রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১০ এপ্রিল, ২০২২ ২:১১ : পূর্বাহ্ণ
ভাগ্য নির্ধারণী অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটিতে হেরে গেলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
ভোটাভুটিতে ৩৪২ সদস্যের মধ্যে ১৭৪ সদস্য অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। প্রস্তাব পাসের জন্য ১৭২ ভোট দরকার ছিল।
পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদে একতরফা অনাস্থা ভোটে কোনো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিদায় ঘটলো ইমরান খানের।
বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত ২টার দিকে পাকিস্তান পালার্মেন্টে এই ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় পরিষদের এই সেশনটি পরিচালনা করেন পাকিস্তান মুসলিম লীগের (নওয়াজ) আয়াজ সাদিক। ভোটাভুটি শেষে তিনি ফল ঘোষণা করেন। খবর ডনের।
ভোটের পর অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে ইমরান খানকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে।
রাতের অন্ধকারের মতোই ইমরানের রাজনৈতিক জীবনেও নেমে এলো ঘোর অমানিশা।
গুঞ্জন চলছে, ইতিমধ্যেই হেলিকপ্টার করে ইসলামাবাদ ছেড়েছেন তিনি।
ইমরান খান ছিলেন পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী। তার ক্ষমতাচ্যুতির মধ্য দিয়ে দেশটির নির্বাচিত একজন প্রধানমন্ত্রীও তার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারলেন না।
এর আগে শনিবার রাতে এই ভোটাভুটি শুরুর কয়েক মিনিট আগে জাতীয় পরিষদের স্পিকার আসাদ কাইসার নিজের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এ সময় তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হতে তিনি পারবেন না। পরে তিনি জানান জাতীয় পরিষদের চলমান সেশন প্যানেল চেয়ারম্যান আয়াজ সাদিক পরিচালনা করবেন।
আসাদ কাইসার বলেন, এটা জাতীয় দায়িত্ব এবং এটা সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত। আমি প্যানেল চেয়ারম্যান আয়াজ সাদিককে এই সেশন পরিচালনার জন্য বলবো।
এরপর সাদিক চেয়ারে আসন গ্রহণের পর নিজের দলের পক্ষে থাকা এবং ‘সম্মানজনক প্রস্থানের’ পথ বেছে নেওয়ায় পদত্যাগ করা স্পিকার আসাদ কাইসারের প্রশংসা করেন।
সাদিক বলেন, আমাদের সবার সঙ্গে তার (কাইসার) খুব ভালো সম্পর্ক ছিল, তার সঙ্গে কাজের সম্পর্ক ছিল। তিনি বিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে মর্যাদার সঙ্গে সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করেছেন।
পরে সাদিক ভোটাভুটি শুরু হচ্ছে বলে পার্লামেন্টের সদস্যদের জানান এবং পরে পার্লামেন্টের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এরপর স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৫৮ মিনিটে অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোট শুরু হয় এবং প্রস্তাবের পক্ষে থাকা সদস্যদের সাদিকের বাঁ দিকে থাকা গেট দিয়ে বের হওয়ার জন্য বলা হয়।
এরপর তিনি নিয়ম অনুযায়ী ওই সেশন মুলতবি ঘোষণা করেন। কারণ নিয়ম অনুযায়ী চলমান সেশন মধ্যরাত পার হওয়ার পর চলতে পারে না।
এরপর রাত ১২টা ২ মিনিটের দিকে জাতীয় কোরআন তেলওয়াত ও নাতের মাধ্যমে জাতীয় পরিষদের নতুন সেশন শুরু হয়।
এদিকে পদত্যাগ ঘোষণার আগে স্পিকার আসাদ কাইসার বলেন, মন্ত্রিপরিষদ থেকে তিনি ‘গুরুত্বপূর্ণ নথি’ পেয়েছেন। পরে তিনি নথিটি বিরোধী দলের নেতা এবং পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতিকে দেখার আমন্ত্রণ জানান।
আসাদ কাইসার বলেন, আমাদের আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের পক্ষে আমাদের দাঁড়ানো প্রয়োজন। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে স্পিকার পদে আমি থাকতে পারবো না। পদত্যাগ করবো।
এর আগে আসাদ কাইসার জাতীয় পরিষদ সদস্যদের ভোট দেওয়ার অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী ইমরানের সঙ্গে গত ৩০ বছর ধরে তার সম্পর্ক। তাই তিনি ভোটাভুটি হতে দিতে পারেন না।
প্রসঙ্গত, গত ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দেয় পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ। অনাস্থা প্রস্তাবটি সংবিধানের পঞ্চম অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি এই অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করেন।