বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা রাজধানী

‘আমার ভাই কবরে-খুনি কেন বাহিরে’

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার দাবি


আজ বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে শেখ হাসিনার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।

রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :১২ আগস্ট, ২০২৪ ৬:৩৪ : অপরাহ্ণ

সারাদেশে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ হত্যার দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

আজ সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সংগঠনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এই দাবি জানান।

এ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করারও দাবি জানিয়েছেন তিনি।

‘ক্যাম্পাসে দখলদারিত্বের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং শেখ হাসিনার বিচারের দাবিতে’ এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

এর আগে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আসেন।

বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই কবরে-খুনি কেন বাহিরে’, ‘ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই- খুনি হাসিনার বিচার চাই’, ‘অপরাজনীতির ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’ স্লোগান দেন।

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে হাসিনাকে প্রধান আসামি করে এবং অন্যান্য যারা তার সহযোগী ছিল এবং ফ্যাসিজমের যারা সহযোগী ছিল তাদেরকে আসামি করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে হবে।’

উপদেষ্টাদের উদ্দেশে হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা অনেক উপদেষ্টাদেরকে দেখেছি খুনীদেরকে পুনর্বাসন করার বক্তব্য দিতে। আমরা উপদেষ্টাদেরকে মনে করিয়ে দিতে চাই, ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আপনি উপদেষ্টা হয়েছেন। সুতরাং যখন কোনো বক্তব্য দেবেন আপনার সামনে যেন ৫ আগস্টের গণভবনের চিত্রটা মাথায় থাকে। যারা স্বৈরাচারকে পুনর্বাসন করতে চায়, খুনি হাসিনাকে পুনর্বাসনের সুযোগ দিতে চায়, আমরা ছাত্র জনতা যেভাবে তাদেরকে উপদেষ্টা বানিয়েছি, ঠিক একইভাবে গদি থেকে ছুড়ে নামাতে দ্বিধা করবো না।’

ক্যাম্পাসে দখলদারিত্বের রাজনীতির বিষয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম ছিল। সেই দখলদারিত্বের রাজনীতির পুনর্বাসন করতে দেওয়া হবে না। ক্যাম্পাসকে ছাত্ররাজনীতি মুক্ত রাখতে হবে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা আজকে আপনাদের কিছু বিষয়ে সতর্ক করতে এসেছি। আমরা ৫ আগস্ট দেশ থেকে স্বৈরাচার তাড়ানোর পর কিছু কুচক্রী মহল বিচার বিভাগীয় ক্যু করার চেষ্টা করছিল। আমরা ছাত্র-জানতা তা রুখে দিতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের বিপ্লবকে নস্যাৎ করতে এখনো একটি মহল ক্যু করার ষড়যন্ত্র করছে। আমরা ছাত্র-জনতা তাদের পরিকল্পনা সফল হতে দেবো না।’

ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, ‘আমরা সর্বশক্তি দিয়ে হাসিনার সব ষড়যন্ত্রকে রুখে দেবো। আওয়ামী লীগ পরাজিত শক্তি নানান কূটকৌশল আঁকছে। আমরা ছাত্র-জনতা কোনোভাবে ১৫ আগস্টের ক্যু’র পরিকল্পনা সফল হতে দেবো না।’

উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাত্র ২২ দিনের বিক্ষোভে পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের।

গত ৩ আগস্ট ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লাখো মানুষের সমাবেশে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে সরকার পতনের এক দফা দাবি ঘোষণা করা হয়।

পরদিন ৪ আগস্ট ঢাকাসহ সারাদেশে ছাত্র-জনতাকে প্রতিরোধ করতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অস্ত্র নিয়ে মাঠে নামে। এ দিন সারাদেশে ১৪ পুলিশ, শিক্ষার্থী ও বিএনপির নেতাকর্মীসহ শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়।

এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন ঘেরাও করতে ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেদিন রাস্তায় নেমে আসেন লাখো মানুষ। শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় অভ্যুত্থানের মুখে পতন হয় স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের।

ওই দিন বেলা আড়াইটার দিকে শেখ হাসিনা গণভবন থেকে হেলিকপ্টারে করে বঙ্গভবনে যান। সেখানে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। এরপর বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।

হাসিনার পতনের পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও জেলা-উপজেলার বিভিন্ন কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। । এ ছাড়া নেতাদের মারধর, হত্যা, বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটছে।

এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।

শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের ক্ষমতার অবসান ঘটে। এরপর বদলে যেতে শুরু করে দেশের সার্বিক চিত্র।

গত ৬ আগস্ট দুপুরে জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।

আরও পড়ুন: 

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

জয়-আরাফাতের জুডিশিয়াল ক্যু করার ‘ষড়যন্ত্র ফাঁস’

সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আ.লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর