল ইসলাম। তিনি বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর এপিএস। আর সমর্থক ছিলেন পটিয়া উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হাসান উল্লাহ চৌধুরী। তিনি জাতীয় সংসদের হুইপ ও পটিয়ার সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর অনুসারী।

দুই সংসদ সদস্য সামশুল হক ও মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে ভূমিমন্ত্রী জাবেদের চরম বিরোধ রয়েছে।

ভূমিমন্ত্রী জাবেদের অনুসারীরা মনে করছেন, কাউন্সিল অধিবেশনে টিপু সুলতানকে প্রার্থী করার পেছনে সামশুল হক ও মোস্তাফিজুর রহমানের ভূমিকা ছিল।

এ কারণে টিপু সুলতানের ওপর ‘চরম ক্ষুব্ধ হন’ ভূমিমন্ত্রী জাবেদ।

দলীয় সূত্র জানায়, গত ৬ জুন টিপু সুলতান ঢাকায় গিয়ে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় টিপু সুলতানের ওপর ‘ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন’ ভূমিমন্ত্রী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টিপু সুলতান চৌধুরী বলেন, ‘তারা (প্রস্তাবক ও সমর্থক) তো সংগঠনের দুটি ইউনিটের নেতা। তারা আমাকে পছন্দ করতেই পারেন। এটার পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। আমি যাদের (কর্মী) সঙ্গে কাজ করি তাদের কথা শুনি। সম্মেলনে কাউন্সিলররা হঠাৎ আমার নাম প্রস্তাব করেন, যা আমি প্রস্তুত ছিলাম না। তাদের চাপাচাপিতে আমি মঞ্চে গিয়েছিলাম।’

জানতে চাইলে পটিয়া উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হাসান উল্লাহ চৌধুরী রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘টিপু সুলতান চৌধুরী চলে গেলে সংগঠনে শূন্যতার সৃষ্টি হবে-সেই কারণে কাউন্সিলররা তাকে আবার নেতৃত্বে দেখতে চেয়েছেন। তিনি যখন বিদায়ী ভাষণ দিচ্ছিলেন নেতা-কর্মীরা সেটা অনুভব করেছেন।’

শুধু টিপু সুলতান নয়, দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি ও কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দিদারুল ইসলাম চৌধুরীও সভাপতি প্রার্থী থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, দিদারুল ইসলামও কোনো প্রভাবশালী নেতার চাপের কারণে সরে দাঁড়িয়েছেন।

তবে তিনি রাজনীতি সংবাদের কাছে দাবি করেছেন, ব্যক্তিগত কারণে সভাপতি প্রার্থী থেকে সরে দাঁড়ান।

যুবলীগের কমিটিতে আনোয়ারা-কর্ণফুলী আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের প্রার্থী হলেন মোহাম্মদ ফারুক। তিনি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক আবদুল মালেক চৌধুরী জনি হত্যা মামলার এজাহারে অন্যতম আসামি ছিলেন ফারুক। তবে মামলার চার্জশিট থেকে তার নাম বাদ পড়ে।

কিন্তু জনির পরিবারের সদস্যরা ফারুককে এ হত্যার ঘটনায় দায়ী করছেন। তারা বলছেন, ফারুক কোনো প্রভাবশালী নেতার প্রভাব খাটিয়ে চার্জশিট থেকে তার নাম কাটিয়েছেন।

জেলা যুবলীগের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, ভূমিমন্ত্রী যেকোনো প্রকারে মোহাম্মদ ফারুককে সভাপতি বানাতে চান। কারণ জেলা আওয়ামী লীগের গ্রুপিং রাজনীতির কারণে এটা তার জন্য ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যুবলীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজনীতি সংবাদকে জানান, যুবলীগের চেয়ারম্যানের কাছে নিহত ছাত্রলীগ নেতা জনির পরিবারের সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও ফুটেজ পাঠানো হয়েছে। তিনি সেটি দেখেছেন। মনে হয়, তিনি সেদিনই একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।

যুবলীগের ওই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, যত বড় প্রভাবশালী নেতা কিংবা মন্ত্রী সুপারিশ করুক না কেন, চট্টগ্রামের তিন সাংগঠনিক জেলায় কোনো বিতর্কিত নেতা নেতৃত্বে আসতে পারবে না।

আরও পড়ুন:

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগ: সভাপতি-সম্পাদক পদে আলোচনায় ৫ নাম

চট্টগ্রামে হঠাৎ গজিয়ে উঠলো ‘শেখ ফজলুল হক মনি স্মৃতি পরিষদ’

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর