রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪ | ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১০ জিলকদ, ১৪৪৫

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালায় তারাবির দুই হাফেজকে বাদ দেওয়া নিয়ে মুসল্লিদের ক্ষোভ


নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :২ এপ্রিল, ২০২২ ২:০১ : অপরাহ্ণ
চট্টগ্রাম জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ
Rajnitisangbad Facebook Page

এবার পবিত্র রমজান মাসে চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে খতমে তারাবির দুই হাফেজকে বাদ দেওয়া নিয়ে মুসল্লিদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

এ মসজিদে গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে তারাবি পড়ানো দুই হাফেজকে কোনো কারণ ছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাদ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বাদ দেওয়া দুই হাফেজ হলেন-মোহাম্মদ সোলায়মান ও মোহাম্মদ ইলিয়াছ।

জানা গেছে, জমিয়তুল ফালায় গত ২১ বছর ধরে পাঁচজন হাফেজ খতমে তারাবির সালাত পড়িয়েছেন। কিন্তু এ বছর ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক তৌহিদুল আনোয়ার দুই হাফেজকে বাদ দিয়ে তিনজনকে দিয়ে তারাবির সালাত পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।

এই তিন হাফেজ জমিয়তুল ফালায় ইমাম ও মোয়াজ্জিন হিসেবে কর্মরত আছেন। বাদ দেওয়া দুই হাফেজকে ২১ বছর আগে ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক তৌহিদুল আনোয়ার রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘পাঁচজন হাফেজের তো প্রয়োজন নেই। তিনজন যথেষ্ট। তাই বাইরের দুজনকে বাদ দিয়েছি। তাছাড়া এবার মসজিদে কর্মরত ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের মাধ্যমে তারাবির নামাজ পড়ানোর জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

আরও পড়ুন: বিশ্বকাপে স্পেন-জার্মানি এক গ্রুপে, দেখে নিন মেসি-নেইমারদের সামনে কোন দল

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জমিয়তুল ফালায় দুই হাফেজকে বাদ দেওয়া হলেও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিয়ন্ত্রনাধীন নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত নুর ইসলাম ও নুর উল্লাহ নামে দুই হাফেজকে বাদ দেওয়া হয়নি। তারা প্রতি বছরের মতো এবারও সেখানে তারাবির নামাজ পড়াবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, ‘জমিয়তুল ফালার দুই হাফেজকে মৌখিকভাবে ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের দুই হাফেজকে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।’

এটা যদি অনিয়ম হয়, তাহলে জমিয়তুল ফালার দুই হাফেজ দীর্ঘ দুই দশক ধরে কীভাবে তারাবির নামাজ পড়িয়ে আসছেন?

এ প্রশ্নের জবাবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক বলেন, ‘আসলে মসজিদের কমিটির সভায় বাইরের দুই হাফেজকে এবার না রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর বাইরে আমার আর বলার কিছু নেই।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অতিরিক্ত হাফেজের অজুহাত তুলে জমিয়তুল ফালায় দুজনকে বাদ দেওয়া হলেও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এবার চারজন হাফেজ তারাবি নামাজ পড়াবেন।

আরও পড়ুন: রমজান মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যতক্ষণ চলবে ক্লাস

জমিয়তুল ফালার মুসল্লিদের প্রশ্ন, জমিয়তুল ফালায় তিনজন হলে বায়তুল মোকাররমে কেন চারজন হাফেজ তারাবি পড়াবেন? তাছাড়া মক্কা শরীফের পবিত্র মসজিদুল হারামেও সাতজন হাফেজ তারাবির নামাজ পড়ান।

জমিয়তুল ফালাহ মুসল্লি কল্যাণ সংস্থার সভাপতি বদিউল আলম রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘মুসল্লিরা পাঁচজন হাফেজকে দিয়ে তারাবির নামাজ পড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। কিন্তু ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক মুসল্লিদের মতামত অগ্রাহ্য করে দুজন হাফেজকে বাদ দিয়েছেন। অথচ তারা খুব ভালো হাফেজ ছিলেন। তাদের তারাবি মুসল্লিরা খুবই পছন্দ করতেন। মক্কা শরীফে কি সাতজন হাফেজ তারাবির নামাজ পড়ান না? এটা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত। মুসল্লিরা সবাই বিষয়টা নিয়ে ক্ষুব্ধ।’

জানা গেছে, প্রতি বছর রমজান মাসে জমিয়তুল ফালায় হাজারো মুসল্লি তারাবির নামাজ আদায় করেন।

জানা গেছে, জমিয়তুল ফালায় প্রতি বছর রমজান মাসে তারাবির হাফেজদের হাদিয়া প্রদানের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে থোক বরাদ্দের পাশাপাশি মসজিদের মুসল্লিদের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহ করা হয়। মুসল্লিদের থেকে চাঁদা সংগ্রহ হয় আনুমানিক ৩-৪ লাখ টাকা। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের থোক বরাদ্দের সঙ্গে মুসল্লিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা চাঁদা সমন্বয় করে পাঁচজন হাফেজের মধ্যে বণ্টন করা হতো।

আরও পড়ুন: করোনার নতুন রূপ এক্সই! ওমিক্রনের তুলনায় আরও বেশি সংক্রমণ ক্ষমতা

অভিযোগ উঠেছে, জমিয়তুল ফালায় ইমাম ও মোয়াজ্জিন হিসেবে কর্মরত তিন হাফেজদের তারাবির হাদিয়া বেশি পরিমাণে প্রদান করার জন্য বাইরে থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত দুই হাফেজকে ষড়যন্ত্র করে এবার বাদ দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে হাফেজ মোহাম্মদ সোলায়মান রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘২০০২ সালে ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। গত ১৭ মার্চ ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক মৌখিকভাবে জানিয়ে দেন, এবার রমজানে আমাকে রাখা হবে না। আমি উনাকে বললাম, হঠাৎ এভাবে বাদ দিলে কোথায় যাবো? উনার কাছে বাদ দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাইরে থেকে হাফেজ রাখতে হলে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে নিয়োগ দিতে হবে। তখন আমি উনাকে বললাম, তাহলে আন্দরকিল্লা মসজিদে বাইরের দুজন হাফেজ তো এবার তারাবি পড়াবেন? আমরা কী দোষ করলাম? তিনি এ প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি।’

হাফেজ মো. ইলিয়াছ রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘২০০১ সালে জমিয়তুল ফালায় ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে তারাবির জন্য আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। গত ২১ বছর ধরে সুনামের সাথে তারাবির নামাজ পড়িয়ে এসেছি। অথচ কোনো কারণ ছাড়া আমাকে বাদ দেওয়া হলো? আমাদের প্রতি এটা কেমন অবিচার?’

আরও পড়ুন: ২ কোটি টাকা ব্যয়ে দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণ করলেন নায়িকা রোজিনা

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর