নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :২২ আগস্ট, ২০২২ ৯:০৮ : অপরাহ্ণ
কোটি টাকা চাঁদাবাজির ঘটনায় চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবুর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে কেন্দ্র। সোমবার স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি গাজী মেজবাহুল হোসেন সাচ্চু রাজনীতি সংবাদকে এ তথ্য জানান।
এ চাঁদাবাজির ঘটনায় এক প্রবাসীর দায়ের করা মামলায় গতকাল রোববার দেবুসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করেছেন আদালত।
গত ৯ মার্চ দেবাশীষ নাথ দেবুকে সভাপতি করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার ২০ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এ কমিটি গঠনের আগে দেবাশীষ নাথ দেবুর চাঁদাবাজির ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কিন্তু এরপরও ‘বিতর্কিত’ এ নেতার হাতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বের ভার তুলে দেয় কেন্দ্র।
দলীয় মহলে প্রচার আছে, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার সুবাদে চাঁদাবাজির ঘটনায় অভিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও পার পেয়ে যান দেবাশীষ নাথ দেবু। সমালোচনা-বিতর্ক উপেক্ষা করে তাকে চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতিও নির্বাচিত করা হয়।
এখন দেবুর বিরুদ্ধে এ চাঁদাবাজির মামলায় চার্জ গঠনের পর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নতুন সভাপতি গাজী মেজবাহুল হোসেন সাচ্চু ঘটনাটি তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছেন।
গাজী মেজবাহুল হোসেন সাচ্চু রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘একজনকে বহিষ্কার কিংবা শাস্তি দিতে হলে সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তথ্য-উপাত্ত লাগবে। তাই আমি একটা তদন্ত কমিটি করবো। যদি তদন্তে সে (দেবু) দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক লীগের যারা সাবেক নেতা, যাদের প্রতি আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস আছে তাদেরকে নিয়ে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।’
স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজনীতি সংবাদকে জানান, এ মামলার রায়ের আগেই দেবাশীষ নাথ দেবুকে চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। কারণ রায়ে তিনি দোষী হলে শুধু চট্টগ্রাম মহানগর নয়, পুরো সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে। আর একজন নেতার অপকর্মের দায়ভার সংগঠন কেন নেবে?
এদিকে দেবুর বিরুদ্ধে কোটি টাকা চাঁদাবাজির মামলায় বিচার শুরু হওয়ার পর বিষয়টা নিয়ে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাদের মধ্যে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
নেতা-কর্মীদের অনেকে বলছেন, যদি বিচারে দেবাশীষ নাথ দেবু দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে স্বেচ্ছাসেবক লীগকে অনেকে ‘চাঁদাবাজদের সংগঠন’ বলবে।
নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি অপর সহসভাপতি আবুল হাসনাত মো. বেলাল রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘এ কমিটি তো আজকে হয়নি, মামলাও আজকে হয়নি। উনার (দেবু) ব্যাপারে সব যাচাই-বাছাই করে নিশ্চয় তাকে সভাপতি পদটা দেওয়া হয়েছে। আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না।’
এ ঘটনায় কেন্দ্রের তদন্ত কমিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি সুজিত দাস ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘কেন্দ্র তো এ তদন্ত কমিটি আগেও করতে পারতো। তিনি (দেবু) যে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল তা কি সভাপতি হওয়ার পর কেন্দ্র মেসেজটা পেয়েছে? সম্মেলন ও কমিটি ঘোষণার আগে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এ ঘটনার খবর ছাপা হয়েছিল। কমিটি করার আগে কেন্দ্রের বিষয়টি চিন্তা করা উচিত ছিল। আদালতের রায়ে যদি তিনি (দেবু) দোষী প্রমাণিত হন তাহলে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে।’
নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সালাহ উদ্দিন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘বিষয়টা নিয়ে আমরা খুবই বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। কিন্তু আজকে আমরা এ বিব্রতকর অবস্থায় পড়তাম না, যদি না যোগ্য লোকের হাতে নেতৃত্ব দেওয়া হতো। যারা দীর্ঘদিন ধরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের মধ্যে থেকে যোগ্য লোক খুঁজে বের করা যেতো। আমাদের মূল সংগঠন নগর আওয়ামী লীগের দুই ক্লিন ইমেজ নেতা মাহতাব ভাই-নাছির ভাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। রাজনীতিতে ইমেজটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়।’
তবে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন বললেন ভিন্ন কথা।
তিনি রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, দেবাশীষ নাথ দেবু এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। মামলার রায়ে তিনি বেকসুর খালাস পাবেন।’
মামলার রায়ের আগে আপনি কীভাবে বুঝলেন দেবাশীষ নাথ দেবু খালাস পাবেন?-এ প্রশ্নের জবাবে আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘তিনি তৃণমূল থেকে গড়ে উঠা মানুষ, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছেন। তিনি এ ধরণের চাঁদাবাজিতে জড়াবেন না।’
নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের অনেকে বলছেন, দীর্ঘ ২১ বছর পর সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু একজন বিতর্কিত নেতার হাতে নতুন কমিটির নেতৃত্বের ভার তুলে দিয়ে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হয়েছে। অথচ বিগত কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এইচ এম জিয়াউদ্দিন ও যুগ্ম আহ্বায়ক কে বি এম শাহজাহান দীর্ঘ ২১ বছর নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বে থাকার পরও সংগঠনের বিরুদ্ধে কোনো দুর্নাম হয়নি।
আরও পড়ুন: কোটি টাকার চাঁদাবাজি মামলা: স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা দেবুর বিচার শুরু