শনিবার, ৪ মে, ২০২৪ | ২১ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৪ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা জাতীয়

পদ্মা সেতু: কোথায় কিভাবে ব্যয় হবে টোলের টাকা


রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৫ জুলাই, ২০২২ ৬:৪৭ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক মাস পূর্তি হচ্ছে আজ। ২৫ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর ২৬শে জুন পদ্মা সেতু জনসাধারণের চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়।

সেতু কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, ২৬ জুন থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ পদ্মা সেতুতে চলাচল করা যানবাহনের কাছ থেকে ৭৪ কোটি ২৬ লাখ ৬৩ হাজার ১৫০ টাকা টোল হিসেবে আদায় করেছে। খবর বিবিসির।

এ সময়ের মধ্যে মাওয়া পয়েন্ট ও জাজিরা পয়েন্ট হয়ে পার হয়েছে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৪৬২টি যানবাহন।

সেতুর মাওয়া এবং জাজিরা এই দুই প্রান্তে মোটরসাইকেল বাদে সব ধরণের পরিবহনকে টোল পরিশোধ করে সেতু পারাপার করতে হয়।

বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ এই সেতুটি নির্মাণে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় করা হয়েছে।

সেতু থেকে যানবাহনের কাছ থেকে আদায় করা টোলের মাধ্যমে আসা অর্থ দিয়ে সেতুর নির্মাণ ব্যয় এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হবে।

প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলছেন, টোল থেকে আসা অর্থ কিভাবে কোন খাতে খরচ করা হবে সেসব খাত নির্দিষ্ট করা আছে।

এর মধ্যে ঋণ পরিশোধ, রক্ষণাবেক্ষণ, আদায়কৃত আয়ের ওপর মূল্য সংযোজন কর, টোল আদায়কারীর খরচসহ খাতগুলোতে নিয়মিত অর্থ পরিশোধ করতে হবে কর্তৃপক্ষকে।

শফিকুল ইসলাম বলছেন, এ নিয়মে কোন ব্যত্যয় হবে না, তাতে কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা অনুযায়ী আয় না হলেও, ব্যবস্থা একই।

নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় মূলত অর্থ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষকে ঋণ হিসেবে দিয়েছে। দুই হাজার উনিশ সালের অগাস্টে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঋণ চুক্তি করে সেতু কর্তৃপক্ষ।

শফিকুল ইসলাম বলেছেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে চুক্তি অনুযায়ী তাদের কাছ থেকে পাওয়া ঋণ এক শতাংশ সুদসহ পরিশোধ করতে হবে। এ ঋণ তিন মাস পরপর মোট ১৩৬ কিস্তিতে পরিশোধ করা হবে।

এর বাইরে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী পাঁচ বছরে ৬০০ কোটি টাকার বেশি পরিশোধ করতে হবে তাদের, রক্ষণাবেক্ষণের চার্জ বাৎসরিক ভিত্তিতে প্রদান করা হবে।

রক্ষণাবেক্ষণের পেছনে আয়ের সাত শতাংশের বেশি ব্যয় হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

এছাড়া প্রতি ১০ বছর পরপর সেতুতে মেরামতের দরকার হতে পারে, এমন ধারণা থেকে একটি অর্থ নির্দিষ্ট করে গচ্ছিত রাখা হবে।

আদায় করা টোলের ১৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট হিসেবে যাবে সরকারি কোষাগারে।

সব খরচ মেটানোর পর যে অর্থ উদ্ধৃত্ত থাকবে সে অর্থ জমা থাকবে সেতু কর্তৃপক্ষের কাছে, যার ওপর আয়কর দিতে হবে কর্তৃপক্ষকে।

পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেছেন, এক মাসে পদ্মা সেতু থেকে আদায় হওয়া টোলের যে পরিমাণ তাতে কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট।

তিনি মনে করেন, এ আয়ের পরিমাণ আস্তে আস্তে আরো বৃদ্ধি পাবে।

শফিকুল ইসলাম বলেন, কারণ ব্রিজে তো লোক বাড়ছেই প্রতিদিন। কিন্তু এ নিয়ে একদম সঠিক প্রজেকশন করা যাচ্ছে না, কারণ পরিকল্পনা অনুযায়ী পদ্মা ব্রিজ আরো আগেই উদ্বোধন হবার কথা ছিল।

তিনি বলেন, আয়-ব্যয়ের যে পূর্বাভাস করা হয়েছে, সেই হিসাবটাও ২০১৮ সালের যানবাহন এবং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের পরিস্থিতি অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এখন রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, আর সেতু উদ্বোধনের পর থেকে যানবাহনের সংখ্যা তো বাড়ছেই, ফলে আয়ও বাড়বে।

এজন্য পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক মনে করেন, পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় তুলে আনার জন্য যে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, তার আগেই সেটি করতে তারা সমর্থ হবেন বলে তিনি আশাবাদী।

পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক বলেন, যখন সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়, তখন একটা পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল যে দিনে কত গাড়ী যাতায়াত করবে, এবং সেটা হিসাব করেই বলা হইছিল যে ২৫ থেকে ২৬ বছরের মধ্যে টোলের আয় থেকে নির্মাণ ব্যয় তুলে আনা যাবে। তো এখন পর্যন্ত দেখে যেটা মনে হচ্ছে যে ২৫/২৬ বছর লাগবে না, তার আগেই আমরা টাকা তুলে আনতে পারবো।

পদ্মা সেতু থেকে আয়ের যে সরকারি পূর্বাভাস, তাতে বলা হয়েছিল যানবাহন চলাচল করলে পদ্মা সেতু থেকে প্রথম বছর আয় হবে ১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা।

ছাব্বিশে জুন থেকে ২৪শে জুলাই পর্যন্ত মাওয়া পয়েন্ট ও জাজিরা পয়েন্ট দিয়ে পদ্মা সেতু পার হয়েছে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৪৬২টি যানবাহন।

শুরুতে সেতু কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন যানবাহনের জন্য যে টোল নির্ধারণ করে, সে অনুযায়ী মোটরসাইকেলের জন্য ১০০ টাকা, গাড়ি বা জিপের ক্ষেত্রে ৭৫০ টাকা, পিক-আপ ভ্যানের ক্ষেত্রে ১২০০ টাকা, মাইক্রোবাস ১৩০০ টাকা, বড় বাসের ক্ষেত্রে খরচ ৪০০ টাকা , মাঝারি বাসের ক্ষেত্রে খরচ হবে দুই হাজার টাকা।

কিন্তু উদ্বোধনের একদিন পর থেকে পদ্মা সেতুর ওপর মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়।

পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর প্রথম দিনে সেতু দুই প্রান্ত দিয়ে ৫১ হাজার ৩১৬টি যানবাহন চলাচল করে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এসব যানবাহন থেকে প্রথমদিন টোল আদায় করা হয়েছিল ২ কোটি ৯ লাখ ৪০ হাজার ৩০০ টাকা।

চালু হওয়ার পরে প্রথম সপ্তাহে টোল আদায় হয় ১১ কোটি ৯১ লাখ ৮ হাজার ৮২০ টাকা।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর