নয় বছর আগে রাজধানীর উত্তরা থেকে সোহেল রানা নামের এক আইনজীবীকে গুমের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা হয়েছে।
মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পুলিশের সাবেক আইজি শহীদুল হক, সাবেক র্যাব ডিজি বেনজীর আহমেদ এবং র্যাবের অজ্ঞাত ২৫ সদস্যকে আসামি করা হয়।
আজ বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরীর আদালতে এই মামলার আবেদন করেন ১৮৫ দিন গুম থাকা ভুক্তভোগী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সোহেল রানা।
আদালত বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করে উত্তরা পশ্চিম থানাকে অভিযোগ এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, সোহেল রানা ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বন্ধু আশরাফুল ইসলাম রিংকুর সঙ্গে উত্তরা ৫নং সেক্টরের ১নং রোডে স্মাইল গ্যালারির সামনে অবস্থান করছিলেন। রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার দিকে একজন হাতে স্মার্ট ডিভাইসসহ এসে পরিচয় জানতে চান। তিনি পরিচয় দেন। পরে তাদের দুজনকে জরুরি কথা আছে বলে একটি গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়।
গাড়িতে উঠার পর তিনি র্যাবের পোশাক পরিহিত দুজনকে এবং আরও ১০/১১ জন বন্দুকধারীকে দেখতে পান। গাড়িতে উঠার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের চোখ বেঁধে ফেলা হয়। হাতে হ্যান্ডকাফ পরানো হয়। সোহেল রানাকে গাড়িতেই বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়। আত্মচিৎকার যেন বাইরে না যায় সেজন্য উচ্চ ভলিউমে ডিজে টাইপের গান চালিয়ে দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর রিংকুকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়।
ঘণ্টাখানেক পর সোহেল রানা বুঝতে পারেন তাকে কোনো এক বিল্ডিংয়ের আন্ডারগ্রাউন্ডে নেওয়া হয়েছে। এসময় তারা খালেদা জিয়াকে নিয়ে গালিগালাজ করতে থাকেন। সেখানে নিয়েও তাকে বৈদ্যুতিক শক দিতে থাকেন। দুই ঘণ্টা পর ৩/৪ জন এসে তাকে ঝুলিয়ে মারতে থাকেন। এতে জ্ঞান হারান তিনি। জ্ঞান ফিরলে তাকে আবার নির্যাতন করা হয়। তার নির্দেশে নির্বাচন কমিশনে আগুন দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চান তারা। তাকে আবারও বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয় এবং মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। এভাবে তার ওপর নির্যাতন চলতে থাকে। তাকে নামাজ পড়তেও বাধা দেওয়া হতো। পিঠমোড়া করে হাতকড়া পরিয়ে তাকে বেঁধে রাখা হতো।
৬ জুন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টার দূরত্বে তাকেসহ কয়েকজনকে অজ্ঞাত স্থানে নেওয়া হয়। ১৩ আগস্ট ভোর ৩টা থেকে ৪টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাকে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। তখনও তার হাত ও চোখ বাধা ছিল। পরে তিনি লোকজনের কাছে জানতে পারেন, তিনি রাজশাহীর গোদাগাড়িতে আছেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, বাদী মুক্ত হয়ে জানতে পারেন, শেখ হাসিনার হুকুমে অন্য আসামিরা দেশে এক নায়কতন্ত্র ও স্বৈরাচার শাসন ব্যবস্থা কায়েমের জন্য দেশে গুমের উদ্দেশে অপহরণ এবং বিনাবিচারে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে এবং তিনি নিজেই নিপীড়নের শিকার।
এর আগে গত ১৩ আগস্ট শেখ হাসিনাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন এস এম আমীর হামজা নামের এক ব্যক্তি।
আরও পড়ুন:
গণহত্যাকাণ্ডের নতুন ভিডিও নিয়ে তোলপাড়
শেখ হাসিনাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
আত্মগোপনে থাকা সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হক গ্রেপ্তার
