বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ | ১২ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৫ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

চট্টগ্রামের লালদিয়ার চরে উচ্ছেদ: কী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার?


রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১:০০ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা লালদিয়ার চরের উচ্ছেদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। দুই-এক দিনের মধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এ নিয়ে একটা বৈঠক হতে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান রাজনীতি সংবাদকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, ‘লালদিয়ার চরের উচ্ছেদের বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আজ-কালের মধ্যে একটা বৈঠক হচ্ছে। সেই বৈঠকে হয়তো লালদিয়ার চরের বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। আশা করছি, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে শিগগিরই বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে একটা বার্তা আসবে।’

হাইকোর্টের নির্দেশে লালদিয়ার চরের এ, বি ও সি-ব্লকের ৫২ একর জায়গায় বসবাসরত ২ হাজার ৩০০ পরিবারকে উচ্ছেদ করতে পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ওই এলাকায় প্রায় ১৪ হাজার বাসিন্দা বসবাস করছে।

কর্ণফুলী নদী রক্ষায় নির্দেশনা চেয়ে দশ বছর আগে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ হাইকোর্টে একটি রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট এক রায়ে হাইকোর্ট কর্ণফুলী নদীর তীরে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দেন। এর আগের বছর হাইকোর্টের নির্দেশে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কর্ণফুলী নদীপারের ২ হাজার ১১২টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দিয়েছিল। আদালতের নির্দেশের তিন বছর পর ২০১৯ সালের ২২ জুলাই লালদিয়ার চরের এ-ব্লকের আড়াইশ স্থাপনা উচ্ছেদ করে প্রায় ২০ একর জমি দখলমুক্ত করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরপর ৯ মাস উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

কর্ণফুলী নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম চলমান না থাকার পরিপ্রেক্ষিতে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস গত বছরের ৭ এপ্রিলে হাইকোর্টে একটি আবেদন করে। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট কর্ণফুলী নদীর তীরের অবৈধ সব স্থাপনা উচ্ছেদে তিন মাসের সময় বেঁধে দিয়েছিল। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের আগে সংশ্লিষ্ট স্থানের স্থাপনার পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতেও বলা হয়। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ করোনা পরিস্থিতির কারণে উচ্ছেদের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি বলে হাইকোর্টকে জানায়।

গত বছরের ৮ ডিসেম্বর হাইকোর্টে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আদালতের ইতিপূর্বের নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিষয়ক শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ওই শুনানিতে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চ কর্ণফুলী নদীর তীরের লালদিয়ার চর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে দুই মাস সময় বেঁধে দেন বন্দর কর্তৃপক্ষকে। দুই মাসের মধ্যে উচ্ছেদে ব্যর্থ হলে আগামী ৯ মার্চ পরবর্তী শুনানিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ বিবাদীদের আদালতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

হাইকোর্টের নির্দেশের পর গত ১৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী সহসাই লালদিয়ার চরের অবৈধ দখলদারদের বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে উচ্ছেদ করা হবে। অবিলম্বে অবৈধ দখলদারদের ওই জায়গা ছেড়ে দেওয়ারও অনুরোধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে উচ্ছেদ শুরুর সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ইতোমধ্যে ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।

পতেঙ্গার লালদিয়ার চর এলাকার বাসিন্দারা উচ্ছেদের আগে তাদের পুনর্বাসনের দাবিতে গেল শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিমানবন্দর সড়কে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন লালদিয়ার চরের হাজার হাজার মানুষ। এতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতারাও সংহতি জানান।

লালদিয়ার চরের বাসিন্দারা জানান, ১৯৭২ সালে বিমান বাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটি সম্প্রসারণের জন্য কয়েক হাজার স্থানীয় বাসিন্দাকে সরিয়ে লালদিয়ার চরে পুনর্বাসন করে তৎকালীন সরকার। ১৯৭৫ সালের পর বিভিন্ন আইনি জটিলতার কারণে লালদিয়ার চরের ওই ভূমি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুকূলে বিএস জরিপে লিপিবদ্ধ করা হয়। এরপর থেকে লালদিয়ার চরের বাসিন্দাদের অবৈধ দখলদার হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

লালদিয়ার চরের বাসিন্দাদের দাবি, লালদিয়ার চর এলাকার সামনে দিয়ে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। অথচ ১৯৭২ সালে বিমান বাহিনীর ঘাঁটি সম্প্রসারণের জন্য জায়গা ছেড়ে দেওয়া লালদিয়ার চরের মানুষদের আজ ভিটেবাড়ি ছাড়তে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের মতো লালদিয়ার চরের মানুষদেরও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবেন-এই আশায় প্রহর গুনছেন তারা।

উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের ১২ জুলাই লালদিয়ার চরের বি-ব্লকে থাকা প্রায় ৫০০ পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়।

বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করছে হিউম্যান রাইটস
বন্দর কর্তৃপক্ষ লালদিয়ার চরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ নিলেও সংস্থাটির বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে ওই এলাকার জায়গা অবৈধভাবে লিজ দেওয়ার অভিযাগ উঠেছে। ২০০৫ সালের ১২ জুলাই লালদিয়ার চরের বি-ব্লকে থাকা প্রায় ৫০০ পরিবারকে উচ্ছেদ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু লালদিয়ার চরের বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ ওই ২২ একর জায়গা ইনকনট্রেড লিমিটেড নামে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দিয়ে বসে। সেখানে ওই প্রতিষ্ঠান একটি অফডক নির্মাণ করেছে। এ নিয়ে এখন প্রশ্ন তুলছে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ।

হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘একদিকে লালদিয়ার চরের বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে, অন্যদিকে বন্দর কর্তৃপক্ষ ওই জায়গা ইনকনট্রেড লিমিটেড নামক একটা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে লিজ দিয়েছে। আইনের সাথে বিষয়টা সাংঘর্ষিক। বন্দর কর্তৃপক্ষ আদালত অবমাননা করেছে। কেননা সুপ্রিম কোর্ট সুনির্দিষ্ট করে বলেছেন, নদীর জায়গা কেউ লিজ বা হস্তান্তর করতে পারবে না। কিন্তু বন্দর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নদীর জায়গা ইজারা দিয়েছে অবৈধভাবে। বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আমরা আদালত অবমাননার মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

চট্টগ্রাম বন্দরের সহকারী ব্যবস্থাপক (ভূমি) মোহাম্মদ রায়হান উদ্দিন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘হাইকোর্ট লালদিয়ার চরের মতো যদি ইনকনট্রেড লিমিটেডের অফডককে কর্ণফুলী নদীর তীরের অবৈধ স্থাপনা হিসেবে চিহ্নিত করে উচ্ছেদের নির্দেশ দেয়, তাহলে আমরা সেই আদেশও বাস্তবায়ন করবো।’

 

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর