নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :১২ মার্চ, ২০২২ ৮:৩১ : অপরাহ্ণ
দীর্ঘ ২১ বছর পর স্বেচ্ছাসেবক লীগ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার ২০ সদস্য বিশিষ্ট নতুন যে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, তা নিয়ে সংগঠনটির দুপক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে নানা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের দুই বলয় আ জ ম নাছির উদ্দীন ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারীরা আশা করেছিলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ ভাগাভাগি হবে।
সম্মেলনের আগে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্র থেকেও সংগঠনের চট্টগ্রাম মহানগরের নেতাদের এমন আভাস দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু গত বুধবার (১০ মার্চ) রাতে কেন্দ্র থেকে ঘোষিত কমিটির তালিকা দেখে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা বিস্মিত হন!
কেননা কমিটির দুই অতি গুরুত্বপূর্ণ পদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বাগিয়ে নেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারীরা।
ঘোষিত কমিটির সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ দুজনই নওফেলের বলয়ের।
সিনিয়র সহ-সভাপতিসহ ৮টি পদে স্থান দেওয়া হয়েছে নাছিরের অনুসারীদের।
সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাড়া আরও ৪টি পদে স্থান দেওয়া হয়েছে নওফেলের অনুসারীদের।
আ জ ম নাছিরের অনুসারী নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এই কমিটি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
তারা এই কমিটিকে একতরফা বলে আখ্যায়িত করছেন।
ওই পক্ষের নেতা-কর্মীরা বলছেন, কমিটির একক কর্তৃত্ব থাকবে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের হাতে। যারা দুজনই একপক্ষের। ফলে অপরপক্ষের নেতা-কর্মীরা কমিটিতে কোণঠাসা হয়ে থাকবে।
কমিটি নিয়ে আ জ ম নাছিরের অনুসারীরা অসন্তুষ্ট হলেও খুশিতে আত্মহারা নওফেলের অনুসারীরা।
আ জ ম নাছিরের অনুসারী কেউ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে স্থান পাওয়ায় তাদের আনন্দের মাত্রা বাড়িয়েছে।
কিন্তু স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি ঘোষণার পর চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অঙ্গনে নেতা-কর্মীদের অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, কেন্দ্র কেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ দুটি দুপক্ষের মধ্যে ভাগাভাগি না করে একতরফা করেছে?
কমিটি গঠনের সাথে সম্পৃক্ত স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্র কমিটি ঘোষণা করলেও নেতৃত্ব নির্বাচনে তাদের কোনো ভূমিকাই ছিল না।
কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের ছয় শীর্ষ নেতার সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে।
এই ছয় নেতা হলেন-আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রামের সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী এবং সিডিএ চেয়ারম্যান ও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জহিরুল আলম দোভাষ।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজনীতি সংবাদকে জানান, সম্মেলনের পরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আমরা নগর আওয়ামী লীগের দুপক্ষের অনুসারী দুই নেতাকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করি। কিন্তু পরে এ নিয়ে নানা জটিলতা দেখা দেয়। কেন্দ্রের ওপর নানা চাপ আসে। এতে নেতৃত্ব চূড়ান্ত করা নিয়ে বেকায়দায় পড়ে যায় কেন্দ্র। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়, চট্টগ্রামের শীর্ষ নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি গঠন করতে। ফলে চট্টগ্রামের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি ঘোষণা করা হয়।
ওই কেন্দ্রীয় নেতা জানান, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের জন্য চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের চার শীর্ষ নেতাই সুপারিশ করেছেন। তাদের মতামতের বাইরে কারো কিছুই করার ছিল না।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ রাজনীতি সংবাদের কাছে বিষয়টি অকপটে স্বীকার করলেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরের নেতৃত্ব আমরা নির্বাচন করিনি। চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছে। যেসব প্রার্থীর পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত পেয়েছি আমরা তাদের বেছে নিয়েছি। আর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা দুজনই দুটি পদের জন্য যোগ্য বলে মনে করি।
উল্লেখ্য, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২০ সদস্যের কমিটিতে স্থান পাওয়া ১১ জন সহ-সভাপতি হলেন-হেলাল উদ্দিন, আবুল হাসনাত মোহাম্মদ বেলাল, আ্যাডভোকেট তসলিম উদ্দিন, সুজিত দাশ, দেলোয়ার হোসেন ফরহাদ, মনোয়ার জাহান মনি, নাজমুল হুদা শিপন, মো. আজিজ মিছির, আজাদ খান অভি, আবদুর রশিদ লোকমান এবং মিনহাজুল আবেদীন চৌধুরী সায়েম।
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে স্থান পেয়েছেন-মো. সাইফুদ্দিন, আব্দুল্লাহ্ আল মামুন এবং সরফরাজ নেওয়াজ চৌধুরী রবিন।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে স্থান পাওয়া তিনজন হলেন-মাছুদ খান, সালাহ উদ্দীন শেরশাহ এবং দেবাশীষ আচার্য্য।
প্রচার সম্পাদক পদে স্থান পেয়েছেন তাসাদ্দেক নূর চৌধুরী তপু।
গত বছরের ১৯ জুন নগরীর লালখান বাজার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রি-বার্ষিক ভার্চুয়াল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
২০০১ সালের ১৪ জুলাই অ্যাডভোকেট এইচ এম জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন হয়েছিল।
এটি ছিল মহানগরে সংগঠনটির প্রথম কমিটি।
সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পর সম্মেলন আয়োজনের নিয়ম রয়েছে।
কিন্তু ওই আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর গত ২০ বছরেও চট্টগ্রাম মহানগরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন হয়নি।
দীর্ঘ ২১ বছর পর চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটি গঠন করা হলো।