আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কোথায় পালিয়ে আছেন-এমন প্রশ্ন রেখে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তিনি না পালিয়ে আমার ঠাকুরগাঁওয়ের বাড়িতে আসতে চেয়েছিলেন। আমি এখন ঠাকুরগাঁওয়ে আছি, আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আমন্ত্রণ জানান।
বিভিন্ন সময় বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম মন্তব্য করেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ না করলে, পালানোর পথ পাবে না।’
এর জবাবে তখন ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘আমরা পালাবো না। এই দেশে জন্ম নিয়েছি, এই দেশেই মরবো। পালাবো না। কোথায় পালাবো? প্রয়োজনে ফখরুল সাহেবের বাসায় গিয়ে উঠবো। কি, জায়গা দেবেন…? না হলে ঠাকুরগাঁওয়ের বাড়ি আছে না, ওই বাড়িতে গিয়ে উঠবো।’
সমাবেশে ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের না পালিয়ে আমার ঠাকুরগাঁওয়ের বাড়িতে আসতে চেয়েছিলেন। এখন তিনি কোথায় পালিয়ে আছেন? আমি এখন ঠাকুরগাঁওয়ে আছি, আমি আপনাকে (ওবায়দুল কাদের) আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন: গণহত্যাকাণ্ডের নতুন ভিডিও নিয়ে তোলপাড়
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাত্র ২২ দিনের বিক্ষোভে পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের।
গত ৩ আগস্ট ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লাখো মানুষের সমাবেশে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে সরকার পতনের এক দফা দাবি ঘোষণা করা হয়।
পরদিন ৪ আগস্ট ঢাকাসহ সারাদেশে ছাত্র-জনতাকে প্রতিরোধ করতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অস্ত্র নিয়ে মাঠে নামে। এ দিন সারাদেশে ১৪ পুলিশ, শিক্ষার্থী ও বিএনপির নেতাকর্মীসহ শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়।
এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন ঘেরাও করতে ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেদিন রাস্তায় নেমে আসেন লাখো মানুষ। শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় অভ্যুত্থানের মুখে পতন হয় স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের।
ওই দিন বেলা আড়াইটার দিকে শেখ হাসিনা গণভবন থেকে হেলিকপ্টারে করে বঙ্গভবনে যান। সেখানে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। এরপর বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।
এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের ক্ষমতার অবসান ঘটে। গত ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এরপর বদলে যেতে শুরু করে দেশের সার্বিক চিত্র।
হাসিনার পতনের পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও জেলা-উপজেলার বিভিন্ন কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া নেতাদের মারধর, হত্যা, বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটছে।
এ অবস্থায় আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগ নেতারা। কেউ কেউ দেশ ছেড়েছেন। তবে ইতোমধ্যে অনেক নেতা বিমানবন্দর, নৌপথে ও সীমান্ত দিয়ে পালানোর সময় আটক হয়েছেন।
গত ১৩ আগস্ট রাজধানীর সদরঘাট এলাকা দিয়ে নৌপথে পালানোর সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে গত ৬ আগস্ট ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরে সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে আটক করা হয়। একই দিন অবৈধ পথে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীকে আটক করে সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড।