নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :২৬ মে, ২০২১ ৮:২২ : পূর্বাহ্ণ
অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ইয়াস গতিবেগ বাড়িয়ে উপকূলের আরও কাছে চলে এসেছে। ভারতের ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের স্থলভাগের আরও কাছে পৌঁছে গেছে এটি। এখন ওড়িশার ধামরা থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার পূর্বে রয়েছে ইয়াসের কেন্দ্রস্থল। পারাদ্বীপ থেকে ৯০ কিমি পূর্ব এবং উত্তর-পূর্বে রয়েছে ইয়াস। পশ্চিমবঙ্গের দিঘা থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে ইয়াস। বাংলাদেশের উপকূলের সঙ্গেও দূরত্ব কমেছে ইয়াসের।ঘূর্ণিঝড়টি আজ বুধবার দুপুর নাগাদ পশ্চিমবঙ্গ-ওডিশা উপকূলে আছড়ে পরতে পারে।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের কলকাতা কার্যালয়ের বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার বুলেটিনে এমনটিই জানানো হয়েছে।
তবে ভারতের আবহাওয়াবিদরা বলছেন, স্থলভাগের দিকে অগ্রসর হওয়া অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড় ইয়াস শক্তিক্ষয় হয়ে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ছে। ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগ অতিক্রমের সময় এর গতিবেগ ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠবে না।
ভারতের আবহাওয়াবিদ ড. সুজীব কর বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় কতগুলি প্যাচ তৈরি হচ্ছে। যেগুলি উষ্ণবায়ু দ্বারা পরিবেষ্টিত। সাইক্লোনের কেন্দ্রবিন্দুতে মূলত থাকে উষ্ণবায়ু। বাইরের অংশে থাকে শীতলবায়ু। শীতল বায়ু উষ্ণুবায়ু থেকে তাপ গ্রহণ করছে। আর এই তাপমাত্রার তারতম্যের জেরেই শক্তি অর্জনে অপারগ হয়ে পড়ছে সাইক্লোনটি। ফলে ক্রমশই শক্তি হারাচ্ছে ইয়াস।’
জানা গেছে, মহামারির মধ্যে শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগে শুধু ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ১০ লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সতর্কতামূলক পদক্ষেপে ট্রেন-বিমান চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূল দিয়ে উঠে এলেও এর প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের সুন্দরবন সংলগ্ন অঞ্চল এবং উপকূলীয় সব অঞ্চলে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে অতিক্রম করার সময়ে বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম জেলাগুলো এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।এসব এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইয়াসের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন, ঘূর্ণিঝড়ের সময় পূর্ণিমা হওয়ার কারণেই বাংলাদেশ ভুগতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ বলেন, পূর্ণিমার প্রভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৬ ফুট অধিক উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হতে পারে। এর ফলে এসব এলাকায় জলোচ্ছ্বাস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর সর্বশেষ বুলেটিনে জানিয়েছে, বুধবার সকালে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৫১৫ কিলোমিটার, পশ্চিম কক্সবাজার থেকে ৫১০ কিলোমিটার পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়ার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৫০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এমন অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।