নিজস্ব প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :৭ মে, ২০২১ ৭:৩২ : অপরাহ্ণ
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে বিদেশে নেওয়ার জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে। কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতির বাইরেও বিভিন্ন জটিলতা রয়েছে।
একদিকে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের যাওয়ার ব্যাপারে নানা বিধিনিষেধ আছে, অন্যদিকে বর্তমান শারীরিক অবস্থায় খালেদা জিয়া দীর্ঘ সময় ধরে বিমান ভ্রমণের ধকল সামলাতে পারবেন কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তার চিকিৎসকরা।
দলীয় সূত্রের খবর, খালেদা জিয়াকে পরিবার প্রথমে লন্ডনে ও বিকল্প হিসেবে সিঙ্গাপুরে নিতে আগ্রহী। কিন্তু বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্য ও সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশিদের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। কিন্তু খালেদা জিয়ার বড় ছেলে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে নেয়ার বিষয়ে সেখানে আলোচনা চালাচ্ছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে খালেদা জিয়াকে যুক্তরাজ্য বা সিঙ্গাপুরে নেয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ কোন সমস্যা হবে না বলে আমরা মনে করছি।
জানা গেছে, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্য ও সিঙ্গাপুরের বিকল্প হিসেবে সুবিধাজনক কোন দেশ হতে পারে, তা নিয়েও তার পরিবার এবং দলের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে।
৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার দীর্ঘ বিমানযাত্রা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, খালেদা জিয়াকে এখনও অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে, ইনসুলিন দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় তিনি দীর্ঘ বিমানযাত্রার জন্য কতটা উপযুক্ত সেটাই বিবেচ্য বিষয়। তার মানে তিনি বিমানযাত্রার জন্য উপযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত বিদেশে রওনা দিতে পারবেন না।
লন্ডনে বা অন্য কোন দেশে নেয়া হলে হাসপাতাল পাওয়া যাবে কি-না, সেই প্রশ্নও রয়েছে। তবে এ বিষয়টিও তারেক রহমান দেখছেন বলে দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড।
বিএনপির একজন নেতা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট নবায়ন, ভিসাসহ আনুষঙ্গিক কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে। সরকার অনুমতি দেয়ার ২৪ বা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার প্রস্তুতি চলছে।
খালেদা জিয়ার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৯ সালে এবং এরপর আর এটি নবায়ন করা হয়নি। দুই দিন আগে তার পক্ষে এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ পাসপোর্ট নবায়নের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।
ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের একজন মুখপাত্র আজ একটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার ভিসার আবেদন বিবেচনা করবে যুক্তরাজ্য।
তবে প্রক্রিয়াগত কারণে ভিসা পেতে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। বর্তমানে ভিসা প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ভিএফএস বন্ধ আছে। রোববার কিংবা সোমবার ভিএফএস খোলা হবে। তারপর ভিসা প্রক্রিয়া হতে পারে।
বুধবার রাতে সরকারের অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে লিখিত আবেদন করেন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। লিখিত আবেদনটি পাওয়ার পরপরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তা মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেন।
সরকার বিষয়টি ইতিবাচক এবং মানবিক দৃষ্টিতে দেখার কথা বললেও এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, এ বিষয়ে খুব শিগগিরই সিদ্ধান্ত হবে।
গত ১১ই এপ্রিল খালেদা জিয়ার শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। সে সময় সিটি স্ক্যান রিপোর্টে তাঁর ফুসফুসে পাঁচ শতাংশে সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছিল।
এরপর গত ২৫শে এপ্রিল খালেদা জিয়ার দ্বিতীয়বারের মতো কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হলে সেখানেও তার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল।
পরে জটিলতা দেখা দেয়ায় গত ২৭শে এপ্রিল তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত। প্রায় আড়াই বছরের মতো কারাগারে ছিলেন তিনি। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার গত বছরের ২৫ মার্চ ‘মানবিক বিবেচনায়’ শর্তসাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তি দেয়। দুই দফায় এ মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।