প্রকাশের সময় :১৪ জুন, ২০২১ ৭:৩০ : অপরাহ্ণ
মফিজুর রহমান, আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক। যিনি ২০১২ সালের ২৩ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য থেকে শীর্ষ নেতৃত্বে আসেন। গত ৮ বছর ধরে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। এই আওয়ামী লীগ নেতা প্রতিদিন দলীয় কার্যালয়ে ছুটে যান নেতাকর্মীদের সাথে আড্ডা দিতে। গত ১২ জুন বিকেল চারটার দিকে লালদীঘি পাড় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেলো, ২০-২৫ জন নেতাকর্মীর সাথে তিনি সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলাপচারিতা করছিলেন। এরই ফাঁকে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও সাংগঠনিক নানা বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন রাজনীতি সংবাদের সাথে। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজনীতি সংবাদের সম্পাদক সালাহ উদ্দিন সায়েম।
প্রশ্ন: প্রতিদিনই কি পার্টি অফিসে আসেন?
উত্তর: প্রতিদিনই আমি সকালে না হয় বিকেলে পার্টি অফিসে একবার আসি। চট্টগ্রামে আর কোনো নেতা এভাবে প্রতিদিন পার্টি অফিসে যান কিনা আমার জানা নেই। দক্ষিণ জেলার নেতৃত্বে আসার পর থেকেই আমিই নিয়মিত পার্টি অফিসে আসি। মাস তিনেক আগে ভারত থেকে এসে বিমানবন্দর হয়ে আমি সরাসরি আগে পার্টি অফিসে আসি। নেতা-কর্মীদের সাথে সাক্ষাৎ শেষে আমি বাসায় যাই।
প্রশ্ন: প্রতিদিন পার্টি অফিসে কেন আসেন?
উত্তর: পার্টি অফিসে এসে নেতা-কর্মীদের সাথে আড্ডা দিতে আমার ভালো লাগে। প্রতিদিন আমাকে কাছে পেয়ে নেতা-কর্মীরাও আনন্দ পায়। রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের সাথে কথা বলি। এতে নেতা-কর্মীরা চাঙ্গা থাকে। নেতা-কর্মীদের আনাগোনায় পার্টি অফিস সরগরম থাকে। একসময় নেতা-কর্মীদের পদচারণায় মুখরিত থাকতো পার্টি অফিস। এখনকার নেতা-কর্মীরা পার্টি অফিসমুখী নয়। আমি তৃণমূল নেতা-কর্মীদের পার্টি অফিসমুখী করতে চাই।
প্রশ্ন: কিন্তু দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের টিনশেডের জরাজীর্ণ এই দলীয় কার্যালয়ে তো আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি!
উত্তর: পার্টি অফিসের জায়গাটা গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের। তাই আধুনিকায়ন করতে পারছি না। আমরা চেষ্টা করছি, তাদের থেকে লিজ নেওয়ার জন্য। যদি লিজ নিতে পারি, তাহলে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিবো।
প্রশ্ন: জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি গত আট বছরে চার উপজেলায় সম্মেলন করলেও বোয়ালখালী, বাঁশখালী, আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলায় কেন সম্মেলনের আয়োজন করতে পারেনি?
উত্তর: এটা আমাদের ব্যর্থতা। স্থানীয় এমপিদের অসহযোগিতা ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে আমরা সম্মেলন করতে পারিনি। এমপিরা দলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। তারা দলকে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করতে চায়। এমপিদের সাথে দূরত্বের কারণেই আমরা এসব উপজেলায় সম্মেলন করতে পারিনি। জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এই ব্যর্থতার দায় আমাদের নিতে হবে।
প্রশ্ন: আগামী নভেম্বরের মধ্যে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের আওতাধীন সকল ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলার সম্মেলন আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। পাঁচ মাসের মধ্যে এসব ইউনিটের সম্মেলন কি করা যাবে?
উত্তর: এটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং হবে। কিন্তু সবার মধ্যে সংগঠনকে শক্তিশালী করার মানসিকতা ও আন্তরিকতা থাকলে পাঁচ মাসের মধ্যে আট উপজেলার সম্মেলন করা কঠিন কিছু নয়। কারণ পাঁচ মাস অনেক সময়।
প্রশ্ন: জেলা আওয়ামী লীগেরও তো সম্মেলন করতে পারেননি। গত পাঁচ বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ…
উত্তর: ২০১৯ সালের নভেম্বরে জেলার সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-নগর আংশিক) আসনের উপনির্বাচনের কারণে কেন্দ্র থেকে সম্মেলন স্থগিত করা হয়।
প্রশ্ন: আপনি গত ৮ বছর ধরে সংগঠনের নেতৃত্বে দিয়ে আসছেন। নিজেকে কতটা সফল মনে করছেন?
উত্তর: এক কথায় বলি, আমি সন্তুষ্ট না। কারণ সংগঠনকে যেভাবে সার্ভিস দেওয়া দরকার সেটা আমি পারিনি।
প্রশ্ন: এর নেপথ্যে কারণ কী?
উত্তর: সমন্বিত উদ্যোগ আর যৌথ নেতৃত্বে একটি দল পরিচালিত হয়। শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একটি দলকে শক্তিশালী করতে পারে না। দলকে শক্তিশালী করতে হলে সবার সহযোগিতা ও সমন্বয় দরকার। একটা সংগঠনের যেভাবে অবস্থান থাকা দরকার দক্ষিণ জেলার সেভাবে অবস্থান নেই।
প্রশ্ন: তাহলে কি দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থান একেবারে নাজুক?
উত্তর: একেবারে নাজুক সেটা বলা যাবে না। চারটা উপজেলায় থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে নেতা-কর্মীদের সাথে এমপিদের সমন্বয়হীনতার কারণে আমরা সম্মেলন করতে পারিনি। কিন্তু সমন্বয়হীনতার কারণে সম্মেলন করতে না পারলেও সাংগঠনিক তৎপরতা রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহানগরে না করে দক্ষিণ জেলায় পটিয়ায় এসে সমাবেশ করেছেন। এটা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অনেক জেলায় একবারও যেতে পেরেছেন কিনা আমার জানা নেই। কিন্তু দক্ষিণ জেলার সাংগঠনিক কর্মসূচিতে তিনি সাত বার এসেছেন। এমন কোনো কেন্দ্রীয় নেতা নেই, যারা দক্ষিণ জেলার কর্মসূচিতে আসেননি।
প্রশ্ন: দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের আগামী সম্মেলনে কি সভাপতি প্রার্থী হবেন?
উত্তর: না আমি প্রার্থী হবো না। আমি জেলা আওয়ামী লীগের আগের কমিটির সদস্য ছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী আমাকে বর্তমান কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদে স্থান দিয়েছেন। কাজেই যিনি যোগ্য নেতা নেত্রী তাকেই বেচে নিবেন। এখানে প্রার্থী হওয়া না হওয়া মুখ্য কোনো বিষয় না।
প্রশ্ন: আপনার রাজনৈতিক জীবনের বিশেষ কোনো স্মৃতি কি আছে?
উত্তর: আমার রাজনৈতিক জীবনের বিশেষ স্মৃতি হলো, ১৯৮১ সালের ১৭ মে নেত্রী যেদিন স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। সেদিন আমার ঢাকা বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল। তখন আমি দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি পদে ছিলাম। সেদিন আমরা বিমানবন্দরে স্লোগান দিয়েছিলাম-‘ঝড় বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’। সেদিনের অশ্রু ভেজা, বৃষ্টি ভেজা স্মৃতি আমার রাজনৈতিক জীবনে নতুনভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
রাজনীতি সংবাদ: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
মফিজুর রহমান: ধন্যবাদ আপনাকেও।
আরও পড়ুন: ‘গণভবনে কেউ ঢুকতে পারেনি বিধায় প্রশাসক পদে নিয়োগ পেয়েছি’