রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক
প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট ২০২৪, ২:২১ অপরাহ্ণ
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এই প্রথম নীরবতা ভাঙলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্ষমতা থেকে উৎখাতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যাতে আমাকে লাশের মিছিল দেখতে না হয়, তাই পদত্যাগ করেছি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার তার দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে একটি বার্তা দিয়েছেন। এই বার্তায় তিনি এমন অভিযোগ করেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যদি যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সেন্টমার্টিন ও বঙ্গোপসাগর ছেড়ে দিতাম, তাহলে আমি ক্ষমতায় থাকতে পারতাম।’
বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকটের পেছনে ‘বিদেশি শক্তির হাত’ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়ার কয়েক দিনের মাথায় এমন অভিযোগ তুলেছেন শেখ হাসিনা।
বিবৃতিতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি পদত্যাগ করেছি, যাতে আমাকে লাশের মিছিল দেখতে না হয়। ছাত্রদের লাশ নিয়ে তারা ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি তা করতে দেইনি, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। আমি আমার দেশের জনগণের কাছে অনুরোধ করছি, দয়া করে মৌলবাদীদের দ্বারা প্রতারিত হবেন না।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমি যদি দেশে থাকতাম, তাহলে আরও প্রাণহানি হতো, আরও সম্পদ ধ্বংস হয়ে যেতো। আমি প্রস্থান করার জন্য অত্যন্ত কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই পরাজয় আমার কিন্তু এই বিজয় জনগণের।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি, আমি আপনাদের বিজয়ের মাধ্যমে এসেছি, আপনারা আমার শক্তি ছিলেন। এরপর আপনারা আমায় চাননি, আমি সরে গেছি এবং পদত্যাগ করেছি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘অনেক নেতাকে হত্যা করা হয়েছে, কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে এবং তাদের বাড়িঘর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে আমার হৃদয় কেঁদে উঠছে…আল্লাহর রহমতে আমি শীঘ্রই ফিরে আসবো। আওয়ামী লীগ বারবার উঠে দাঁড়িয়েছে।’
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাত্র ২২ দিনের বিক্ষোভে পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের।
গত ৩ আগস্ট ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লাখো মানুষের সমাবেশে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে সরকার পতনের এক দফা দাবি ঘোষণা করা হয়।
পরদিন ৪ আগস্ট ঢাকাসহ সারাদেশে ছাত্র-জনতাকে প্রতিরোধ করতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অস্ত্র নিয়ে মাঠে নামে। এ দিন সারাদেশে ১৪ পুলিশ, শিক্ষার্থী ও বিএনপির নেতাকর্মীসহ শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়।
এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন ঘেরাও করতে ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেদিন রাস্তায় নেমে আসেন লাখো মানুষ। শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় অভ্যুত্থানের মুখে পতন হয় স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের।
ওই দিন বেলা আড়াইটার দিকে শেখ হাসিনা গণভবন থেকে হেলিকপ্টারে করে বঙ্গভবনে যান। সেখানে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। এরপর বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের ক্ষমতার অবসান ঘটে। এরপর বদলে যেতে শুরু করে দেশের সার্বিক চিত্র।
আরও পড়ুন:
জয়-আরাফাতের জুডিশিয়াল ক্যু করার ‘ষড়যন্ত্র ফাঁস’
মা পদত্যাগ করেননি, তিনি এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী: জয়
আ.লীগের কেন্দ্রীয় অফিস এখন ছাত্র-জনতার কার্যালয়
সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আ.লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি
আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিরা কে কোথায়
শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার শেষ চার ঘণ্টা যা ঘটেছিল