রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :১৩ আগস্ট, ২০২৪ ৭:২৫ : অপরাহ্ণ
নৌপথে পালানোর সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা নৌপথে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এ সময় কোস্টাগার্ড তাদের গ্রেপ্তার করে।
ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. মাইনুল হাসান গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, রাজধানীর নিউমার্কেট থানার একটি মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নিউমার্কেট থানা সূত্রে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষে গত ১৬ জুলাই ঢাকা একলেজের সামনে সবুজ আলী (২৬) নামে এক যুবক নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
নিহতের ভাই নুরনবী অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলাটি দায়ের করেছিলেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সেদিন সংঘর্ষের সময় সবুজ মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাত পান। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে নেওয়ার পর জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বিকেল সোয়া ৫টার দিকে সবুজকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনার পর ছাত্রলীগ সবুজকে তাদের কর্মী বলে দাবি করে। পরের দিন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তার জানাজাও পড়ানো হয়। এতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও অংশ নেন।
পরে অবশ্য নূরনবী বলেছিলেন যে তার ভাই সবুজ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। মামলার এজাহারেও ছাত্রলীগের সঙ্গে সবুজের সম্পৃক্ততার বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেননি তিনি।
২০১৮ সালের নির্বাচনে সালমান এফ রহমান ঢাকা-১ আসন থেকে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য হন। পরে তাকে নিজের বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আইনজীবী আনিসুল হক ২০১৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা) থেকে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওইবারই তাকে আইনমন্ত্রী করা হয়। এরপর থেকে তিনি আইনমন্ত্রীর পদে ছিলেন।
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাত্র ২২ দিনের বিক্ষোভে পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের।
গত ৩ আগস্ট ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লাখো মানুষের সমাবেশে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে সরকার পতনের এক দফা দাবি ঘোষণা করা হয়।
পরদিন ৪ আগস্ট ঢাকাসহ সারাদেশে ছাত্র-জনতাকে প্রতিরোধ করতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অস্ত্র নিয়ে মাঠে নামে। এ দিন সারাদেশে ১৪ পুলিশ, শিক্ষার্থী ও বিএনপির নেতাকর্মীসহ শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়।
এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন ঘেরাও করতে ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেদিন রাস্তায় নেমে আসেন লাখো মানুষ। শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় অভ্যুত্থানের মুখে পতন হয় স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের।
ওই দিন বেলা আড়াইটার দিকে শেখ হাসিনা গণভবন থেকে হেলিকপ্টারে করে বঙ্গভবনে যান। সেখানে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। এরপর বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।
এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের ক্ষমতার অবসান ঘটে। গত ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এরপর বদলে যেতে শুরু করে দেশের সার্বিক চিত্র।
হাসিনার পতনের পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও জেলা-উপজেলার বিভিন্ন কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া নেতাদের মারধর, হত্যা, বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটছে।
এ অবস্থায় আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগ নেতারা। কেউ কেউ দেশ ছেড়েছেন। অনেকে পালাতে গিয়ে বিমানবন্দর ও সীমান্তে আটক হয়েছেন।
গত ৬ আগস্ট ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরে সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে আটক করা হয়। একই দিন অবৈধ পথে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীকে আটক করে সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা