রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৯:১৫ পূর্বাহ্ণ
দেশের বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ এবং তার পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)।
গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে আয়োজিত এক কর্মশালায় সিআইসির মহাপরিচালক আহসান হাবিব সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
ব্যাংক খাতে এস আলমের লুটপাটের তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরে আহসান হাবিব বলেন, এস আলমের কর ফাঁকির অনুসন্ধানে নেমে আমরা তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছি। গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত পাঁচ বছর তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থিতি ছিল ৩৬ হাজার কোটি টাকা। ৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা ব্যাংক সুদ পেয়েছে। এর অধিকাংশই তারা শো করে নাই। আমরা কাজ করছি এখন।
সিআইসির মহাপরিচালক বলেন, এস আলমের দুই ছেলে জালিয়াতি করে ৫০০ কোটি টাকা সাদা করেছে। কিন্তু ঐ ব্যাংক আজ পর্যন্ত আমাকে তথ্য দেয়নি। তদন্ত করে দেখা গেল, এসআইবিএলের পটিয়া শাখায় ২১ ডিসেম্বরে পে অর্ডার কেটেছে। পরে ক্লিয়ারিং হয়। তখন সে ব্যাংক ওলটপালট করে আগের ডেটে পে অর্ডার দেয়। এটা হেড অফিস থেকে করা হয়। আরও অনেক সমস্যা আছে। আমরা ধরেছি।
প্রসঙ্গত, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিশেষ আনুকূল্যে এস আলম গ্রুপের দখলে ছিল ৭ ব্যাংক। এসব ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে অন্তত ২ লাখ কোটি টাকা বের করে তার বেশিরভাগই পাচার করেছে। সরকার বদলের পর ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অভিযোগ আছে, এস আলম গ্রুপ এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো ২০১৭ সাল থেকে গত জুনের মধ্যে ছয়টি ব্যাংক থেকে ৯৫ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।
ব্যাংকিং খাতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পর সপরিবারে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ। ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর তিনি ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাদের তিন ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলম ও আসাদুল আলম মাহির বাংলাদেশি পাসপোর্ট প্রত্যাহার করেন। একই দিন বিদেশি নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসের (পারমানেন্ট রেসিডেন্সিয়াল) অনুমোদন পায় পরিবারটি।
তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে এসব সুবিধা দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অর্থ পাচারের পথ সহজ করা এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জবাবদিহি এড়াতে এমন কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
গত এক দশক ধরে সিঙ্গাপুরে সাইফুল আলম প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা গড়ে তুলেছেন। সেখানে হোটেল, বাড়ি, রিটেইল স্পেসসহ অন্যান্য সম্পত্তি কিনেছেন এবং সাইফুল আলম বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই বিদেশে ব্যবসা করেছেন।
সমালোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ ও তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। গত বছরের ২২ আগস্ট রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আদাবর থানায় পোশাককর্মী মো. রুবেল হত্যার ঘটনায় রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি এ মামলা দায়ের করেন।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনকে করের আওতায় আনলো এনবিআর