প্রকাশের সময় :২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ৯:৩৬ : অপরাহ্ণ
১৯৭০ সালে ছাত্রলীগে যোগ দিয়ে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন খোরশেদ আলম সুজন। ৫০ বছরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে এই আওয়ামী লীগ নেতা বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনে চট্টগ্রাম বন্দর অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে সামনের সারিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তার বয়স এখন ৬২ বছর। নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক পদে ৬ মাস দায়িত্ব পালন করে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়ে নগরবাসীর আলোচনায় আসেন। গত মঙ্গলবার সকালে নগরীর উত্তর কাট্টলীর নিজ বাসায় তিনি প্রশাসক পদে দায়িত্বপালন, নিজের রাজনৈতিক জীবন ও নগর আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে তিনি কথা বলেছেন রাজনীতি সংবাদের সাথে। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজনীতি সংবাদের সম্পাদক সালাহ উদ্দিন সায়েম।
প্রশ্ন: রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রচার আছে, আপনি বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) করেছেন বিধায় দলের হাইকমান্ড আপনাকে বিগত নির্বাচনগুলোতে মনোনয়ন দেয়নি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আপনাকে চট্টগ্রাম সিটির প্রশাসক পদে নিয়োগ দিয়ে মূল্যায়ন করেছেন। বিষয়টা কীভাবে দেখছেন?
উত্তর: বাকশাল করার কারণে আমাকে মনোনয়নবঞ্চিত করা হয়েছে-এ কথাটা ঠিক নয়। তাহলে প্রশাসক পদে কীভাবে নিয়োগ পেলাম? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বারবার আমার মনোনয়ন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। এবার গণভবনে লকডাউনের কারণে কেউ ঢুকতে পারেনি বিধায় প্রশাসক পদে নিয়োগ পেয়েছি। উনার (প্রধানমন্ত্রী) অন্তরে খোরশেদ আলম ছিল বলে প্রশাসক পদে নিয়োগ পেয়েছি। চট্টগ্রামের কোনো নেতার সাথে পরামর্শ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে প্রশাসক পদে নিয়োগ দেননি। উনি নিজের ইচ্ছায় আমাকে এ পদে নিয়োগ দিয়েছেন।
প্রশ্ন: চট্টগ্রামে অনেকে বাকশালের সাথে যুক্ত থাকলেও তাদের নিয়ে বিতর্ক নেই। আপনাকে নিয়ে কেন বিতর্ক?
উত্তর: আমি বাকশাল থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিইনি। বাকশাল-আওয়ামী লীগ একীভূত হয়েছিল। কারণ দুটি একই আদর্শের সংগঠন।আমার কোনো দোষ খুঁজে না পেয়ে অনেকে বাকশাল নিয়ে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেন। আমি ফজলি আম। তাই সবাই ঢিল ছুড়ে । অথচ চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বাকশালের সাথে যুক্ত ছিলেন। যিনি মেয়র হয়েছেন উনি কি? জেলা পরিষদের এম এ সালাম, খাগড়াছড়ির জাহেদ উনারা কি? এস এম ইউসুফ যিনি দলকে ভেঙ্গেছিলেন, তাকে পটিয়ায় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। বাকশাল করা দলের আরও অনেক লোককে নেত্রী বিভিন্ন জায়গায় পদায়ন করেছেন। বাকশাল নিয়ে শেখ হাসিনার কাছে হীনমন্যতা নেই।
প্রশ্ন: বাকশাল নিয়ে আপনার অভিমত কী?
উত্তর: বাকশাল বঙ্গবন্ধুর কনসেপ্ট। বাকশাল বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কোনো সংগঠন ছিল না। এটা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে একধাপ এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা চেষ্টা করেছিলাম। আমি এখনও দৃঢ়ভাবে মনে করি, বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির সনদ বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি। সেই কর্মসূচি আজকে অন্যভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে। আজকে বাংলাদেশে যে কৃষির বিকাশ সেটা ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। এটাই হচ্ছে দ্বিতীয় বিপ্লবের সাফল্য।
প্রশ্ন: বাকশালের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল বলে মনে করেন?
উত্তর: ১৯৮২ সালে ছাত্রলীগের বিভাজনের সিদ্ধান্তটা সময়োপযোগী হয়নি বলে মনে করি। তখন ছাত্রলীগের যারা নেতৃত্ব ছিল তারা কাজটা ঠিক করেনি। আমরা তাদের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছিলাম।
প্রশ্ন: সিটি করপোরেশনের প্রশাসক পদে নিয়োগ পেয়ে আপনি কি দলের হাইকমান্ডের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন?
