মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ৩০ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা মতামত

চসিক নির্বাচন আসন্ন কিন্তু জনগণ নির্বাক



হাসিনা আকতার নিগার
প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি ২০২১, ৮:০৫ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচন আসন্ন। কিন্তু শহরে তেমন কোন নির্বাচনী উত্তাপ নেই। নির্বাক জনগণ৷ ২০২০ সালের ৩০ মার্চ চসিক নির্বাচন স্থগিত হয় কোভিড-১৯ এর কারণে। বিগত বছরে সব কিছু স্থবির হয়ে পড়েছিল করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার জন্য। জনজীবনের সব কিছু এলোমেলো করে দিয়েছে লকডাউন। জীবন বাঁচানোর দায় নিয়ে ঘরবন্দি মানুষ অনেক কিছু থেকেই দূরে সরে গিয়েছিল। যার ফলে অর্থনৈতিকভাবে বৈরী পরিবেশের শিকার হয়েছে কম বেশি সকল মানুষ। সে অবস্থায় চসিকসহ দেশে কোন ধরনের নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি নির্বাচন কমিশনের পক্ষে। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের নির্বাচনী প্রচার স্থগিত করে করোনা মহমারীতে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে সেবার হাত নিয়ে।

বর্তমানে দেশে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রিত থাকার কারণে স্থানীয় নির্বাচনগুলো ক্রমান্বয়ে সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তার ধারাবাহিকতায় আগামী ২৭ জানুয়ারি চসিক নির্বাচন সম্পন্ন হবার কথা। সে হিসাবে দলগুলো তাদের পূর্ব নির্ধারিত নির্বাচনী প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইবে জনগণের পক্ষে সেটাই স্বাভাবিক। তবে যে বিষয়টি লক্ষ্যণীয় তা হলো, চট্টগ্রামবাসীর মাঝে চসিক নির্বাচন নিয়ে তেমন কোন আগ্রহ নেই। হয়তোবা দেশের মানুষের রাজনীতির প্রতি অনাগ্রহেরই প্রতিফলন এটি। আর তারা মনে করে এ দেশে এখন আর ভোট দিয়ে কিছু হয় না। ক্ষমতায় আসে ক্ষমতাসীনরা।

নানা ঘটনার অবতারণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবারের চসিক নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে চট্টগ্রামের আওয়ামী রাজনীতির দীর্ঘদিনের নীরব একনিষ্ঠ কর্মী ও নেতা রেজাউল করিমকে। তিনি চট্টগ্রামের আওয়ামী রাজনীতিতে মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী ও একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসাবে সমাদৃত। করোনার আগে জনগণের কাছে নামটি নতুন মনে হলেও করোনাকালীন সময়ে তার সেবামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে তিনি পরিচিত হয়েছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মেয়র পদপ্রার্থী হলেন ডা. শাহাদাত হোসেন। চট্টগ্রামের বিএনপির রাজনীতিতে তিনি অতি পরিচিত মুখ।

ভোটের রাজনীতিতে কার পাল্লা ভারী তার হিসেব করা আজকাল সম্ভব হয় না। কারণ নির্বাচন নিয়ে জনগণের তেমন কোন উচ্ছ্বাস নেই। সাধারণ মানুষের ধারণা ভোট দিয়ে এখন কিছু হয় না। বরং নিজেরা কাজ করে খেয়ে পরে বেঁচে থাকাটাই বড় প্রশ্ন। করোনাভাইরাসের হানা নিয়ে একদিকে আতংক অন্যদিকে আয়ের পথ রুদ্ধ হবার শংকাতে রাজনীতি নিয়ে ভাবার অবকাশ কম। তাছাড়া যে বিষয়টি জনগণকে ভোট দিতে নিরুৎসাহিত করে তা হলো, দেশের বিগত সময়ের জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পদ্ধতির প্রশ্নবিদ্ধতা।

২৭ জানুয়ারি চসিক নির্বাচনে জনগণের সম্পৃক্ততা সবচেয়ে বেশি দরকার ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের। দীর্ঘ দিন ধরে সরকার হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ। দেশে বিরোধী দল বলতে তেমন কেউ মাঠে নেই। ঢাকার পর চট্টগ্রামের রাজনীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে দেশের জনগণের কাছে। তাই চসিক নির্বাচনে জনগণের উপস্থিতি ও ভোট একান্ত কাম্য। কেননা ভোটের উপস্থিতি হার কমলে আওয়ামী লীগের বিজয় আবারো প্রশ্নবানে জর্জরিত হবে ঢাকার মেয়র নির্বাচনের মতো।

দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, চসিক নির্বাচনে বাকি আছে মাত্র ২১ দিন। কিন্তু মানুষের নজর কাড়ছে না প্রার্থীেদের তেমন কোন প্রচার প্রচারণা। কোভিড-১৯ এর নিয়ম মেনে ভোটের জন্য জনগণকে ভোট দিতে উৎসাহিত করতে হবে দলের প্রার্থী ও সর্মথকদের।

‘আমি ভোট না দিলেও ভোট হয়ে যাবে’-এ চিন্তাকে দূর করতে হলে মানুষকে স্বাধীনভাবে তাদের ভোটের অধিকার প্রদানের নিশ্চয়তা দিতে হবে। নির্বাচনে জয় পরাজয় থাকবেই। এ জয় পরাজয়কে স্বীকার করে সব দলকে জনগণের কাছে যেতে হবে। আর এ জন্য চসিক নির্বাচনে চট্টগ্রামবাসীর চায়ের কাপে নির্বাচনের উত্তাপ তুলতে হবে বিশেষভাবে। আর সে উত্তাপ উদাহরণ হয়ে থাকবে আগামী দিনের জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে। দেশের মানুষ কাছে এমনটাই প্রত্যাশা হোক সকল দলের।

সূত্র: চ্যানেল আই অনলাইন

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর