বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চলমান করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় টিকা নেয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের ৩ বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি এই আহ্বান জানান।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিজয়ী হয়।
এরপর ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো (টানা তিনবার) প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে গভীর সঙ্কটের মধ্য দিয়ে আমাদের বিগত ২০২০ এবং ২০২১ সাল অতিক্রম করতে হয়েছে। সেই সঙ্কট এখনও কাটেনি। এরই মধ্যে আবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওমিক্রন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। আমাদের এখনই সাবধান হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যারা টিকা নেননি, তাদের দ্রুত তা নেয়ার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি।’
এখন পূর্ণোদ্যমে কোভিড-১৯ টিকাদানের কাজ চলছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘চলতি মাস থেকে গণটিকাদানের মাধ্যমে প্রতিমাসে ১ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনার কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১২ কোটি ৯৫ লাখ ৮০ হাজার ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। গতমাস থেকে বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু হয়েছে। বর্তমানে আমাদের হাতে সাড়ে ৯ কোটিরও বেশি ডোজ টিকা মজুদ আছে।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘বিভিন্ন নীতি-সহায়তা এবং উদার-নৈতিক আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ দেয়ার মাধ্যমে অর্থনীতির চাকা সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমরা ২৮টি প্যাকেজের মাধ্যমে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। এতে প্রায় ৬ কোটি ৭৪ লাখ মানুষ উপকৃত হয়েছেন। আর প্রতিষ্ঠান উপকৃত হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার অভিঘাত মোকাবিলা করে গত অর্থবছরে আমাদের জিডিপি ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রক্ষেপণ অনুযায়ী জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২১-এ মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলারে।’
বিগত ১৩ বছরে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে। ২০২২ সাল বাংলাদেশের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের একটি মাইলফলক বছর হবে। জুন মাসে আমরা উদ্বোধন করতে যাচ্ছি বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু। এছাড়া এ বছরের শেষ নাগাদ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অংশে মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি আমরা। ইতোমধ্যে এই অংশে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। মেট্রোরেল রাজধানী ঢাকার পরিবহন খাতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। এছাড়া আগামী অক্টোবরে চট্টগ্রামে কর্ণফুলীর নদীর তলদেশ দিয়ে চালু হবে দেশের প্রথম টানেল।’
অন্যান্য বৃহৎ প্রকল্পের কাজও পুরোদমে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালের এপ্রিল নাগাদ চালু হবে। এটি হলে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুত সরবরাহ বাড়বে। মানুষে জানমালের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছে সরকার।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের বর্তমান এবং আগামী দিনের সব কার্যক্রমের লক্ষ্য হচ্ছে নতুন প্রজন্মের জন্য একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত বিনির্মাণ। অফুরন্ত জীবনীশক্তিতে বলীয়ান তরুণ প্রজন্মই পারে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে একটি প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে। যে স্বপ্ন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন। তারুণ্যের শক্তিই পারবে দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে।’
দুর্নীতিবাজ যে দলেরই হোক, ছাড় নয় উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘নিজ দলের কেউ দুর্নীতি করলেও রক্ষা পাবে না। আমরা কাউকে ছাড় দেব না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তবে স্বাধানতাবিরোধী চক্র দেশের উন্নয়ন রুখে দিতে ষড়যন্ত্র করছে। তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। অন্যথায় উন্নয়ন ব্যাহত হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কঠোর হস্তে জঙ্গিবাদের উত্থানকে প্রতিহত করেছি। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ পারস্পরিক সহনশীলতা বজায় রেখে বসবাস করে আসছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন।’
