যিকরু হাবিবীল ওয়াহেদ প্রকাশের সময় :১৬ এপ্রিল, ২০২২ ১০:৩১ : অপরাহ্ণ
চাঁদাবাজি এবং কিশোর গ্যাং শব্দ দুটি এখন মূর্তিমান আতঙ্কের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অলি গলিতে ছোট দোকান করতে গেলে, কেউ বিল্ডিং নির্মাণ করতে গেলে, মালামাল আনতে নিতে কিংবা রাখতে গেলে চাঁদাবাজদের চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
চাঁদা না দিলে যেন কিছুই করা যাবে না, তা যেন এখন রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর অন্যদিকে কিশোর গ্যাং এর উৎপাত এতোবেশি বেড়ে গেছে যা প্রতিনিয়ত খবরের শিরোনাম হচ্ছে।
এককথায় চাঁদাবাজি এবং কিশোর গ্যাং শব্দ দুটি একটি আরেকটির সমার্থক হয়ে উঠেছে।
অলি-গলির মুখে, বাজার-মার্কেটের আশপাশে চিপাচাপায় দশ বিশজন জটলা বেঁধে থাকে, কিছু হতে না হতেই দোকানির উপর, পথচারী কিংবা টার্গেটেড মানুষের উপর হামলে পড়ে।
ইভটিজিং চুরি চামারি হামলা ডাকাতি লুটপাট দখল খুন অপহরণ এমন কোন অপরাধ অনৈতিক কাজ নেই যা কিশোর গ্যাংগুলো করছে না।
এসব অপরাধ অনৈতিক কাজ করতে গিয়ে অনেকক্ষেত্রেই হত্যার মতো জঘন্য বেদনাদায়ক ঘটনা পর্যন্ত ঘটায় এসব কিশোর গ্যাংগুলো।
একটি ঘটনা ঘটলে প্রশাসন একটু নড়েচড়ে বসে, কয়েকদিন ধরপাকড় করে। পরক্ষণে শিথিলতা দেওয়ায় কিশোর গ্যাংগুলো আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠে ব্যাপকহারে।
প্রচার আছে এসব কিশোর গ্যাংগুলোকে মদদ দিয়ে থাকে কথিত বড়ভাই নেতা পাতিনেতারা। আর এসব কথিত বড়ভাই নেতা পাতিনেতাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেন রাজনৈতিক কিছু পদবীদারী নেতা। এভাবেই কিশোর গ্যাং সমাজের গভীর থেকে গভীরে শিকড় গাড়ছে।
জনৈক প্রবাসী শাহ আলম (ছদ্মনাম) তাঁর কষ্টার্জিত টাকায় গত ৫/৭ বছর আগে একখণ্ড জমি কেনেন চট্টগ্রাম শহরে। যাতে বাড়ি করে জীবনের শেষ বেলায় পরিবার সন্তান সন্ততি নিয়ে একসাথে থাকতে পারেন সেই আশায়। করোনা পরবর্তী জীবনযাত্রা একটু স্বাভাবিক হওয়াতে শাহ আলম সিদ্ধান্ত নিলেন তাঁর কেনা জায়গাতে একটি বাড়ি নির্মাণ করবেন, যদিও নির্মাণ সামগ্রীর দাম আকাশচুম্বি। তবুও তিনি সাহস করলেন বাড়ি নির্মাণের। বিভিন্ন কাঠখড় পুড়িয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমোদন ইঞ্জিনিয়ারিং প্ল্যান নিয়ে যেই মাত্র কাজে হাত দিতে গেলেন সেই মাত্র বিভিন্ন বড়ভাই অমুক তমুকের নামে কল আসতে থাকে। ওরা বলেন, “আপনি আমাদের এলাকায় বাড়ি করবেন আমাদের খরচ পাতি দিতে হবে, মালামাল আমরা সরবরাহ করবো, না হয় আপনি বাড়ি নির্মাণ করতে পারবেন না, আমাদের খরচ পাতি দিতে না চাওয়াতে আপনার পাশে ওমুক প্রজেক্টে গোলাগুলি পর্যন্ত হয়েছে ইত্যাদি হুমকিমূলক কথাবার্তা।”
এসব কথাবার্তায় সোজাসাপ্টা প্রবাসী শাহ আলম অসম্ভব ভয় পেয়ে গেলেন। তাঁর মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। ভয়ে কাতর শাহ আলম এতোদিন জানতেন প্রবাসীদের আলাদা কদর আছে দেশে। সব জায়গায় প্রবাসীরা সহযোগিতা পান। কিন্তু প্রবাসী শাহ আলমের বিশ্বাসে যেন জল ঢেলে দিলেন চাঁদাবাজ কিশোর গ্যাংয়ের এসব বড়ভাই নেতা পাতিনেতারা।
প্রবাসী শাহ আলম বিভিন্ন জায়গায় ধর্না দিয়ে কোন সুরাহা তো পেলেন না, উল্টো শুনেছেন চাঁদাবাজ এসব কিশোর গ্যাং লিডারদের সাথে বিভিন্ন নেতার হাত রয়েছে, তাদের সেল্টার দেন ওসব পদবীদারী নেতারা, থানায় অভিযোগ দিলেও নাকি তাদের কিছুই হয়না, উল্টো সমস্যা আরো বাড়ে; তাদের সাথে পেরে উঠবে না ইত্যাদি। সব কথা শুনে প্রবাসী শাহ আলম খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এতো গেল একটি ঘটনা মাত্র। এরকম অহরহ ঘটনা ঘটে চলছে পুরো নগরজুড়ে।
তাছাড়া, সড়ক মহাসড়কের চাঁদাবাজি এখন ওপেন সিক্রেট। প্রতি কেজি গরুর মাংসের মূল্য হওয়ার কথা ৩০০-৩৫০ টাকা, পথে পথে চাঁদা দেওয়ার কারণে প্রতি কেজি গরুর মাংস ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে ৭০০-৭৫০ টাকায়। যার একমাত্র কারণ সড়কের চাঁদাবাজি।
এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যেসব পণ্য সরবরাহ হয় সেসব পণ্যের দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণও সড়ক মহাসড়কের চাঁদাবাজি।
চাঁদাবাজ এবং কিশোর গ্যাংগুলো যেকোনো জাতীয় উপলক্ষ কিংবা স্থানীয়, জাতীয় নির্বাচনের আগে বেশ বেপরোয়া হয়ে উঠে।
সামনে ঈদ, এর মাস দুয়েক পর কোরবানির ঈদ এবং বছর দেড়েক পর জাতীয় নির্বাচনের সময় হওয়াতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত হবে এখন থেকেই চাঁদাবাজদের, কিশোর গ্যাংগুলো এবং তাদের গডফাদারদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করে চাঁদাবাজ ও কিশোর গ্যাংগুলোর শিকড় উপড়ে ফেলা। নচেৎ এদের কারণে সাধারণ মানুষের জান মালের ব্যাপক ক্ষতি হবে এবং দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যাবে।
লেখক: সংগঠক ও কলামিস্ট