শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪ | ২০ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৩ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

‘বাবুলের নির্দেশেই’ স্ত্রী মিতুকে হত্যা, ভোলার স্বীকারোক্তি


নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :২৩ অক্টোবর, ২০২১ ১১:০১ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের নির্দেশেই তার স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করা হয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্বে ছিলেন বাবুল আক্তারের সোর্স কামরুল শিকদার মুসা।

আজ শনিবার সন্ধ্যায় আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেন আলোচিত এই হত্যা মামলার অন্যতম আসামি এহতেশামুল হক ভোলা।

পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় গুলি ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। এর কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বাবুল আক্তার। সে সময় কামরুল শিকদার মুসা বাবুল আক্তারের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। মুসাই বাবুলের সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দেন বলে এহতেশামুল হক ভোলা জবানবন্দিতে জানিয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, জবানবন্দিতে এহতেশামুল হক ভোলা বলেছেন, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহারের জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করে দেন তিনি। কামরুল শিকদার মুসা শুরুতে খুন করতে রাজি ছিলেন না। তাকে এ কাজ না করলে ‘ক্রসফায়ারের’ হুমকি দিয়েছিলেন বাবুল। যার কারণে মুসা রাজি হন।

ভোলাকে শনিবার ভোরে যশোরের বেনাপোল থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরে বিকেলে চট্টগ্রামের আদালতে হাজির করা হলে জবানবন্দি দেন তিনি। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিন তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্টোর পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, মিতুকে খুনে অস্ত্র সরবরাহের কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে ভোলা। এ খুনের ঘটনায় আসামি বাবুল আক্তার জড়িত বলে অনেক তথ্য জবানবন্দিতে তুলে ধরেছেন অস্ত্র সরবরাহকারী।

মিতু হত্যাকাণ্ডের পর ২০১৬ সালের ২৭ জুন অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন এহতেশামুল হক ভোলা। ২০১৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর জামিনে মুক্তি পান তিনি। এরপর মিতুর বাবার করা মামলায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত থেকে চার সপ্তাহের অন্তর্বর্তী জামিন পান এহতেশামুল হক। গত ১৪ অক্টোবর মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালতে জামিনের সময় বাড়ানোর আবেদন করলে ভোলার অনুপস্থিতিতে মামলার শুনানি শেষে তার আবেদন নামঞ্জুর করেন। তারপর ভোলার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ জুলাই আদালত এহতেশামুল হক ভোলাসহ তিন আসামির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন। অন্য দুজন হলেন-কামরুল শিকদার মুসা ও মো. কালু।

হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই ‘নিখোঁজ’ আছেন কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা। তবে তার স্ত্রী পান্না আক্তারের দাবি, মুসাকে ওই বছরের ২২ জুন প্রশাসনের লোকজন তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ মিলছে না। মিতু হত্যা মামলায় মুসার স্ত্রী পান্না আক্তার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

এদিকে বাবুলের করা মামলায় পিবিআই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় গত বছরের মে মাসে। এর বিরুদ্ধে বাবুলের আইনজীবী নারাজি আবেদন করেন। ২৭ অক্টোবর নারাজি আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।

২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় খুন হন মাহমুদা খানম। তখন তার স্বামী বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে গত ১২ মে এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। ওই দিন মাহমুদার বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে বাবুলসহ আটজনকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই দিনই বাবুল আক্তারকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। পিবিআই মামলাটির তদন্ত করছে। বাবুল আক্তার বর্তমানে ফেনী কারাগারে বন্দী।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর