রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক
প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ
রাজধানী দামেস্ক থেকে পালিয়ে রাশিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন সিরিয়ার স্বৈরশ্বাসক বাশার আল-আসাদ। প্রশ্ন উঠেছে, দামেস্ক থেকে মস্কোতে কীভাবে পালালেন আসাদ, কারাই তাকে সাহায্য করলেন পালাতে?
রাশিয়ার বার্তা সংস্থা তাস ও রিয়া নভস্তির বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মস্কোয় পৌঁছেছেন। মানবিক দিক বিবেচনা করে রাশিয়া তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে।
সিএননের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসাদের বিরুদ্ধে গত ২৭ নভেম্বর থেকে যখন বিদ্রোহ শুরু হয় তখন নিজেকে একটু আড়াল করে রাখছিলেন তিনি। তবে গত সপ্তাহে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন আসাদ। এরপর তিনি অঙ্গীকার করেন যে তিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করবেন।
গত শনিবার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক ঘিরে ফেলে বিদ্রোহীরা। তখনই একটি সূত্র সিএনএনকে জানায়, শহরের কোথাও আসাদকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আসাদের বাসভবনেও ছিল না তার রক্ষীরা। তখন থেকেই জল্পনা চাউর হয়, শহর ছেড়ে পালিয়েছেন আসাদ।
তবে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্যালয় প্রাথমিকভাবে এই তথ্য প্রত্যাখ্যান করে। বলা হয়, কিছু বিদেশি মিডিয়া ভুয়া খবর এবং গুজব ছড়াচ্ছে। এরপর বিদ্রোহীরা রোববার যখন দামেস্ক দখল করে তখন তারা আসাদকে খোঁজা শুরু করে। কিছু যোদ্ধা আসাদের বাসভবনে ভাঙচুর চালায়।
এরপরেই রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, আসাদ প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়তে এবং সিরিয়া ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেইসঙ্গে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের নির্দেশনা দিয়েছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাশিয়া এসব আলোচনায় অংশ নেয়নি। এরপরেই রাশিয়া জানায়, আসাদ মস্কোতে পৌঁছেছেন।
বিদ্রোহীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র সিএনএনকে বলেছেন, রাশিয়ার নিরাপত্তায় আসাদ দামেস্ক ছাড়েন।
আরেকটি সূত্র জানায়, সিরিয়ার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় লাতাকিয়ায় যান আসাদ- যেখানে রাশিয়ার একটি বিমানঘাঁটি আছে।
ফ্লাইটরাডার ২৪-এর তথ্য অনুযায়ী, দামেস্ক থেকে ছাড়া ইলিউশিন৭৫ উড়োজাহাজটি প্রথমে সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে উড়ে যায়। কিন্তু সেখান থেকে পরে ইউটার্ন নিয়ে উড়ে যেতে শুরু করে এবং কয়েক মিনিট পর সেটি মানচিত্র থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। অদৃশ্য হওয়ার সময় উড়োজাহাজটি হোমসের ওপর ছিল।
এর আগে, সিরিয়ার বিদ্রোহী যোদ্ধাদের মাত্র ১২ দিনের অভিযানে রোববার বাশার সরকারের পতন ঘটে। এর মধ্যে দিয়ে দেশটিতে তার দুই যুগের শাসনের অবসান ঘটে। তারও আগে, বাশারের বাবা হাফিজ আল-আসাদ প্রায় ২৯ বছর প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
২৩ বছরের বেশি সময় ধরে সিরিয়া শাসন করেছেন বাশার আল-আসাদ। তাকে সমর্থন দিয়ে আসছিল ইরান ও রাশিয়া। তবে গত ২৭ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) অভিযানে কার্যত আসাদ যুগের অবসান হলো।
২৭ নভেম্বর থেকে বিদ্রোহীরা আলেপ্পো, ইদলিব এবং হামাসহ গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দখল করতে থাকে। অবশেষে বিদ্রোহীরা দামেস্কে ঢুকে পড়লে বাশার আল-আসাদের বাহিনী রাজধানী থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়। এভাবে ৬১ বছরের বাথ পার্টির শাসন এবং ৫৩ বছরের আসাদ পরিবারের শাসনের অবসান ঘটে।
বাবার মৃত্যুর পর ২০০০ সালে ক্ষমতায় বসেছিলেন বাশার। শুরুতে সংস্কারের পথে হাঁটলেও পরে বাবার মতোই কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠেন তিনিও। তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘণ ও বিরোধীদের দমনে ব্যাপক নিপীড়ন চালনোর অভিযোগ রয়েছে।
এর জের ধরে ২০১১ সালে ‘আরব বসন্তের’ সময় বাশারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। ধীরে ধীরে তা রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। তবে ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া ও ইরানের সর্বাত্মক সমর্থন নিয়ে টিকে ছিলেন বাশার।
আরও পড়ুন: মাত্র ১২ দিনে অবসান হলো আসাদের ২৪ বছরের শাসনামল