উত্তর: আসলে আমি প্রশাসক পদের জন্য আগ্রহী ছিলাম না। রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে সবসময় পার্লামেন্ট মেম্বার কিংবা মেয়র হওয়ার জন্য চেষ্টা করেছিলাম। নেত্রী আমাকে প্রশাসক হিসেবে কেন বেঁচে নিয়েছিলেন, সেটা উনিই ভালো জানেন। তবে আমি কখনো হতাশ হইনি।
প্রশ্ন: সংসদ নির্বাচন ও মেয়র নির্বাচনে আপনাকে কেন মূল্যায়ন করা হয়নি বলে মনে করছেন?
উত্তর: আমাকে মূল্যায়ন করা হয়নি কথাটা ঠিক নয়। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে নেত্রী আমাকে মূল্যায়ন করেছিলেন। বন্দর-পতেঙ্গা আসন থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম থেকে আমাকে টেলিফোনে ডেকে নিয়ে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। মনোনয়নপত্র দাখিল করার পর মহিউদ্দিন চৌধুরী আমাকে ও আফছারুল আমীনকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যান। প্রধানমন্ত্রী আমাকে নির্বাচনে আর্থিকভাবেও সহযোগিতা করার কথা বলেছিলেন। তখন বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য মনোনয়নপত্র জমাদানের সময় বাড়ানোর কারণে অন্য ব্যক্তি সুযোগটা নিয়েছিলেন। আমাকে মনোনয়ন দিলে বন্দরে মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রভাব বাড়বে-এটা বলে দেশি-বিদেশির শক্তির মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করে আমার মনোনয়ন বাতিল করা হয়। আমি ইচ্ছা করলে লতিফের মনোনয়ন বাতিল করে দিতে পারতাম। আমার কাছে লতিফের অনেক মিথ্যা তথ্যের ডকুমেন্ট ছিল। কিন্তু দলের স্বার্থে আমি সেটা করিনি। আমি বিষ খেয়ে বিষ হজম করেছি। মনোনয়ন না পেয়ে দলের বিরুদ্ধে কখনো কোনো কাজ করিনি।
প্রশ্ন: এম এ লতিফের সাথে কি আপনার এখনও বিরোধ আছে?
উত্তর: না। কিছু দিন আগে আমি তাকে ফোন করেছিলাম। তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিয়েছি।
প্রশ্ন: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ৬ মাস প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করা কি কঠিন ছিল?
উত্তর: করোনাকালীন সময়ে দায়িত্বটা অবশ্যই কঠিন ছিল। যখন দায়িত্ব নিই তখন সিটি করপোরেশনের মাথার ওপর হাজার কোটি টাকার ঋনের বোঝা। করপোরেশন মাসের ১০-১৫ তারিখের আগে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে পারতো না। আমি প্রতি মাসের ১ তারিখে বেতন দিয়েছি। আমি ছয় মাসে এক টাকাও ঋনগ্রস্ত করিনি। বরং দায়িত্ব ছেড়ে আসার সময় নতুন মেয়রের জন্য ২০ কোটি টাকা রেখে এসেছি। আমার প্রতি নেত্রীর আস্থা ও বিশ্বাসকে শতভাগ পূর্ণ করার জন্য চেষ্টা করেছি। আমার যোগ্যতা, দক্ষতা এবং রাজনীতির অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে মানুষের জন্য কাজ করেছি। আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবো, আমি কোনো অন্যায় কাজ করিনি।
প্রশ্ন: সামনে নগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোচনা চলছে। আপনার প্রত্যাশা কী?
উত্তর: একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি তো চাইবো দলের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য। কিন্তু সেই নেতৃত্ব নির্ধারণ করবেন দলের মাননীয় সভানেত্রী। তিনি যাকে যোগ্য মনে করবেন তার হাতে নেতৃত্ব তুলে দিবেন।
প্রশ্ন: নগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থা কেমন দেখছেন?
উত্তর: সংগঠনের কিছু দুর্বলতা আছে। অনেক জায়গায় থানা কমিটি নেই, ওয়ার্ড কমিটি নেই। তবে থানা-ওয়ার্ডের এসব কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে করা উচিত।
রাজনীতি সংবাদ: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
খোরশেদ আলম সুজন: ধন্যবাদ রাজনীতি সংবাদকে।
আরও পড়ুন: ‘এমপিদের অসহযোগিতা ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সম্মেলন করতে পারিনি’