রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :১২ আগস্ট, ২০২৪ ১২:২১ : অপরাহ্ণ
আওয়ামী লীগকে দল গোছানোর পরামর্শ দিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে এ দলের (আওয়ামী লীগ) অবদান অনেক। দেশের জন্য আওয়ামী লীগের অনেক অবদান আছে। তাই তারা দল গোছাতে পারে।’
আজ সোমবার সকালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত আনসার সদস্যদের দেখতে গিয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আপনারা ব্যক্তিগত স্বার্থে এতো বড় একটা দলকে নষ্ট করে দেবেন না। প্রতি বিপ্লবের স্বপ্ন দেখলে হাজার-হাজার মানুষের রক্ত ঝরবে। এ অভ্যুত্থান দেশের তরুণ সমাজ করেছে। কোনো রাজনৈতিক দল করেনি। তরুণরা গুলির সামনে বুক পেতে দিয়ে এ বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। তাই অনুরোধ করছি, দয়া করে দেশকে শান্তিতে রাখেন।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা করবেন না। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবেন না। পরিণতি ভালো হবে না। তবে আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে পুনর্গঠন করতে পারেন, এতে কোনো সমস্যা নেই।’
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমরা যদি উসকানি দিতাম তাহলে আপনারা টিকতে পারতেন না। আমরা সেনাবাহিনীকে গুলি না করতে নির্দেশ দিয়েছিলাম। কারণ আমরা কাকে মারবো, সবাই তো এ দেশের জনগণ।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা হয়তো পালিয়ে যেতে পারি। এই জেনারেশন বা ছাত্র-জনতা পালাবে না।’
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাত্র ২২ দিনের বিক্ষোভে পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের।
গত ৩ আগস্ট ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লাখো মানুষের সমাবেশে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে সরকার পতনের এক দফা দাবি ঘোষণা করা হয়।
পরদিন ৪ আগস্ট ঢাকাসহ সারাদেশে ছাত্র-জনতাকে প্রতিরোধ করতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অস্ত্র নিয়ে মাঠে নামে। এ দিন সারাদেশে ১৪ পুলিশ, শিক্ষার্থী ও বিএনপির নেতাকর্মীসহ শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়।
এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন ঘেরাও করতে ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেদিন রাস্তায় নেমে আসেন লাখো মানুষ। শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় অভ্যুত্থানের মুখে পতন হয় স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের।
ওই দিন বেলা আড়াইটার দিকে শেখ হাসিনা গণভবন থেকে হেলিকপ্টারে করে বঙ্গভবনে যান। সেখানে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। এরপর বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।
হাসিনার পতনের পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও জেলা-উপজেলার বিভিন্ন কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। । এ ছাড়া নেতাদের মারধর, হত্যা, বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটছে।
এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের ক্ষমতার অবসান ঘটে। এরপর বদলে যেতে শুরু করে দেশের সার্বিক চিত্র।
গত ৬ আগস্ট দুপুরে জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।
আরও পড়ুন:
জয়-আরাফাতের জুডিশিয়াল ক্যু করার ‘ষড়যন্ত্র ফাঁস’
লাশের মিছিল না দেখতে পদত্যাগ করেছি: শেখ হাসিনা
সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আ.লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি
আ.লীগের কেন্দ্রীয় অফিস এখন ছাত্র-জনতার কার্যালয়
আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিরা কে কোথায়
শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার শেষ চার ঘণ্টা যা ঘটেছিল