নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :২৮ জুন, ২০২১ ৬:৫৫ : অপরাহ্ণ
চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটির নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে শেষ মুহূর্তে পাল্টে যাচ্ছে সমীকরণ। নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বাধীন তৃতীয় ধারা নিয়ে কমিটির নতুন সমীকরণ হতে যাচ্ছে। সম্মেলনের আগে নগর আওয়ামী লীগের দুই ধারার সমন্বয়ে কমিটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকরা। কিন্তু সম্মেলনের পরে দুই ধারার বাইরে গিয়ে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য তৃতীয় ধারার নেতৃত্ব নিয়ে চিন্তা করছেন তারা।
এই তৃতীয় ধারার প্রস্তাব দিয়েছেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষ তিন নেতা। তারা তৃতীয় ধারার তিনজনের তালিকা চূড়ান্ত করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। এই তালিকায় রয়েছেন-সাদেক হোসেন পাপ্পু, নুরুল কবির ও আনোয়ারুল ইসলাম বাপ্পী। এরা তিনজনই নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।
নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষ এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজনীতি সংবাদকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আহ্বায়ক কমিটির যারা সদস্য হিসেবে ছিলেন, তাদেরকে কমিটির শীর্ষ নেতৃত্বে প্রাধান্য দেওয়া হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যারা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাথে কোনো দিন সম্পৃক্ত ছিলেন না, তারা একলাফে সভাপতি-সেক্রেটারি হতে চায়। কেবল সভাপতি-সেক্রেটারি দিয়ে তো কমিটি হবে না। যার যতটুকু যোগ্যতা তিনি সে অনুযায়ী কমিটিতে পদ পাবেন।’
গত ১৯ জুন নগরীর লালখান বাজার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রি-বার্ষিক ভার্চুয়াল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে ৪১ জন সভাপতি ও ৩৩ জন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আফজালুর রহমান বাবু প্রার্থীদের সমঝোতার জন্য ১০ মিনিট সময় বেঁধে দেন। কিন্তু প্রার্থীরা মহানগর ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করার মত দেন।
সম্মেলন শেষে ১০ দিন পার হলেও এখনও কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণা হয়নি। কেন্দ্র থেকে যেকোনো সময় কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে রাজনীতি সংবাদকে জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আফজালুর রহমান বাবু।
সম্মেলনের পর তৃতীয় ধারার আবির্ভাব
দলীয় সূত্রের খবর, সম্মেলনের আগে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের তিন শীর্ষ নেতা তাদের নিজস্ব বলয় থেকে নতুন কমিটির নেতৃত্ব নির্বাচনের বার্তা দিয়েছিলেন কেন্দ্রে। কিন্তু কেন্দ্র তাদের এই প্রস্তাব আমলে না নিয়ে নগর আওয়ামী লীগের দুই ধারা থেকে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেন। নগর আওয়ামী লীগের দুই ধারার দুই নেতার মতামত নিয়ে সম্মেলনের আগে কমিটির নেতৃত্ব অনেকটা চূড়ান্তও করে ফেলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকরা। কিন্তু চট্টগ্রামে ২০ বছর পর নেতা-কর্মীদের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণে জাঁকজমকপূর্ণ ভার্চুয়াল সম্মেলনের দৃশ্য দেখে মত পরিবর্তন করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। গত ২০ বছর ধরে ত্যাগ স্বীকার করে আসা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের মূল্যায়নের কথা ভাবছেন তারা।
দলীয় সূত্র জানায়, সম্মেলনের পর নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের তিন শীর্ষ নেতা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সার্বজনীন নেতাদের নিয়ে কমিটি করতে কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব দেন। তারা কেন্দ্রকে জানিয়েছেন, সার্বজনীন নেতাদের নিয়ে কমিটি না করলে সংগঠনে একাধিক ধারা-উপধারা সৃষ্টি হবে এবং এতে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। চট্টগ্রাম নগরীতে স্বেচ্ছাসেবক লীগকে শক্তিশালী করতে কেন্দ্র এখন তৃতীয় ধারার দিকে ধাবিত হচ্ছেন।
তৃতীয় ধারার নেতাদের কীভাবে বাছাই করা হলো?
নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষ এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজনীতি সংবাদকে জানান, আমরা কমিটির তিন নেতা প্রথমে আমাদের তিন কট্টর অনুসারীকে প্রার্থী করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সম্মেলনের আগে আমরা নতুন করে একটা সমীকরণ করি। আমাদের তিন কট্টর অনুসারীকে বাদ দিয়ে সার্বজনীন নেতাদের আমরা বেছে নিই। এদের নিয়ে আমাদের কারো কোনো আপত্তি নেই।
জানা গেছে, অ্যাডভোকেট এইচ এম জিয়াউদ্দিন তার কট্টর অনুসারী অ্যাডভোকেট তসলিম উদ্দিনকে বাদ দিয়ে বেছে নেন সিটি কলেজের সাবেক ভিপি সাদেক হোসেন পাপ্পুকে। যুগ্ম আহ্বায়ক কে বি এম শাহজাহান বেছে নেন নুরুল কবিরকে। শাহজাহানের কট্টর অনুসারী হলেন জসিম উদ্দিন। অপর যুগ্ম আহ্বায়ক সালাউদ্দিন আহমেদ বেছে নেন আনোয়ারুল ইসলাম বাপ্পীকে। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী সালাউদ্দিন আহমেদের কট্টর অনুসারী হলেন মো. সালাহউদ্দীন।
তৃতীয় ধারার নেতৃত্বের তালিকায় থাকা সাদেক হোসেন পাপ্পু নগর আওয়ামী লীগের দুই ধারার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নেই। তিনি নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুলের ভাতিজা। নুরুল কবির হলেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনের ভাগিনা। আর আনোয়ারুল ইসলাম বাপ্পী হলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। কিন্তু তালিকায় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী কেউ নেই।
তৃতীয় ধারার নেতৃত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এইচ এম জিয়াউদ্দিন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘যারা ধারাবাহিকভাবে স্বেচ্ছাসেবক লীগ করে আসছেন এবং যারা সবাইকে নিয়ে সংগঠন পরিচালনা করতে পারবেন, তাদেরকে নেতৃত্বে আনতে আমরা কেন্দ্রকে বলেছি। যারা নেতৃত্ব দেবেন তাদের যদি সবাইকে নিয়ে সংগঠন করার মানসিকতা না থাকে, তাহলে সংগঠনটা দুই-তিনভাগ হয়ে যাবে। কেন্দ্র হয়তো বিষয়টি বিবেচনা করছে।’
নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কে বি এম শাহজাহান রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমরা সংগঠনটাকে ২০ বছর গ্রুপিং রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে সুন্দরভাবে চালিয়েছি। সব নেতার কাছে আমাদের কর্মসূচির গ্রহণযোগ্যতা ছিল। তাই তো সম্মেলনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন আমাদের প্রশংসা করেছেন। তাদের এই প্রশংসা যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে ধারাবাহিকতা রক্ষায় আমাদের চিন্তা থেকে যেটা (তৃতীয় ধারা) বেরিয়ে এসেছে সেটার দিকে ধাবিত হওয়া উচিত।’
নগর আওয়ামী লীগের একজন সহ-সভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজনীতি সংবাদকে বলেন, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিতে যদি তৃতীয় ধারার নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে সামনে নগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কমিটি নিয়েও এমন দাবি উঠতে পারে।
আরও পড়ুন: নেতৃত্ব চূড়ান্ত, সম্মেলন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা!