রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক
প্রকাশের সময় : ৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ৪:২১ অপরাহ্ণ
শতবর্ষী কারও বিয়ে হওয়াটাই বেশ অস্বাভাবিক। সেখানে বর এবং কনে দুজনেই যদি শতবর্ষী হোন তাহলে তো কথাই নেই, একেবারে সোনায় সোহাগা। যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি এমনই এক ঘটনা ঘটেছে। বরের বয়স ১০০ আর কনের ১০২! এই বয়স্ক দম্পতি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে জায়গা করে নিয়েছেন।
১০২ বছরের নারী মার্জোরি ফিটারম্যান এবং ১০০ বছর বয়স্ক পুরুষ বার্নি লিটম্যান ইতিমধ্যেই দীর্ঘ একটা জীবন কাটিয়েছেন। তাদের জীবনসঙ্গীরা মারা যাওয়ার পর আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ায় প্রৌঢ়দের বসবাসের একটি জায়গায় একই ভবনের একই তলায় বাস করতে শুরু করেন তারা। তবে তখন তারা নিশ্চয় কল্পনাও করেননি ঠিক কয়েক দরজার দূরত্বে নতুন ভালোবাসা খুঁজে পাবেন।
গত ১৯ মে তারা নয় বছরের সম্পর্কের পর বিয়ে করেন। তাদের সম্মিলিত বয়স ২০২ বছর ২৭১ দিন, এটি তাদের পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক দম্পতি হিসেবে বিয়ে করার দিক থেকে সম্প্রতি গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে জায়গা করে দিয়েছে।
বার্নির মার্জোরির সঙ্গে প্রথম দেখা তাদের তলার একটি পার্টিতে। সেখান থেকেই তাদের সম্পর্ক শুরু হয়। একই দিনে তাদের প্রথম ডেট হয়, যেদিন বার্নির এক প্রপৌত্রী জন্ম নেন।
অবশ ভাগ্যে থাকলে অনেক আগেই একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পারতেন। কারণ তারা একই সময়ে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। তবে সেসময় তাদের দেখা হয়নি। কর্মজীবনে বার্নি ছিলেন একজন প্রকৌশলী এবং মার্জোরি একজন শিক্ষক।
বার্নির নাতনি সারা সিচারম্যান জানান, তারা এই দুজনের সম্পর্কে দারুণ খুশি। পরিবারের সদস্যরা খুব সৌভাগ্যবান যে, তারা একে অপরকে পেয়েছেন এবং বিশেষ করে মহামারির সময়ে একে অপরের পাশে থাকতে পেরেছেন।
তিনি আরও বলেন, যদিও পরিবার ভেবেছিল যে তারা বয়সের কারণে হয়তো বিয়ে করবেন না। তবুও যখন তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন, সেটি তাদের জন্য ছিল একটা বড় চমক।
সারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিয়ের দিন বলেন, পৃথিবীতে এত দুঃখ এবং ভয়ের মাঝে, এমন কিছু শেয়ার করতে পারা সত্যিই সুন্দর যা মানুষকে আনন্দ দেয়। আজ আমার ১০০ বছর বয়সী দাদা তার ১০২ বছর বয়সী বান্ধবীকে বিয়ে করলেন! তারা দুজনই তাদের প্রথম সঙ্গীর সঙ্গে ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে বিবাহিত ছিলেন এবং এখন ১০০ বছর বয়সে আবার ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছেন।
এই দম্পতি একসঙ্গে খাবার ভাগাভাগি করে খেয়ে এবং বয়স্কদের এই কমিউনিটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। বার্নি তার দীর্ঘ জীবনের রহস্য হিসেবে বই পড়া এবং বর্তমান বিষয়ে আপডেট থাকার কথা বলেছেন। আর মার্জোরি তার দীর্ঘায়ুর রহস্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন বাটার মিল্কের কথা।
তারা একে অপরের রসবোধ এবং বুদ্ধিমত্তা খুব পছন্দ করেন। সারা বলেন, ‘তারা একে অপরকে তরুণ ও উজ্জীবিত রাখতে সহায়তা করেন।
মার্জোরির নিজের কোনো সন্তান নেই, তবে এই বিয়ের মাধ্যমে তিনি বার্নির দুই সন্তান এবং ১৩ জন নাতি-পুতিকে পেয়েছেন।
বিয়ের অনুষ্ঠানটি তাদের সেই বয়স্কদের বসবাসের জায়গাতেই হয়, যেখানে তাদের প্রথম পরিচয়। বার্নির স্বজনদের উপস্থিতিতে তাদের দুজনকেই হুইলচেয়ারে করে বিয়ের অনুষ্ঠানে নিয়ে আসা হয়।
ইহুদি হওয়ায় তাদের বিয়ে পরিচালনা করেন রাবি অ্যাডাম ওলবার্গ। তিনি তার ভাষণে বলেন, ‘তোমরা দুজনই ইতিমধ্যেই জ্ঞান ও অভিজ্ঞতায় পূর্ণ জীবন কাটিয়েছো। তোমাদের মধ্যে একে অপরের প্রতি যে ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা তৈরি হয়েছে, তা আর বদলাবে না।’
ওলবার্গ স্কাই নিউজকে বলেন, ‘এই দম্পতি শেষ পর্যন্ত এমন একপর্যায়ে পৌঁছেন, যেখানে শুধু ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে থাকা নয়, বরং স্বামী-স্ত্রী হওয়াটাই সঠিক পদক্ষেপ বলে মনে হয়েছিল।’
সূত্র: গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস
আরও পড়ুন: বরের বয়স ১০০, কনের ৯৬! সিনেমার গল্পকেও হার মানানো প্রেমকাহিনী