রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :১২ মার্চ, ২০২১ ৫:১০ : অপরাহ্ণ
শুধু তিস্তাই নয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে বাংলাদেশ-ভারত অমীমাংসিত দ্বিপাক্ষীয় কোনো ইস্যুই আলোচনার টেবিলে গড়াবে না বলে সাফ জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এম আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি সফর পুরোটাই হবে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর উৎসব উদযাপনের। দুই দেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলো আমরা এবার তুলতে চাই না।’
আজ শুক্রবার (১২ মার্চ) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর নিয়ে প্রত্যাশা কী? এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন বলেন, ‘উনি আসছেন এতেই আমরা সবচেয়ে খুশি। তবে যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন সফরে কোনো ধরণের সমঝোতা স্মারক সই হবে কিনা- তবে আমি বলবো অপ্রাসঙ্গিক। আমাদের সাথে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের জন্য তিনি আসছেন। এটাই বড় পাওয়া। আর কী চাই?’
নরেন্দ্র মোদির সফরে তিস্তা নিয়ে কোনো কথা হবে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ওগুলো বাদ, আমরা যেটা চাই- সেটা হচ্ছে এই যে একটি আনন্দ উৎসব, আমাদের বড় উৎসবে সবাই আসছেন, এতে আমরা আনন্দিত। আর অন্যান্য ছোটখাট জিনিস যেগুলো… ভারতের সঙ্গে তো আমাদের যে ধরনের বড় বড় সমস্যা, সব আমরা আলোচনার মাধ্যমেই দূর করেছি। আর যদি কিছু থাকে, সেগুলো আস্তে আস্তে করব। বাট দিস ইভেন্ট শুড নট বি অ্যান অকেশন ফর রিজলভিং…। তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি তাদের সমস্যা আছে। আমরা বুঝি, আমরা বোকা নই। তাই এগুলো নিয়ে খামোখা প্রশ্ন করছেন কেন?’
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শত বার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে এ মাসের ১৭ থেকে ২৬ মার্চ দশ দিন জাতীয় পর্যায়ে বেশ কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তাতে যোগ দিতে ২৬ মার্চ ঢাকা আসার কথা রয়েছে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর। পরদিন সাতক্ষীরার যশোরেশ্বরী মন্দির, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ এবং কাশিয়ানীর ওড়াকান্দিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের একটি মন্দিরে যাওয়ার কথা রয়েছে তার।
উল্লেখ্য, তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের মধ্যে ১৯৮৩ সাল থেকে দরকষাকষি চললেও, সুরাহা হয়নি আজও।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় বহুল আলোচিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সইয়ের কথা ছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সেই চুক্তি সময়কাল ধরা হয়েছিল ১৫ বছর। চুক্তি অনুযায়ী তিস্তা নদীর পানির ৪২.৫ শতাংশে ভারতের অধিকার ও ৩৭.৫ শতাংশ বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় ভেস্তে যায় তিস্তা চুক্তি সাক্ষর।
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকে ঘিরে আশা তৈরি হয় তিস্তা চুক্তি সাক্ষরের। সফরে তিনি বৈঠকে বসেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে। কিন্তু সেবারও বেঁকে বসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হয়নি তিস্তা চুক্তি। এমনকি ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ঢাকা সফরে এসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিস্তার চুক্তির ব্যাপারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার আশ্বাস দিলেও ফল হয় নি।
সবশেষ ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের সরকারপ্রধানের মধ্যকার অনুষ্ঠিত হওয়া ভাচুয়াল সম্মেলনে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশকে আশ্বাস দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর তাই স্বভাবতই চলতি মাসে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর নিয়ে তিস্তা ইস্যুতে আশার বুক বেধেঁছিল বাংলাদেশ। তবে শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন জানালেন, নরেন্দ্র মোদির সফরে তিস্তা ইস্যু নিয়ে কোনো আলোচনাই হবে না।