নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ৯:৫০ : পূর্বাহ্ণ
মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ১৯ দিন কারাগারে থাকার পর মুক্তি পেয়েছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়িকা পরীমনি।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
এ সময় কারাফটকে গণমাধ্যম ও শত শত স্থানীয় উৎসুক জনতা ভিড় করে।
কারাফটক থেকে বের হয়ে একটি সাদা হুটখোলা গাড়িতে উঠে উপস্থিত সবাইকে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান পরীমনি।
মুক্তির পর খুবই হাস্যোজ্জ্বল দেখাচ্ছিল চিত্রনায়িকাকে। তার মাথায় সাদা ওড়না পেচানো আর চোখে ছিল রোদচশমা।
এ সময় উপস্থিত লোকজনের সঙ্গে তাকে সেলফি তুলতে দেখা যায়।
গণমাধ্যমকর্মীরা প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে পরীমনি শুধু বলেন, ‘থ্যাংক ইউ, ধন্যবাদ।’
এরপর ওই গাড়িতে করে বনানীর বাসার উদ্দেশে রওনা হন তিনি।
এর আগে সকালে কারাগারের সামনে পরীমনিকে বরণ করে নেয়ার জন্য তার আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভী, খালু জসিমউদ্দিনসহ স্বজনরা অপেক্ষায় ছিলেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কেএম ইমরুল কায়েশ শুনানি শেষে ৫০ হাজার টাকা মুচলেকায় পরীমনির জামিন আদেশ দেন।
পরীমনির পক্ষে আদালতে জামিন শুনানি করেন আইনজীবী মো. মজিবুর রহমান।
শুনানিতে তিনি বলেন, পরীমনিকে পর পর তিনবার রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তিনি কারাগারে থেকে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। স্বনামধন্য এই চিত্রনায়িকার ১০টি সিনেমার শুটিং আটকে আছে। মানবিক বিবেচনায় পরীমনিকে জামিনে মুক্তি দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
জামিনের বিরোধিতা করে মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু ও অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বলেন, পরীমনির বাসা থেকে ভয়ংকর মাদক এলএসডি ও চার গ্রাম আইস উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি মাদকের আসর বসাতেন, নিজে মাদক গ্রহণ করতেন। এজন্য তাকে জামিন দেয়া বিপজ্জনক।
এর আগে গত ২২ আগস্ট পরীমনির জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। ওইদিন আদালত শুনানির জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন।
পরদিন আরেক দফা আবেদনে ‘দ্রুত শুনানির’ আবেদন করেন পরীমনির আইনজীবী। এতে সাড়া না পেয়ে তিনি হাইকোর্টে রিট করেন। সেখানে রুল চাওয়ার পাশাপাশি পরীমনির জামিন আবেদনও করা হয়। হাইকোর্ট বেঞ্চ ২৬ আগস্ট সরাসরি জামিন আদেশ না দিয়ে রুল জারি করেন।
আদেশের অনুলিপি পাওয়ার দুই দিনের মধ্যে পরীমনির জামিন আবেদনের শুনানি করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। সেই সঙ্গে ২২ অগাস্ট পরীমনি জামিন অবেদন করার পর শুনানির জন্য ২১ দিন পরের তারিখ রেখে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত যে আদেশ দিয়েছে, সেটি কেন বাতিল করা হবে না, তাও জানতে চায় হাই কোর্ট।
১ সেপ্টেম্বর রুল শুনানির তারিখ রেখে এই সময়ের মধ্যে মহানগর দায়রা জজ আদালতকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। আর হাই কোর্টের এ আদেশ বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিবাদীর কছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে সরকারের আইন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয় সেদিন।
গত ৪ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর বনানীর ১৯/এ রোডের ১২ নম্বর বাসায় চিত্রনায়িকা পরীমনির ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় র্যাব। পরীমনির বাসায় প্রায় ৩ ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়ে ভয়ংকর নতুন মাদক এলএসডি ও আইস জব্দ করা হয়। এছাড়া বিপুল সংখ্যক বিদেশী মদের বোতল উদ্ধার করা হয়। সেদিন বাসা পরীমনিকে আটক করে নিয়ে যায় র্যাব।
পর দিন ৫ আগস্ট তার বিরুদ্ধে র্যাব-১-এর কর্মকর্তা মো. মজিবর রহমান বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে রাজধানীর বনানী থানায় মামলা দায়ের করেন।
গত ১৬ ও ১৩ আগস্ট দুই দফায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পরীমনির জামিন নাকচ করা হয়। এর আগে এ মামলায় পরীমনিকে তিন দফা ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।