রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৮ মে, ২০২২ ৪:২৯ : অপরাহ্ণ
বিতর্কের মুখে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে রেলের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শক (টিটিই) শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের পর শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি টিটিই হিসেবে রেলের রাজস্ব আদায়ের জন্য এবং দেশের জন্য কাজ করে থাকি। তাই আমার দায়িত্ব কর্তব্য যতটুকু, রেলের জন্য আমি যা করতে পারি তা করবো।’
আজ রোববার দুপুরে পাবনার পাকশী পশ্চিমাঞ্চল বিভাগীয় রেলওয়ে কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের কাছে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন।
শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে আমি জানতে পারছি, আমি নাকি নেশাগ্রস্ত। শুনে আমি নিজেও অবাক হয়ে যাচ্ছি। আমি পারতপক্ষে এককাপ চাও খাই না। বিড়ি সিগারেট খাই না। নেশাগ্রস্ত তো দূরের কথা।’
এর আগে কখনও তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়নি উল্লেখ করে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এটাই আমার প্রথম সাময়িক বরখাস্ত। যেদিন আমি ওই রাতে গাড়িতে দায়িত্ব পালন করেছি, সেদিন আপ অ্যান্ড ডাউনে ৭৮ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় করে জমা দিয়েছি। যদি মানসিক বিকারগ্রস্ত হতাম তাহলে এতো আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারতাম না।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে পাবনার ঈশ্বরদী রেল জংশন থেকে টিকিট ছাড়া ট্রেনে ওঠেন ‘রেলপথমন্ত্রীর আত্মীয়’ পরিচয়দানকারী ৩ যাত্রী। টিকিট না কাটলেও তারা রেলের এসি কেবিনের সিট দখল করেন। এতে রেলের টিটিই তাদের জরিমানা করেন।
আরও পড়ুন: নতুন বিয়ে করেছি, আমার স্ত্রী বুঝে উঠতে পারে নাই: রেলমন্ত্রী
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, বিনা টিকিটে ভ্রমন করা ওই ট্রেনের এসি কেবিনে রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আক্তার মনির মামা মরহুম আব্দুর রহমানের ছেলে ওমর (১৮); আরেক মামা মরহুম জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে হাসান (১৭); এবং পাশের বাড়ির ইমরুল কায়েস প্রান্ত (২৬) অবস্থান করছিলেন।
পরে ওই ৩ যাত্রী তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয় বলে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন।
সেই অভিযোগের ভিত্তিতে টিটিই শফিকুল ইসলামকে বৃহস্পতিবার রাতেই সাময়িক বরখাস্ত করে রেল কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর ফোনেই বরখাস্ত হয় টিটিই শফিকুল
বিনা টিকিটে এসি কেবিনে ওঠে মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেয়া ইমরুল কায়েস প্রান্তের মা ইয়াসমিন আক্তার নিপা গতকাল শনিবার পাবনায় স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ছেলেদের সঙ্গে ‘অসদাচরণ’ করার কারণে টিটিইকে তিনি বদলি করতে মন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আক্তারকে বলেছিলেন। তখন শাম্মী তাকে জানান, বদলি নয়, বরখাস্তই করে দিচ্ছেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি রেলের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোন করে বরখাস্ত করতে বলেন।
এ ঘটনাকে ‘ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত’ উল্লেখ করে শনিবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ‘ন্যায়নিষ্ঠভাবে দায়িত্বপালনের কারণে পুরস্কার পাওয়ার বদলে টিটিইকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এমন সিদ্ধান্তে দেশবাসীর কাছে এ বার্তাই পরিষ্কার হয়েছে যে, ক্ষমতাধরেরাই শুধু নন, তাদের প্রভাব বলয়ের মধ্যে থাকা আত্মীয়-পরিজনদের জন্যও আইন প্রযোজ্য নয়।’
এরপরই টিটিই শফিকুল ইসলামের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন রেলমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: বিনা টিকিটে ভ্রমণ করা যাত্রীরা রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর আত্মীয়