দীর্ঘ ২১ বছর পর সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছসেবক লীগের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু এই কমিটি গঠনের প্রায় ৩ মাসের মধ্যেই সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে নানা কারণে অস্বস্তি ও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
৩ মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না হওয়া, তৃণমূলে সাংগঠনিক কোনো কর্মকান্ড না থাকা এবং সংগঠনের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবুর বিরুদ্ধে কোটি টাকা চাঁদাবাজির মামলা আদালতে বিচারাধীন থাকা নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অস্বস্তি ও অস্থিরতা বিরাজ করছে।
গত ৯ মার্চ দেবাশীষ নাথ দেবুকে সভাপতি ও আজিজুর রহমান আজিজকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার ২০ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি ৪ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদও গঠন করা হয়।
কেন্দ্র থেকে এ আংশিক কমিটি ঘোষণার সময় বলা হয়েছিল, ৭ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। কিন্তু ৩ মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়নি।
নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবুকে নিয়ে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। দেবুর বিরুদ্ধে কোটি টাকা চাঁদাবাজির মামলাটি আদালতে এখনও বিচারাধীন থাকায় সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের একজন কর্মী রাজনীতি সংবাদকে বলেন, সংগঠনের সভাপতির বিরুদ্ধে কোটি টাকা চাঁদাবাজির মামলাটি নিয়ে আমরা বিব্রতকর অবস্থায় আছি। এ মামলায় যদি তার সাজা হয় তাহলে শুধু সংগঠনের নয়, সকল নেতা-কর্মীদের ভাবমূর্তি একেবারে শেষ হয়ে যাবে।
দেবুর বিরুদ্ধে কোটি টাকা চাঁদাবাজির মামলাটি বিচারাধীন অবস্থায় কীভাবে তাকে নেতৃত্বের দায়িত্ব দেওয়া হলো তা নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের অনেকে এখন প্রশ্ন তুলছেন।
এ বিষয়ে জানতে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবুর সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘বিষয়টা নিয়ে কর্মীরা সবাই আমাকে ফোন করে বিরক্ত করছে। তিনি (দেবু) তো আমাকে বলেছেন, অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুলের মাধ্যমে বাদীর সঙ্গে বিষয়টি সমাধান করে ফেলেছেন। যদি এটা সমাধান না হয় তাহলে তো সমস্যা হবে।’
অভিযোগ পাওয়া গেছে, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের সাংগঠনিক কোনো কর্মকান্ডে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। এতে উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে কার্যনির্বাহী কমিটির নেতাদের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বের প্রতি অসন্তুষ্ট। তারা নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বের সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের উপদেষ্টাদের অভিযোগ, কমিটি গঠনের পর সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সামাজিক কার্যক্রমে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু তৃণমূলে তাদের সাংগঠনিক কোনো কর্মকান্ড নেই। ৩ মাসেও হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এতে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাদেক হোসেন পাপ্পু রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘মহানগর কমিটির নবাগত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে থানা-ওয়ার্ডের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের এখনো কোনো সম্পর্ক গড়ে উঠেনি। এটা নিয়ে তৃণমূলের এসব নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। মহানগর কমিটির নবাগত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক না থাকায় তারা কমিটিতে স্থান পাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যের বিষয়।’
উপদেষ্টা পরিষদের অপর সদস্য নুরুল কবীর রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘মহানগর কমিটির সাংগঠনিক কর্মকান্ড সম্পর্কে আমাদেরকে কিছুই জানানো হয় না। কী কারণে আমাদের উপদেষ্টা করা হলো আর উপদেষ্টার কাজ কী সেটা আমরা জানি না।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কমিটি হওয়ার পর দেখলাম, নেতারা কোথাও আগুন লাগলে সেখানে গিয়ে ত্রাণ দিয়েছে, রোজায় ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেছে। কিন্তু এগুলো তো সাংগঠনিক কর্মকান্ডের অংশ না।’
উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে দূরত্ব প্রসঙ্গে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘উপদেষ্টাদের সঙ্গে যদি আমাদের পরামর্শ করার প্রয়োজন পড়ে তখন করবো। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তো বেশি। তাদেরকে প্রোগ্রামে দাওয়াত দিলে কোথায় বসাবো? যদিও ইতোমধ্যে তাদেরকে কয়েকটি প্রোগ্রামে আমন্ত্রণ করেছিলাম।’
এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। শিগগিরই কেন্দ্র থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।’
তৃণমূলে সাংগঠনিক কর্মকান্ড না থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আজিজুর রহমান আজিজ বলেন, ‘আমাদের তো এখনো সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। সামনে ওয়ার্ড ভিত্তিক সদস্য সংগ্রহ শুরু হবে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে আমরা থানা-ওয়ার্ডে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করবো।’