সোমবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ১৯ কার্তিক, ১৪৩১ | ১ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা মতামত

মুজিব, আওয়ামী লীগ ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ


গৌতম রায় প্রকাশের সময় :২৩ নভেম্বর, ২০২০ ১২:২৬ : পূর্বাহ্ণ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আওয়ামী লীগকে বিভাগ উত্তরকালে যেভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার উপর প্রতিষ্ঠিত করে, সাম্প্রদায়িকতাকে ভিত্তি করে যে দেশের উদ্ভব ঘটেছে, সেই দেশে ধর্মগত জাতীয়তাবাদকে অস্বীকার করে সংস্কৃতিগত জাতীয়তাবাদকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তার নজির ইতিহাসে আর দ্বিতীয়টি নেই। সোভিয়েত ,চীন, কিউবা, অতীতের পূর্ব ইউরোপের দেশগুলি বিপ্লবের ভিতর দিয়ে রাষ্ট্রব্যবস্থার বদল আনলেও, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে সবার উপরে স্থান দিয়ে, ধর্মীয় বিভাজনকে অস্বীকার করে, ভাষাকে ভিত্তিমূলে রেখে সাংস্কৃতিক সাযুজ্যকে দেশগঠনের মূল উপাদান হিসেবে স্থাপনের যে দৃষ্টান্ত বঙ্গবন্ধু রেখেছিলেন, তেমনটা ওই দেশগুলি ও রাখতে পারে নি।

ছাত্রজীবনে রাজনীতির সঙ্গে যখন বঙ্গবন্ধু সম্পৃক্ত হতে শুরু করেন, সেইসময়েই তাঁর চেতনায় সবথেকে বড় ভূমিকা পালন করেছিল তাঁর অসাম্প্রদায়িক চেতনা। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী , বঙ্গবন্ধুর কলকাতার ছাত্রজীবনে একটা সঠিক দিশার উপরে তাঁর বোধকে প্রতিষ্ঠিত করতে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল। সোহরাওয়ার্দী বলতেই পশ্চিমবঙ্গের একটা বড় অংশের মানুষদের কাছে ‘৪৬ সালের ১৬ জানুয়ারি ঘিরে একটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছবিই ফুটিয়ে তোলার দস্তুর হয়ে গেছে। তাই মুক্তিযুদ্ধের কালে এপার বাংলার বাঙালি যতোই পাক হানাদারবাহিনী সম্পর্কে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠুক না কেন, খানিকটা ভুল ইতিহাসবোধের কারণে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের প্রথমপর্ব ঘিরে বেশ খানিকটা ভুল ধারণাই করতেন।

সোহরাওয়ার্দী সাম্প্রদায়িক ছিলেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত-ভাবে হিন্দু বিদ্বেষী ছিলেন, ‘গ্রেট ক্যালকাটা কিলাংয়ে তাঁর ভূমিকা আদৌ ইতিবাচক ছিল না- হিন্দু সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি প্রসূত এই ধারণাই এপার বাংলার বাঙালি সমাজের একটি বড় অংশের ভিতরে গেঁথে গিয়েছিল। সেই ধারণারই বশবর্তী হয়ে, সোহরাওয়ার্দীর সেই সময়ের রাজনৈতিক তরুণ সতীর্থ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সম্পর্কে একটা ভুল ধারণা এপারের বাঙালিদের ভিতর তৈরি করে দিয়েছেন একাংশের রাজনীতিকেরা। সোহরাওয়ার্দীকে ঘিরে যে উদ্দেশ্যমূলক প্রচার চলেছিল, যার জেরে আজ ও তাঁর সঠিক মূল্যায়ন করতে এপারের বাঙালির একটা বড় অংশ দ্বিধান্বিত, তার জের বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও এপারের বাঙালির একটা অংশকে অনেকখানিই প্রভাবিত করেছিল। অথচ মুসলিম লীগকে ব্যবহার করে একাংশের দুর্বৃত্তদের অপকর্মকে ঠেকাতে সোহরাওয়ার্দীর যে ইতিবাচক ভূমিকা, তাঁর তরুণ সহযোদ্ধা হিসেবে শেখ মুজিবের যে অবদান, স্বয়ং মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে সোহরাওয়ার্দীর কথোপকথনের কালে মুজিবের যে ঐতিহাসিক অবদান, সেগুলি এপার বাংলার ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে উহ্যই থেকে গেছে। তাই দাঙ্গার বিরুদ্ধে রাজনীতির প্রাঙ্গণে পা দিয়েই মুজিবের দাঙ্গার বিরুদ্ধে যে সদর্থক ভূমিকা, সে সম্পর্কে সম্যক আলোচনার অভাবে মুজিবের সার্বিক ঐতিহাসিক ভূমিকা কার্যত অনালোচিতই থেকে যায়। এপার বাংলায় এমন একটি ধারণা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে যে, পূর্ব পাকিস্তানে আইয়ুব খান বিভাজনের উদ্দেশে ‘৬৪ সালে দাঙ্গা বাঁধিয়ে দেওয়ার পর, শেখ মুজিব নাকি দাঙ্গার ভয়াবহতার সম্যক বিপদ সম্পর্কে অবহিত হয়ে দাঙ্গা বিরোধী হয়ে ওঠেন।

সামাজিক গণমাধ্যমে বেলেঘাটায় ‘৪৬ এর আগস্টের ভয়াবহকতির পর গান্ধীজীর অবস্থান কালে সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে তাঁর আলোচনার সময়কালে উপস্থিত তরুণ বঙ্গবন্ধুর অংশগ্রহণের ছবিটি আসার পর ও সে অর্থে রাজনৈতিক জীবনের প্রথমপর্ব থেকেই ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি বঙ্গবন্ধুর অনুরাগ ঘিরে তেমন একটা আলোচনা হয় না। ফলে সাধারণ মানুষের ভিতর নিজের দলের বৃত্তের বাইরে জাতীয় নায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর যে ভূমিকা , সেটির সম্যক আলোচনাও হয় না। তাই এখনো অনেকেরই ধারণা আওয়ামী লীগের নেতা হিশেবে, আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনৈতিকদের সম্পর্কে আদৌ ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেন নি বঙ্গবন্ধু। সোহরাওয়ার্দীকে কলঙ্কিত করতে আবুল হাশিম, শরৎচন্দ্র বসু, কিরণশঙ্কর রায়, বদিউজ্জামান ইলিয়াস প্রমুখের যে অখণ্ড বাংলার লক্ষ্যে আন্দোলন, তাকেও খুব একটা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা এপার বাংলার ঐতিহাসিকদের ভিতরে অধ্যাপক অমলেন্দু দে ছাড়া আর কেউ করেন নি। তাই সোহরাওয়ার্দীর তরুণ সহযোগী হিশেবে বাঙালির স্বার্থকেই সব থেকে বড়ো করে দেখার ক্ষেত্রে এই ‘অখণ্ড বাংলা’র আন্দোলন পর্যায়ে কলকাতার বুকে তরুণ শেখ মুজিব যে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন– সে সম্পর্কে ভারতের জনগণের সম্যক ধারণা নেই বললেই চলে। তাই বদরুদ্দিন উমরের মতো অতি বামপন্থীদের পক্ষে প্রকৃত ইতিহাস থেকে সরে গিয়ে মহান ভাষা আন্দোলনকালে(১৯৫২) শেখ মুজিব বাথরুমের জানালা দিয়ে একটি চিঠি পাঠানো ছাড়া আর কোনো ভূমিকা পালন করেন নি, একথা খুব সহজেই বলা সম্ভব হয়েছে।

দেশভাগের অব্যবহিত পরেই শেরে বাঙ্গাল ফজলুল হক, সোহরাওয়ার্দী, আবুল কাশেম, মওলানা আকরম খাঁ, কিছুটা পর্যায়ে যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল, ফণীভূষণ মজুমদার প্রমুখ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যাঁদের কারো সঙ্গে নীতিগত প্রশ্নে সখ্যতা ছিল বঙ্গবন্ধুর, কারো সঙ্গে ছিল না, তেমন সব ব্যক্তিত্বদের রাজনৈতিক ভূমিকাকে অতিক্রম করে ধীরে ধীরে নিজেকে অবিসংবাদিত নেতা হিশেবে খুব অল্প সময়ের ভিতরে প্রতিষ্ঠিত করা একটা অত্যাশ্চর্য ঘটনা। মহাত্মা গান্ধী থেকে মার্টিন লুথার কিং কিংবা লেনিন থেকে ফিদেল কাস্ত্রো, সকলেই জনজাগরণের প্রতীক হিশেবে প্রতিষ্ঠা পেতে একটা দীর্ঘসময় ধরে ব্রতী থাকতে হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত অল্প সময়ের ভিতরে, কঠোর পরিশ্রম, প্রবল আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে এইসব প্রাতঃস্মরণীয় জনজাগরণের ব্যক্তিদের সময়ক্ষেপণকে অতিক্রম করে নিজেকেই কেবল প্রতিষ্ঠিত করেন নি, নিজের সময়কেও অনেকখানি সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন।

‘অখণ্ড বাংলা’র আন্দোলনের সঙ্গে সোহরাওয়ার্দীর মাধ্যমে যেটুকু সংযোগ শেখ মুজিবের হয়েছিল, তাতে দেশভাগ, পাকিস্তান সৃষ্টির পূর্বমুহূর্তেই তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন ধর্মকে ভিত্তি করে কখনো সংস্কৃতির বনিয়াদ তৈরি হতে পারে না।আর ধর্মভিত্তিক সংস্কৃতিকে যদি জাতীয় চেতনার ভিত্তিমূলে স্থাপন করাযায়, তাহলে অচিরেই তা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে।সেই কারণেই ধর্মভিত্তিক জাতীয়তা,’ মুসলিম জাতীয়তাবাদ’ বা হিন্দু-মুসলমানে সংঘাত তৈরি করে বাংলাভাষী মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে, সেই জাতীয়তাবাদের অপপ্রভাব যে অচিরেই গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কট ডেকে আনবে সংস্কৃতির ঘনায়মান অন্ধকারকে ভিত্তি করে, মহান একুশের জন্মলগ্নেই তা খুব ভালোভাবে বুজতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধু।ধর্মকে ভিত্তি করে একটি সংস্কৃতির শিকড়কে যে কোনো অবস্থাতেই কেটে ফেলা যায় না, এটা উপলব্ধি করেই দেশভাগের অব্যবহিত আগে সোহরাওয়ার্দীর আহ্বানে সম্প্রীতির টানে শেখ মুজিব ও গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধীর দরবারে। মুসলিম জাতীয়তাবাদের অন্ধকূপে যদি শেখ মুজিব নিজেকে আবদ্ধ করে রাখতেন , তাহলে এতো সহজে মহান একুশের আন্দোলনের ভিতর দিয়ে মুসলিম জাতীয়তাবাদের কফিনে পেরেক ঠোকার কাজ শুরু হয়ে যেত না এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিজয় বৈজয়ন্তী ও উড়তে না মুক্ত আকাশে।

১৯৫৪ তে অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম লীগের যে শোচনীয় পরাজয় ঘটে , সেই কার্যক্রমের সলতে পাকানোর ক্ষেত্রে তরুণ শেখ মুজিব বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।মুসলিম জাতীয়তার ভিত্তিতে মাত্র কয়েকবছর আগে যে পাকিস্তান কায়েম করেছেন বলে একটা বড় অংশের মুসলিম লীগ নেতারা আত্মশ্লাঘা অনুভব করতেন, যদিও সেই আত্মশ্লাঘার পরিবেশ তৈরিতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের অবদান এবং হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তি আর এসেস আর তাদের সেই সময়কালের রাজনৈতিক সংগঠন হিন্দু মহাসভার বিশেষ অবদান ছিল, সেইসব আত্মশ্লাঘা থেকে উন্মুক্ত হতে বাঙালিকে সবথেকে বেশি উদ্বুদ্ধ করেছিলেন শেখ মুজিব।মুসলিম লীগ কে বারোয়ারি ভাবে সাম্প্রদায়িক শক্তি হিশেবে দেগে দেওয়ার পিছনে হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তির বিশেষ অবদান ছিল।সেই অবদানকে সম্পূর্ণতা দিতে হিন্দু সাম্প্রদায়িক , মৌলবাদী শক্তিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও কম শক্তি যোগায় নি।কিন্তু মুসলিম সাম্প্রদায়িক শক্তি কিন্তু অবিভক্ত কালে এপার বাংলার মুসলিম অধ্যুষিত জেলাগুলি, যেমন মুর্শিদাবাদ, মালদহ, বীরভূম, বর্ধমানের একটা অংশ , হুগলীর একটা অংশ, অবিভক্ত চব্বিশ পরগণার বিস্তৃত অঞ্চলে মুসলিম সাম্প্রদায়িকতাকে সম্বল করে , হিন্দু-বিদ্বেষের চরম পরাকাষ্ঠা দেখায় নি।এই শিক্ষাটি কিন্তু সোহরাওয়ার্দীর কাছ থেকে গ্রহণ করেছিলেন মুজিব।অবিভক্ত কালে, পূর্ববঙ্গের হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ যে জেলাগুলিতে হিন্দু মহাসভার এন সি চ্যাটার্জী,শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীরা চরম মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়েছিল , বিভাজনের পর , সেইসব জেলাগুলির সংখ্যালঘু হিন্দুদের জানমালের নিরাপত্তা দিতে রাজনৈতিক ভাবে সবথেকে বেশি সক্রিয় ছিলেন শেখ মুজিব।পাকিস্তানে সংখ্যালঘু হিন্দুর স্বাধিকার প্রতিষ্ঠায় শেখ মুজিবের সার্বিক অবদান পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর সংখ্যালঘুর স্বাধিকার রক্ষার লড়াইয়ের সঙ্গে সমান ভাবে তুলনীয়।

যে মুসলিম জাতীয়তাবাদকে সম্বল করে , একটি বিশেষ ধর্মের পবিত্র স্থান হিশেবে পাকিস্তান তৈরি হল, সেই মুসলিম জাতীয়তাবাদের ভিত্তিকেই অকেজো হিশেবে পরিণত করতে, মুসলিম জাতীয়তাবাদের উদগাতা, মুসলিম লিগকে নির্বাচনী সংগ্রামে পর্যুদস্ত করে দেওয়াটা একেবারে মুখের কথা ছিল না।এই অসম্ভব কে সম্ভব করে তুলেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পশ্চিম পাকিস্তানের আর্থ- সামাজিক- রাজনৈতিক- সাংস্কৃতিক শোষণের পাল্টা হিশেবে ধর্মনিরপেক্ষতার বাতাবরণকে তীব্র করে তুলে।এই বাতাবরণ তৈরির ক্ষেত্রে মহান একুশের আন্দোলনের চেতনা এবং দৃষ্টিভঙ্গি বিশেষ ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছিল।ধর্ম নয়, একটি জাতিকে সংসত করতে সবথেকে বড় ভূমিকা নেয় ভাষা এবং সংস্কৃতি- এই বোধকে হাতেকলমে প্রয়োগ করে বিশ্ব রাজনীতিতে শেখ মুজিব এক অনন্য সাধারণ নজির স্থাপন করলেন, ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের মাত্র কয়েক বছরের ভিতরেই।

‘৫৪ তে অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচন একদিক থেকে যেমন সেই দেশের আগামীকালের ভাগ্যনিয়ন্ত্রণের একটি দিশা জোগায়, তেমনি ই আওয়ামী লীগ দলটি ই যে আগামী দিনে সাম্প্রদায়িকতামুক্ত একটি দেশ গঠনে সবথেকে বড় নির্ণায়ক শক্তি হিশেবে উঠে আসবে, এটাও পরিষ্কার করে দেয়। ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক প্রবাহ অবিভক্ত পাকিস্তানে প্রবাহিত করবার ক্ষেত্রে সীমান্ত গান্ধী খান আবদুল গফ্ ফর খান, তাঁর পুত্র ওয়ালি খান, ফজলুল হক, সোহরাওয়ার্দীর, আবুল হাশেম প্রমুখ যে আলোকবর্তিকা জ্বেলেছিলেন, সেই ধারাপ্রবাহ কেই আরও প্রসারিত করে, স্বাধীন সার্বভৌমবাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনার ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতা, হিন্দু মুসলমানের ভিতর সম্প্রীতি, সমাজতান্ত্রিক চিন্তা চেতনা, পবিত্র ইসলামের প্রতি যাবতীয় শ্রদ্ধা অক্ষুণ্ণ রেখে , আধুনিক , বিজ্ঞানমনষ্ক মানসিকতায় নতুন প্রজন্মকে পরিচালিত করবার ক্ষেত্রে কেবলমাত্র সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশেই নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়াতে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।

মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিকা রচনায় ঐতিহাসিক ছয় দফার আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থান- প্রতিটি স্তরের আন্দোলনকে ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার উপরে স্থাপন করবার মূল কৃতিত্ব বঙ্গবন্ধুর। আজ গোটা দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িকতার দাপটের এই ভয়ঙ্কর সময়ে, পাকিস্তানের যাবতীয় ষড়যন্ত্রকে বানচাল করতে বঙ্গবন্ধু যেভাবে ধর্মনিরপেক্ষ চেতনাকেই তাঁর লড়াইয়ের একটা মূল মন্ত্র হিশেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, তার সম্যক চর্চার ভিতর দিয়েই ভারত, বাংলাদেশ, এমনকি পাকিস্তানেও ধর্মান্ধ মৌলবাদী প্রবণতা, সাম্প্রদায়িক চেতনার বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব।

লেখক: ইতিহাসবিদ ও গবেষক। পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।

সূত্র: চ্যানেল আই অনলাইন

 

মন্তব্য করুন


আরও খবর